কুয়ালালামপুর, ১০ জুন- লক্ষ্য ফাইনাল। মালেয়েশিয়ায় যাওয়ার আগে বলেছিলেন সালমা খাতুন। সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স আর বাস্তবতা, সব ছিল বিপক্ষে। অধিনায়কের কণ্ঠে তাই যতটা ছিল বিশ্বাস, তার চেয়ে বেশি ছিল আশা। সেই আশা পূরণ হলো। ধরা দিল আরও বড় সাফল্য। ফাইনালে ওঠাই ছিল স্বপ্ন পূরণ। এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ছাড়িয়ে গেল স্বপ্নের সীমানা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শিরোপা স্বাদ এতদিন অচেনাই ছিল বাংলাদেশের। দুটি এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলেছে ছেলেদের দল। খেলেছে তিনটি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টের ফাইনাল। ট্রফি জেতা হয়নি একবারও। মেয়েদের ক্রিকেটে তো সাফল্যখরা ছিল আরও তীব্র। কিন্তু একটি ট্রফির জন্য হাপিত্যেশ শেষ হলো সেই মেয়েদের হাত ধরেই। এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টিতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে মেয়েরা বাংলাদেশকে উপহার দিল প্রথম আন্তর্জাতিক ট্রফি। অথচ টুর্নামেন্টের আগে তাদের নিয়ে বাজি ধরার লোক খুব বেশি ছিল না। মাত্রই কদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে সব ম্যাচ হেরে এসেছে বাংলাদেশ। এর আগে মাঠের বাইরে থাকতে হয়েছে দীর্ঘদিন। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ১৪ মাস ছিল না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো ম্যাচ। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ছিল না টানা দেড় বছর। দক্ষিণ আফ্রিকার তুলনায় মালয়েশিয়ার কন্ডিশন যদিও সহজ। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ার মতো দল ছিল বলে জয়বিহীন ফেরার শঙ্কাও ছিল না। তবে বড় কিছুর আশাও ছিল না। ভারত তো এই অঞ্চলের সবার ধরাছোঁয়ার বাইরেই। পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা এক সময় কাছাকাছি থাকলেও গত কিছুদিনে তারাও এগিয়ে গেছে অনেক। প্রথম ম্যাচের ফলাফলেও সেসবের প্রমাণ। শ্রীলঙ্কার কাছে পাত্তাই পেল না বাংলাদেশ। আশার জায়গাগুলো আরেক দফা দমে যাওয়ার পালা। কিন্তু বিস্ময়কর পালাবদলের শুরু এরপরই। দ্বিতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে হারিয়ে দিল মেয়েরা। এর আগে নানা সময়ে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারালেও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় এটিই প্রথম। এই জয়ই হতে পারত টুর্নামেন্ট থেকে বড় একটা প্রাপ্তি। পরের ম্যাচে ধরা দিল অভাবনীয় এক জয়। এশিয়া কাপে আগে কখনও একটি ম্যাচও হারেনি যে দল, শক্তি-সামর্থ্য-অভিজ্ঞতায় যোজন যোজন এগিয়ে যে দল, সেই ভারতকে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। সেটিও নিজেদের সবচেয়ে বড় স্কোর, সবচেয়ে বড় রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে! ফাইনালের স্বপ্ন পূরণের মঞ্চে দল এক পা দিয়ে রেখেছিল তখনই। পরের দুই ম্যাচে থাইল্যান্ড ও মালেয়েশিয়াকে প্রত্যাশিতভাবেই গুঁড়িয়ে দল ওঠে ফাইনালে। যেখানে আগে থেকেই অপেক্ষায় সেই ভারত। ভারতকে একই টুর্নামেন্টে দুইবার হারানো কাজ ভীষণ দুঃসাধ্য। বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতায়ও বাংলাদেশ পিছিয়ে শত ক্রোশ। ফাইনালের আগে বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি খেলেছিল ৪০টি। ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর একাই খেলেছেন দ্বিগুণ! মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামিরাও শুধ অভিজ্ঞই নয়, একেকজন বিশ্ব ক্রিকেটের বড় তারকা। ফাইনালে তাই সালমাদের হারাবার ছিল সামান্যই। পাওয়ার ছিল অনেক কিছু। উজ্জীবিত বাংলাদেশ নতুন তাড়নায় জেগে উঠল আরও একটি ইতিহাস গড়ার হাতছানিতে। বোলিংয়ের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, ব্যাটিংয়ে পেশাদারিত্ব আর শেষ মুহূর্তের স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনা সামলে জিতে নিল শিরোপা। এই টুর্নামেন্টের আগে নতুন কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার আঞ্জু জৈন। মিতালি-ঝুলনদের সঙ্গে খেলেছেন। ভারতীয় দল সম্পর্কে তার জানাশোনা নিশ্চয়ই এই টুর্নামেন্ট সাহায্য করেছে বাংলাদেশকে। তবে আলাদা করে বলতে হবে আগের কোচ ডেভিড ক্যাপেলের কথা। অনেক সীমাবদ্ধতার মাঝেও প্রায় দেড় বছর মেয়েদের স্কিল ও মানসিকতার উন্নতি কাজ করেছেন ইংলিশ এই কোচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের পথচলা খুব বেশি দিনের নয়। আরেকটু পেছন ফিরে তাকালে, দেশের ক্রিকেটে মেয়েদের শুরুটাও ছিল কন্টকাকীর্ণ। বিসিবি মেয়েদের ক্রিকেটকে একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখতে শুরু করেছিল ২০০৬-২০০৭ সালের দিকে। আইসিসি মেয়েদের ক্রিকেট নিয়ে জোর দেওয়ায় বিসিবিও বাধ্য হয়েছিল নজর দিতে। পারিবারিক বাধা, সামাজিকতার চোখ রাঙানি, শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতা, সবকিছুকে জয় করে এগিয়ে গেছে মেয়েরা। খুলনা আর বগুড়ায় স্থানীয় কোচদের অক্লান্ত পরিশ্রম, আন্তরিকতা আর একাগ্রতায় সেখান থেকে উঠে এসেছে এক গাদা ক্রিকেটার। অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে ধীর পায়ে এগিয়েছে মেয়েদের ক্রিকেট। ২০১১ সালের নভেম্বরে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মাঝেই বাংলাদেশের মেয়েরা পায় ওয়ানডে স্ট্যাটাস। প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে ৮২ রানে হারিয়ে দেয় আয়ারল্যান্ডকে। প্রথম টি-টোয়েন্টি ২০১২ সালের অগাস্টে, সেটিতেও জয় আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। আরও পড়ুন:দেশবাসীকে এটা আমাদের ঈদ উপহার জয়ে শুরু হলেও জয় ছিল না নিয়মিত। তার চেয়েও বেশি হতাশার, খেলাই ছিল না নিয়মিত। না আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, না ঘরোয়া ক্রিকেটে। এই মৌসুমেই যেমন, হয়নি প্রিমিয়ার লিগ। ঘরোয়া ক্রিকেটের দায়সারা একটি সূচি করা হয়, যেটি মানা হয় খুব কম সময়ই। মেয়েদের ঘরোয়া ক্রিকেট এলেই বিসিবির মাঠ সঙ্কট হয়ে ওঠে তীব্র। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট, সফরের সুনির্দিষ্ট সূচি নেই। এমনকি ট্রেনিং, ক্যাম্প, অনুশীলনের জন্যও মাসের পর মাস অপেক্ষায় থাকতে হয় মেয়েদের। আরও পড়ুন:ছেলেদের আগে মেয়েরাই দেশকে দিল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব জাতীয় লিগে ৬০০ টাকা ম্যাচ ফি নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল গত মৌসুমে। এরপরও তা বাড়েনি। কেন্দ্রীয় চুক্তিতে থাকা ক্রিকেটারদের বেতনও খুব ভদ্রস্থ নয়। এত সব কঠিন বাস্তবতাকে সঙ্গী করেই এগিয়ে যাচ্ছে মেয়েদের ক্রিকেট। হাজারও প্রতিকূলতা ঠেলেই রচিত হলো এশিয়া কাপের এই উজ্জ্বল অধ্যায়। সম্ভবত, দেশের ক্রিকেটের এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়! সূত্র: বিডিনিউজ২৪ এমএ/ ১০:২২/ ১০ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2sOsK43
June 11, 2018 at 04:29AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন