হত্যা নাকি আত্মহত্যা এনিয়ে এলাকায় চলছে তোলপাড়
মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামের মৃত হাজী আবদুল মনাফের পুত্র আবুল হোসেনের মৃত্যুকে নিয়ে সর্বত্র চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। হত্যা নাকি আত্মহত্যা এনিয়ে শুরু হয়েছে তোলপাড়। নিহতের বড় ভাই আবদুল খালিকের দাবী আবুল হোসেন’কে নিজের পরকিয়ার কারণে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছেন তার (আবুল) স্ত্রী সুলতানা বেগম ও স্ত্রীর প্রেমিক একই গ্রামের আবদুল খালিকের পুত্র সিএনজি অটোরিকশা চালক হিরা মিয়া। আবার আবুল হোসেনের স্ত্রীর দাবী অসুস্থতার কারণেই মৃত্যু হয়েছে তার (আবুল)। এদিকে ময়না তদন্তের রির্পোট আসার পর এব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সুরতহাল প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ জুন রাত আনুমানিক ১০টার দিকে হঠাৎ করে আবুল হোসেন অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় তার নাকে-মুখে সাদা ফেনা বের হয়। অসুস্থ আবুলকে চিকিৎসার জন্য তাৎক্ষনিক তার স্ত্রী সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। সেখানে চিকাৎসাধীন অবস্থায় ৭ জুন রাত সাড়ে ৪টার দিকে আবুল হেসেন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্নয়ের জন্য লাশের ময়না তদন্ত করানো শেষে এখন রির্পোট আসার অপেক্ষায়। এদিকে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরীর সময় মৃত ব্যক্তির হাত দুটি অর্ধ মুষ্টি ও দুই পায়ের হাটুর নিচে সাদা সাদা পুরাতন ছিলা জখম এবং মলদ্বার স্বাভাবিক থাকলেও লিঙ্গে বীর্য ছিল বলে উল্লেখ রয়েছে।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, আবুল হোসেনের মৃত্যুর সংবাদ তার পরিবারের জানায়নি তার (আবুল) স্ত্রী সুলতানা বেগম। এমনকি লাশের ময়না তদন্ত করাতেও রাজি ছিলেন না সুলতানা। বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সন্দেহজনক হলে তারা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। আর কোতোয়ালী থানা পুলিশের সূত্র ধরে বিশ্বনাথ থানা পুলিশ আবুলের গ্রামের বাড়িতে উপস্থিত হলে তার (আবুল) মৃত্যুর সংবাদ পরিবারের লোকজন জানতে পারেন। পরবর্তিতে পরিবারের লোকজন হাসপাতালে উপস্থিত হয়ে লাশের ময়না তদন্ত করিয়ে লাশ বাড়িতে এনে দাফন-কাপন করেন।
নিহতের পরিবারের লোকজন আরোও অভিযোগ করেন, আবুলের মালিকাধীন সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালানোর সূত্র ধরে হিরার সাথে তার (আবুল) স্ত্রী সুলতানা বেগমের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক তৈরী হয়। সম্পর্কে ‘সুলতানা ও হিরা’ চাচী-ভাতিজা হওয়ায় আবুলের আত্তীয়-স্বজনরা বিষয়টি অন্যভাবে দেখেন। এসব কারণে আবুলের কাছে তার আত্তীয়-স্বজনরা একাধিক বার বিচার প্রার্থীও দিয়েছেন। স্ত্রী বিচার করার পরিবর্তে তাদের (সুলতানা-হিরা) হাতে একাধিক বার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন আবুল। তাই বিচার দেওয়ায় আরোও বেপরুয়া হয়ে উঠে সুলতানা-হিরা। অবৈধ সম্পর্কের পাশাপাশি সুলতানা-হিরা শুরু করেন মাদকের অবৈধ ব্যবসাও। আত্তীয়-স্বজনরা তাদের এমন আচরণে কঠোর অবস্থানে যেতে চাইলে ৭/৮ বছর পূর্বে আবুল হোসেন বাড়ি’সহ নিজের প্রাপ্য পৈত্রিক সম্পত্তির অংশ বিক্রি করে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেসময় থেকেই তাদের সাথে একই সংসারে অবিবাহিত হিরা মিয়াও (৩৫) বসবাস করে আসছে। এসব কারণে আবুলের আত্তীয়-স্বজনদের উপর ‘সুলতানা-হিরা’র ছিল তীব্র ক্ষোভ।
আবুলের পরিবারের দাবি, প্রথমে সুলতানা নিজের প্রেমিক হিরাকে সাথে নিয়ে বিষ খাইয়ে আবুল হোসেনকে হত্যা করেছে। আর তার (আবুল) মৃত্যুর সংবাদ পরিবারের সদস্যদের কাছে গোপন করে ও লাশের ময়না তদন্ত কারাতে চায়নি এর প্রধান কারণ ছিলো ময়না তদন্ত ছাড়া হাসপাতাল থেকে আনতে পারলে সেই লাশটি এনে আবুলের গ্রামের বাড়ির কোন এক স্থানে ফেলে রেখে আবুলের আত্তীয়-স্বজনকে ফাঁসানো। আর এসবের পেছনে আবুলের আত্তীয়-স্বজনদের উপর থাকা ‘সুলতানা-হিরা’র সেই ক্ষোভ।
নিহত আবুলের বড় ভাই আবদুল খালিক বলেন, আমার ভাই ছিলো সহজ সরল প্রকৃতির একজন মানুষ। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করার মানুষ সে ছিলো না। নিজেদের প্রেম (পরকিয়া) ঠিক রাখতেই প্রেমিক হিরাকে সাথে নিয়ে আমার ভাইকে বিষ খাইয়ে হত্যা করেছে তার স্ত্রী সুলতানা। সঠিক তদন্ত হলে এর আসল রহসৎ বেরিয়ে আসবে। তবে আমরা আর্থিক অসচ্ছলতা কারণে মামলাও করতে পারছি না।
হিরার সাথে প্রেমের সম্পর্ক ও বিষ খাইয়ে স্বামীকে হত্যা করার অভিযোগ অস্বীকার করে নিহত আবুলের স্ত্রী সুলতানা বেগম বলেন, তিনি (আবুল) তো দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ছিলেন, তাই মৃত্যুটিকে স্বাভাবিক ভেবেই ময়না তদন্ত করাতে চাইনি। পরিবারের লোকজন আমাদের ঠকিয়ে জায়গা-জমি ক্রয় করে নিয়েছেন ও আমাদের সাথে কেউ কোন যোগাযোগ রাখে না তাই তাদেরকে বলিনি। তিনি (আবুল) হঠাৎ করে (৬জুন) অসুস্থ হয়ে পড়লে আমি সাথে সাথে হিরাকে বাসায় এনে তার গাড়ি দিয়ে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। সেখানে ডাক্তাররা মুখ দিয়ে পাইপ ডুকিয়ে ওয়াশ করান ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করেন। একপর্যায়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এখন আমাকে ফাঁসানোর জন্য হিরাকে জড়িয়ে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন। হিরা প্রায় ৬ বছর ধরে নিজের কষ্ঠার্জিত টাকা দিয়ে আমাদের সংসারের খরছ চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিজে বিয়ে না করে, আপনার সংসার কেন হিরা ৬ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতানা বেগম বলেন, কেন আমি জানি না। তবে সে আমাদের বিপদে-আপদে সব সময় পাশে ছিল। আত্তীয়-স্বজনরা কেউ ছিলেন না। বর্তমানে হিরা কোথায়, এ প্রশ্নের জবাবে সুলতানা বলেন, একটি খেলায় তার (হিরা) অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই আবুলের মৃত্যুর পর থেকে সে (হিরা) গোলাপগঞ্জে গিয়ে রোজগার (আয়) করছে, তবে সেখানে থেকেও বিকাশের মাধ্যমে সুলতানার সংসার খরছের টাকা ঠিক মতো পাঠাচ্ছে হিরা মিয়া।
নিজের উপর আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে হিরা মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, এ পরিবারের সাথে আমার প্রায় ১৫ বছরের সুসম্পর্ক। তাই হত্যা করার হলে যখন তার (আবুল) কাছে বাড়ি-ঘর বিক্রির টাকা ছিল, তখন করতাম। এখন কেন?
নিহত আবুল হোসেনের স্ত্রী এব্যাপারে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছেন দাবি করে বিশ্বনাথ থানার এসআই স্বাধীন তালুকদার বলেন, নিহতের স্ত্রী চেয়ে ছিলেন বিনা ময়না তদন্তে লাশ দাফন করার জন্য, কিন্তু তার (আবুল) আত্মীয়-স্বজনদের ইচ্ছানুযায়ী লাশের ময়না তদন্ত করানো হয়। এখন ময়না তদন্ত রির্পোট আসার পর, মৃত্যুর সঠিক কারণ নির্ণয় হলে সেব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2KBA3Gt
July 02, 2018 at 10:40PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.