সেন্ট কিটস, ২৯ জুলাই- ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে অপরাজিত ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু জয়ের আলোটা তাঁর ওপর সেভাবে পড়ছে কোথায়! দুই বছর আগে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সেই সিরিজেই কথাটা বলে রেখেছেন মাশরাফি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে নাকি দলের সবাই অন্য রকম শ্রদ্ধা করে। এই অন্য রকম শ্রদ্ধাটা আসলে কী? যে শ্রদ্ধা আর দশটা শ্রদ্ধার মতো সহজলভ্য নয়? যেমনটা মাহমুদউল্লাহর ব্যাটিংচাপের মুখে তাঁর মতো ব্যাটিং করতে পারেন কজন? তাই এই অন্য রকম শ্রদ্ধা। কিন্তু মাহমুদউল্লাহর জন্য সতীর্থ থেকে সমর্থকদের এই শ্রদ্ধা যেন গোপন কোনো প্রেম! আর তা আড়ালে রাখলেই সিদ্ধকাম (পড়ুন দলের জয়)। মাহমুদউল্লাহও যেন এই বাস্তবতা মেনে নেওয়া সেই প্রেমিকাযে তাঁর সতীর্থ-সমর্থকদের ভালোবাসার প্রতিদানে আড়াল থেকেই নিজেকে নিংড়ে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত। হাসছেন? কালকের ম্যাচটা মনে করে দেখুন। মাহমুদউল্লাহ যখন উইকেটে এলেন বাংলাদেশের স্কোর তখন ৩ উইকেটে ১৫২। ৩২তম ওভারের খেলা চলছে। প্রথম বলে ভাগ্যগুণে চার পেয়ে যাওয়ার পর তাঁকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বহতা নদীর স্রোতের মতোই তরতর করে এগিয়ে চলেছেন সামনে। বাংলাদেশ তিন শ রানের কোটা টপকেছে তাঁর ৪৯ বলে ৬৭ রানের অপরাজিত ইনিংসের সুবাদে। বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে ৯৬ রান তুলেছেও তাঁর ব্যাটে ভর করে। মাহমুদউল্লাহকে এভাবে দেখা মোটেও নতুন কিছু নয়। দুঃখটাও আসলে এখানে। দলের প্রয়োজনে তাঁকে প্রায়ই এমন ত্রাণকর্তা-র রূপে দেখা যায় বলেই ব্যাপারটা যেন তাঁর রুটিনওয়ার্ক! অনেকে বলবেন চাপের মুখে ভালো খেলাই তো তাঁর কাজ। বটে! তাহলে ভালো খেলার জন্য সবাই তাঁর প্রতি মনে মনে যে অন্য রকম শ্রদ্ধা লালন করছে, তা আরেকটু প্রকাশ হওয়া উচিত নয় কি? কিন্তু সেটি আর হচ্ছে কোথায়? সিরিজ জয়ে তামিমের চওড়া ব্যাটকেই সবাই বড় করে দেখছে। অযৌক্তিক কিছু নয়। কিন্তু শেষ পাতে মাহমুদউল্লাহর ওই ব্যাটিংটা না পড়লে ক্যারিবীয়রা কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংসটা হজম করে ফেলত! মানে, মাহমুদউল্লাহর সময়োচিত ওই ব্যাটিংয়ে স্কোর তিন শ টপকে যাওয়ায় ক্যারিবীয়রা যেমন মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছে তেমনি আমাদের বোলাররাও লড়াইয়ের পর্যাপ্ত রসদ পেয়েছেন। আর এই দায়িত্বটা মাহমুদউল্লাহ নতুন পালন করছেন না। কিন্তু পাদপ্রদীপের আলোটা তাঁর কাছে বরাবরই নতুন। এই ওয়েস্ট ইন্ডিজেই ২০০৯ সালের ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সেই ম্যাচটা জিতে ক্যারিবীয়দের ধবলধোলাই করেছিল বাংলাদেশ। ৯ বছর পর সেই একই মাটিতে একই সুর-তাল-লয়ে গাঁথা আরেকটি ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ। তাঁর ১৫৬ ওয়ানডে ম্যাচের ক্যারিয়ারে যে ৩টি সেঞ্চুরি আর ১৯টি ফিফটির বেশির ভাগই দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে। কিছু আবার ম্যাচ জেতানো দুর্দান্ত ইনিংস। মাহমুদউল্লাহ যেসব ম্যাচে ফিফটি কিংবা এর বেশি রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তার সব কটিতে জিতেছে বাংলাদেশ। এমন ম্যাচের সংখ্যা ৬টি। শুরুটা ২০০৯ সালের সেই সিরিজের শেষ ম্যাচ দিয়ে। দুই বছর পর বুলাওয়েতে সেটাও ছিল সিরিজের শেষ ও ফল নির্ধারণী ম্যাচ। মাহমুদউল্লাহর অপরাজিত ৬০ রানে ভর করে আড়াইশোর্ধ্ব স্কোর পুঁজি করে জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের সিরিজের শেষ দুই ম্যাচেই দুটি অপরাজিত ইনিংসে জিতিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। আর গত বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁর অপরাজিত ১০২ রানের ইনিংসটা তো বাংলাদেশ ক্রিকেটে রূপকথার অংশ। কিন্তু এই রূপকথা লিখলেন যিনি, তিনি বরাবরই চতুষ্টয়-এর (মাশরাফি-সাকিব-তামিম-মুশফিক) পাদপ্রদীপের আলোয় ঢাকা পড়া এক তারালোকে বলে আনসাং হিরোআসলে ধ্রুবতারা। সূত্র: প্রথম আলো আর/১০:১৪/২৯ জুলাই
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2viWJRY
July 30, 2018 at 04:47AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন