বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: সিলেট-২ আসনে জোটগত মনোনয়ন দৌড়ে এবার নিখোঁজ এম ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদি লুনার পথের কাঁটা হলেন মুনতাসির আলী। তিনি কেন্দ্রীয় খেলাফত মজলিসের যুগ্ম-মহাসচিব। আসনটি কোনো এক সময়ে বিএনপির ঘাঁটি বলে পরিচিত ছিল। ঐক্যবদ্ধ হয়ে নেতাকর্মীরা মাঠে বেশ জোরেসোরে দলীয় কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেনও।
তখনকার সময়ে বর্তমান নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীর কষ্টের ফসল ছিল বিএনপির ঐক্যের বাঁধন। জোট হোক আর ভোটই হোক না কেন সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ইলিয়াস আলীর বিকল্প কোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশী হতেন না। আসনটিতে সব সময়ই জোটের প্রার্থী হিসেবে দখলে ছিলেন ইলিয়াস আলী। পাশাপাশি পিতার মতো করে নেতাকর্মীদের আগলে রাখতেন। কিন্তু এম ইয়িলাস আলী নিখোঁজের পর থেকে উপজেলা বিএনপিতে অভিভাবক পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে ইলিয়াস পত্নী লুনাই নেতাকর্মীদের একমাত্র অভিভাবক। গ্রুপিং দ্বন্দ্ব থাকলেও লুনার টেবিলে সবাই ঐক্যবদ্ধ। তাই ইলিয়াস আলীর অবর্তমানে লুনা’কেই তারা এই আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দেখতে চান।
দীর্ঘদিন ধরে এই আসনে প্রার্থী হিসেবে লুনা’কে নিয়েই মাঠে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকলেও প্রার্থিতা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো প্রকার মতবিরোধ নেই। কিন্তু হঠাৎ করে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জোটগত মনোনয়ন নিয়ে এখন লুনার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় ওই নেতা।
জোটগত মনোনয়ন নিয়ে এই আসন থেকে ‘লুনা’র সঙ্গে মুনতাসির আলীও মনোনয়ন দৌড়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। খেলাফত মজলিসের এই নেতা নিজেকে প্রার্থিতা ঘোষণা করে পুরো আসনে জোর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি দাবি করেন, ইতোমধ্যে দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তাই তিনি মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। জোটগত নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে খেলাফত মজলিস যে কয়েকটি আসন পাবে তার মধ্যে এই আসনটি রয়েছে তাদের সর্বোচ্চ চাওয়া। গুরুত্বপূর্ণ আসন বলে এই আসনটি মুনতাসির আলী ছাড় দিতে নারাজ।
কিন্তু এর ধারে কাছেও নেই বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের মতে এই আসনটি পুনরোদ্ধার করতে হলে লুনার বিকল্প নেই। এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কবির হোসেন ধলা মিয়া চেয়ারম্যান বলেন- জোটগত নির্বাচন হলেও এই আসনে লুনা প্রার্থী হলে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ একটি চমক দেখাতে পারবে বিএনপি। অন্য কোনো প্রার্থী হলে আবারও আসনটি হাত ছাড়া হতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন সিলেট-২।
সিলেট বিভাগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সবচেয়ে শক্তিশালী আসন হিসেবে গন্য করা হয় সিলেট-২।
বিগত নির্বাচনের মতো চারদলীয় জোট সরকারের সময় এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচত হন নিখোঁজ বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী। সিলেট-২ আসনসহ সিলেটে ইলিয়াস আলীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।
নিখোঁজের কয়েক বছর পরও সাধারন মানুষের কাছে ইলিয়াস আলীর জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী রয়েছে বলে মনে করেন ইলিয়াস সমর্থকরা। ইলিয়াস আলীর অবর্তমানে সিলেট-২ আসনে ইলিয়াস পত্নী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা আসন্ন আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হবেন বলে মনে করেন বিএনপি নেতা কর্মীরা। এবং এতদিন ধরে লুনাই একক প্রার্থী বলে মনে করছিলেন বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের নেতা কর্মীরা।
তবে নতুন করে আলোচনার সুত্রপাত হয়েছে জোটের আরেক শরীক দল খেলাফত মজলিস এই আসনে তাদের একক প্রার্থী ঘোষনা করার পর থেকে। এই আসনে আগামী নির্বাচনে তারা প্রার্থী ঘোষনা করে সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এবং বর্তমানে দলের যুগ্ম মহাসচিব মুনতাসির আলীকে। খেলাফত মজলিস এখানে ছাড় দিতে নারাজ। তাদের দাবি এই আসনে জোটের একক প্রার্থী যদি দেয়া সম্ভব না হয় তবে যাতে আসনটি ওপেন রাখা হয়।
প্রত্যেকে যাতে এখানে আলাদাভাবে প্রার্থী দিতে পারেন। তবে বিএনপির শীর্ষ মহল এই আসনে ছাড় দেবার ব্যাপারে অনড় থাকলেও তারা জানিয়েছেন এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচনের এখনো অনেক দেরী, সময় আসলে জোটের বৈঠকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করেন এই আসনে ইলিয়াস আলীর প্রতি মানুষের আবেগ ভালোবাসা অনেক সুদৃঢ়। এখানে তিনি যে উন্নয়নমুলক কাজ করে গেছেন তা এখনো লোকের মুখে মুখে, চোখে চোখে লেগে আছে। তাই এই আসনে ইলিয়াস আলীর বিকল্প ইলিয়াসপত্নী ব্যতিত কাউকে কল্পনাও করা যায়না।
তাছাড়া ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর বিএনপিসহ ইলিয়াস সমর্থকদের অনুরোধে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা মাঠে নেমেছেন ইলিয়াস আলী উন্নয়নমুলক কাজকে সামনে এগিয়ে নিতে। দ্বিধাবিভক্ত বিএনপিকে বেধেছেন একইসুত্রে, সেই সাথে নেতাকর্মীদের সঙ্গে রাখছেন নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ।
এছাড়াও ইলিয়াস আলীর স্ত্রী হিসেবে নির্বাচনী সিলেট-২ আসনের মানুষের আলাদা সহানুভূতি রয়েছে তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রতি। আর তাই আগামী নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে চারদলীয় জোটের কব্জায় রাখতে হলে লুনার বিকল্প নেই।
অন্যদিকে খেলাফত মজলিসের নেতাকর্মীদের দাবি এই আসনে তাদের অবস্থান অনেক শক্তিশালী। এখানে তাদের প্রার্থী মুনতাসির আলী একসময় কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। ইসলামী ছাত্র মজলিসের সাবেক এই কেন্দ্রীয় সভাপতি অকেদিন ধরে এলাকার লোকজনের সাথে যোগাযোগ রাখছেন। এলাকার মানুষের প্রতি তার আস্তা আছে বলেই তিনি এখানে নির্বাচন করছেন, দল তার উপর আস্তা রাখছে। এখন যদি জোটগত ভাবে এর সমাধার হয় তবে ভালো। না হলে তারা একক ভাবে এখানে লড়বেন।
তারা বলেন ইলিয়াস পত্নী লুনার প্রতি এখানকার মানুষের একটা আবেগ ও ভালোবাসা আছে তবে এক্ষেত্রে তার জন্য আরো সম্মানজনক এবং বিকল্প প্রস্তাব তারা দলের পক্ষ থেকে জোট নেত্রীর কাছে দেবেন।
তবে এই আসন নিয়ে দুই দলেরই শীর্ষ নেতারা কৌশল অবলম্বন করছেন, কেউই এখন পর্যন্ত সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি বা মন্তব্য করতে চাননি। প্রত্যেক দলের নেতাকর্মীদের মত নির্বাচনের এখনো অনেক বাকি সময় আসলে সব এমনিতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। তাই এখন কোন কিছু না বলাই ভালো। তাছাড়া আসন বন্টনের বিষয়গুলো জোটের হাইকমান্ডের বৈঠকে সুরাহা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2wXkUcK
May 21, 2018 at 12:35PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন