ঢাকা, ১৫ মে- এবারই শেষ নয়, এদেশের মাটিতে ফিরতে চান বারবার। বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে সাবেক কোচের অমিলটা শুধু নামেই। কিন্তু ঠিকই হৃদয়ে ধারণ করেন এদেশকে। সোমবার সন্ধ্যায় হোটেল সোনারগাঁয়ের বলরুমের মিলনমেলা প্রমাণ দিল গর্ডন গ্রিনিজ আমাদেরই একজন। নান্নু-রফিকরা যেন তাদের সবচেয়ে কাছের মানুষটিকে ফিরে পেলো কতদিন পর। হাত মেলানো আর একে অপরকে জড়িয়ে ধরাটাতো তারই প্রমাণ। ৬৫ বছর বয়সী গ্রিনিজও যেনো ফিরে গেলেন ১৯৯৭, ৯৮ আর ৯৯ তে। যে মানুষটা লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের শিখিয়েছিলেন কিভাবে মাথা উঁচু করে বুক চিতিয়ে লড়াই করতে হয়, সেই মানুষটাই কোনো এক অজানা কারণে মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরেছিল টাইগারদের সেরা সাফল্যের দিনে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলতে গিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের দল। তার আগেই তৎকালীন বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্বের কারণে দল থেকে অব্যাহতি পেতে হয় গ্রিনিজকে। এদিন অবশ্য মাথা উঁচু করেই ফিরেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি। সাবেক-বর্তমান খেলোয়াড়, বোর্ড কর্মকর্তা আর সাংবাদিকদের মোবাইল, ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ভিড়ে কি আর সেদিনের কথা মনে পড়ে? সাবেক গুরুর প্রশংসায় মুখরিত গোটা বলরুম। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন কিংবদন্তির হাতে তুলে দেন বিশেষ সম্মননা। সাবেক ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানও আবেগে আপ্লুত। সাত কি আট মিনিটের বক্তব্যে তুলে ধরেন দায়িত্বে থাকা তিন বছরের স্মৃতি আর টাইগারদের সাফল্যের কথা। বক্তব্যের শুরুতেই শুভেচ্ছা জানান, সে সময়ের খেলোয়াড়, উপস্থিত বোর্ড কর্মকর্তা আর গণমাধ্যমকর্মীদের। তবে এতদিন পর যার জন্য এই দেশের মাটিতে পা পড়া, তার নাম মনে করিয়ে দিতেও ভুলেননি গ্রিনিজ। তিনি হলেন এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ আশরাফুল হক। গত বছর লন্ডনে গর্ডনের সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয় আশরাফুল হকের সঙ্গে। এরপর আবারও একইভাবে মালয়েশিয়ায় দেখা হয়ে যাবে তার সঙ্গে সেটা নাকি ভাবেননি টাইগারদের সাবেক কোচ। আশরাফুল হক দ্বিতীয়বারের দেখায়ও বাংলাদেশে আসার আমন্ত্রণ জানান গর্ডনকে। আমি এসেছিলাম কাতারের দোহায়। সেখানে একটা স্কুলে আমার মেয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে ভাবলাম বাংলাদেশের এত কাছেই যখন চলে এসেছি তাহলে একবার ঘুরে আসাই যায়। তবে বিসিবি যে আমার জন্য এত আয়োজন করবে সেটা কখনও ভাবিনি। তবে এর জন্য আমি অবশ্যই কৃতজ্ঞ আশরাফুল হকের প্রতি। তার সঙ্গে দেখা না হলে হয়তো আজ এখানে দাঁড়ানো হতো না। এমন সম্বোধনের ভেতরও দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তবে তার মাঝেও আনন্দ খুঁজে নিয়েছেন ঠিকই। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট ও ওয়ানডে মিলিয়ে প্রায় ১৩ হাজার রান করা এই তারকা বলেন, এখান থেকে চলে যাবার পরও অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হতো আমার। কিন্তু হঠাৎই কেনো জানি আর যোগাযোগ হয়নি। আশা করি এখন থেকে আবারও সবার সঙ্গে কথা হবে। এখানে এসে আমি আমার পুরনো ছাত্রদের পেয়েছি। পেয়েছি পুরনো বন্ধুদের। এটা দেখে আমি যেনো সেই সময়গুলো ফিরে পেয়েছি। আতাহার, আকরাম, পাইলট, রফিক, বেলিমরা এসেছে আবার অনেকে ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি। আশা করছি তাদের সঙ্গেও দেখা হয়ে যাবে কোথাও। গ্রিনিজ ভুলেননি বাংলাদেশের দেয়া সবুজ মলাটের পাসপোর্ট আর এদেশের আতিথেয়তা। আইসিসি ট্রফি জয়ের পর বাংলাদেশ সরকার যেভাবে অভ্যর্থনা দিয়েছিল গোটা দলকে সেটা কি আর ভোলা যায় কখনও! টেস্ট ও ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩০ সেঞ্চুরির মালিক বলেন, এদেশের মানুষের কাছে আমি বারবার ফিরে আসতে চাই। আমি আরও কয়েকদিন আছি এখানে। আশা করি আমার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হতেও পারে। আর যদি না হয় তবে উনাকে আমার শুভেচ্ছা জানিয়ে দিও। আমাকে দেয়া পাসপোর্টটা আবার নবায়ন করতে চাই। এত কিছুর ভিড়েও বলতে ভুলে যাননি এদেশের ক্রিকেটের কথা। গর্ডন সব সময়ই খেয়াল রাখেন টাইগার ক্রিকেটের দিকে। গ্রিনিজ বলেন, আমি সব সময়ই খেয়াল রাখি এদেশের ক্রিকেটের দিকে। কোনো কারণে মিস করে গেলে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুঁজি। বর্তমানে যারা খেলছে তারা অনেক ভালো করছে। ভবিষ্যতে যারা আসছে তাদের জন্য আমার শুভ কামনা থাকবে। সবশেষে ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান যোগ করেন, আমি কৃতজ্ঞ সবার প্রতি যারা আমাকে এমন সম্মান জানিয়েছে। যারা আবারও স্মরণ করেছে আমাকে। আমি এদেশকে কখনও ভুলবো না। যে সময়টুকু এতক্ষণ একসাথে কেটেছে সেটা আমি আজীবন মনে রাখবো, আশা করি আপনারাও। সূত্র: আরটিভি অনলাইন আর/১৭:১৪/১৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2jZEVX4
May 16, 2018 at 12:06AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন