বিশ্বকাপে যাচ্ছে তাই পারফর্ম করে দ্বিতীয় রাউন্ডেই ৩২ বছরের শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্নভঙ্গ হয় আর্জেন্টিনার। গ্রুপ পর্বে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র, দ্বিতীয় ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার কাছে পরাজয়ের পর দলের মধ্যে খেলোয়াড়দের বিদ্রোহের কথা ফাঁস হয়ে যায় বিশ্ব মিডিয়ায়। তাৎক্ষণিক তা মিডিয়ার তৈরির বলে ঘটনা চাপা দিতে সক্ষম হয় আর্জেন্টাইন ফুটবল ফেডারেশন এএফএ। তবে বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এ বিষয়টি আর বোধহয় ধামাচাপা দেয়া সম্ভব হলো না। টিওয়াইসির বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলাম লেখকের কল্যাণে বিষয়টি এবার পুরোপুরি ফাঁস হয়ে গেল। অ্যারিয়েল সেনোসিয়ান নামের এ সাংবাদিক ইতোমধ্যেই বিশ্বকাপ নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন। মুন্দিয়াল এজ হিস্টোরিয়াস নামে লেখা ওই বইতেই বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন অ্যারিয়েল সেনোসিয়ান। সেখানে রয়েছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। ওই বইয়ে রয়েছে, ক্রোয়েশিয়ার কাছে ০-৩ হারের পরেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছিল মেসিদের শিবির। মেসির মতো বিশ্বসেরা তারকাকে নিয়ে ৩২ বছরের শিরোপা খরা কাটানোর লক্ষ্যে রাশিয়ায় পা রাখে অভিজ্ঞ ও তারুণ্যের মিশেলে গড়া আর্জেন্টিনা। কিন্তু প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের সঙ্গে ড্র করে। এরপর ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারে ৩-০ গোলের ব্যবধানে। শেষ ম্যাচে নাইজেরিয়াকে কোনোমতে হারিয়ে ওঠে দ্বিতীয় রাউন্ডে। তবে, দ্বিতীয় রাউন্ডে এসে ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নেয় মেসিদের দল। তবে ক্রোয়েশিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পরই দলের ভিতরে কোন্দলের বিষয়টি মিডিয়ায় প্রকাশ পায়। তখন বলা হয়েছিল কোচের সঙ্গে মেসিসহ অনেকের মতের মিল হচ্ছিল না। যদিও তাৎক্ষণিক সে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়া হয়। কিন্তু মুন্দিয়াল এজ হিস্টোরিয়াস বইটিতে আর্জেন্টাইন সাংবাদিকের দাবি ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে পরাজয়ের পর কোচ সাম্পাওলির সঙ্গে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন অধিনায়ক লিওনেল মেসি ও সিনিয়র ফুটবলার হ্যাভিয়ার মাসচেরানো। সঙ্গে ছিলেন দুই সহকারী কোচ সেবাস্তিয়ান বেকাসেসে এবং লিওনেল স্কালোনি। সশরীরে উপস্থিত না থাকলেও বৈঠকের নেপথ্যে ছিলেন আরও একজন। তিনি আর্জেন্টিনার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে পরামর্শ করেই কোচদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানাতে যান মেসিরা! তিনি বইটিতে উল্লেখ করেন, বৈঠকের এজেন্ডা ছিল পরিষ্কার, কোচের বিরুদ্ধে খেলোয়াড়দের অনাস্থা প্রকাশ। তার কথা, বেশ উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই শুরু হয় বৈঠক। শুরুটা ছিল বেশ প্রাণবন্ত। কিন্তু খুব দ্রুতই বৈঠকের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং পণ্ড হয়ে যায়। কারণ, দু-এক কথা হওয়ার পরই মেসি স্পষ্ট কণ্ঠে জানিয়ে দেন, আমরা যা চাই, তা পাই না। আপনার উপর আমাদের আর আস্থা নেই। (দল পরিচালনার বিষয়ে) আমাদেরও মতামত আছে। আমরা আমাদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে চাই। মানে একাদশে কে খেলবে, কে খেলবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন মেসিরা, কোচরা নন! এই কথা বলেই রুম থেকে বাইরে চলে আসেন মেসি। অ্যারিয়েল সেনোসিয়ান লিখেছেন, মেসির কথা শুনে কোচ সাম্পাওলির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। বিস্ময়ে, হতাশায় মুষড়ে পড়েন তিনি। একটু পর তিনিও বাইরে চলে আসেন এবং হোটেল লবিতে দ্বিতীয় দফা কোচ সাম্পাওলি ও মেসির মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এবার তাদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের প্রত্যক্ষ সাক্ষী ছিলেন বোর্ড সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াও। তো মেসিকে সামনে পেয়েই প্রশ্ন ছুড়ে দেন কোচ সাম্পাওলি। বলেন, তোমাদের মতামতটা কি? কোন বিষয়ে মতামত দিতে চাও? উত্তরে মেসি বলেন, সব বিষয়েই। সাম্পাওলিকে আরও একটি ব্যাপারে কড়া কথা শুনিয়েছিলেন মেসি বলে বইয়ে দাবি করা হয়েছে। দেখা গিয়েছিল, সাইডলাইনের ধারে আসা মেসির কাছে পরিবর্ত হিসেবে কাকে নামাবেন, তা জানতে চাইছেন সাম্পাওলি। এটা নিয়েও ক্ষুব্ধ ছিলেন মেসি। এই প্রসঙ্গ টেনে মেসি কোচকে বলেন, কোন খেলোয়াড়কে আমি চাই আর কাকে চাই না সেটা আমার কাছে ১০ বার করে জানতে চেয়েছ কেন? কখনও কোনো খেলোয়াড়ের নাম বলিনি। তা হলে আচমকা কেন এই প্রশ্ন? এরপর কথা আর বাড়তে দেননি এএফএস সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া। দুজনকে থামিয়ে একটা সমঝোতা করে দেন তিনি। সেই সমঝোতাটা হয় মেসিদের চাওয়ার ভিত্তিতেই। বোর্ড সভাপতি ক্লদিও তাপিয়া কোচ সাম্পাওলিকে বলে দেন, খেলোয়াড়েরা যেভাবে চায়, সেভাবেই দল পরিচালনা করতে! তাদের কথা কাটাকাটির দৃশ্যটি ধরে পড়ে হোটেলের সিসিটিভি ক্যামেরায়। শেষ পর্যন্ত সেই সমঝোতার ভিত্তিতেই নাইজেরিয়ার বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনার একাদশ নির্বাচন করেন মেসিরা। কোচ সাম্পাওলির কোনো ভূমিকা ছিল না! বিষয়টি ফুটে উঠে ম্যাচ চলাকালীন সময়েই। ম্যাচের শেষ দিকে মেসি পানি পান করতে টাচ লাইনের কাছে যেতেই তার সঙ্গে বিড় বিড় করে কথা বলেন কোচ সাম্পাওলি। কোচ সাম্পাওলি মেসিকে বিড় বিড় করে কি বলেছিলেন, সেটাও গণমাধ্যমে চাওর হয়ে যায়। সার্জিও আগুয়েরোকে বদলি হিসেবে নামানোর জন্য কোচ সাম্পাওলি অনুরোধ করেন মেসির কাছে। বলেন, লিও, আমি কি আগুয়েরোকে নামাব? যাই হোক, ওই ঝগড়ার পর সহকারী কোচ সেবাস্তিয়ান বেক্কাসেসে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু কোচ সাম্পাওলি তাকে পদত্যাগ করা থেকে বিরত রাখেন। কোচ হিসেবে কর্তৃত্ব হারিয়েও তারা থেকে যান দলের সঙ্গে। ফ্রান্সের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচেও দল নির্বাচন করেন মেসিরাই। কোচ সাম্পাওলিরা স্রেফ কোচের ভূমিকায় অভিনয় করেন মাত্র! সাম্পাওলির জায়গায় এখনো কাউকে কোচ নিয়োগ দেয়নি এএফএ। তবে যিনিই দায়িত্ব নিন, বিশ্বকাপে কোচ সাম্পাওলির সঙ্গে মেসিদের ঝগড়ার অধ্যায়টি হবে তার জন্য অনেক বড় এক শিক্ষা। সূত্র: আরটিভি অনলাইন এমএ/ ০৭:৪৪/ ২২ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Lh13fp
July 23, 2018 at 01:57AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন