মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) প্রতিনিধি :: লাল লাল চোখ, বাঁকানো ময়লা চুল। ছেড়া গেঞ্জি ও ময়লাযুক্ত প্যান্ট বসে আছে বাসিয়া ব্রিজের উত্তর প্রান্তের অদূরে চার পাঁচটি পথশিশুর জটলা। কাছে যেতেই দেখা গেল মুখের সামনে পলিথিন ধরে এক শিশু ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। জানতে চাইলে তারা দিল-উঠে দৌড়।
সরেজমিন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা সদরে ঘুরে এ রকম ড্যান্ডিখোর অনেক পথশিশুরই দেখা মিলেছে। জুতা, কাঠ অথবা ফোমে ব্যবহৃত আঠা অল্প টাকা ও সহজেই পাচ্ছে বলেই তারা ড্যান্ডিতে বুদ হচ্ছে। এসব পথশিশুর বেশিরভাগই সদরের বিভিন্ন ভাঙারির দোকানে কাজ করে।
যে বয়সে বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাবে সে বয়সে জীবিকার সন্ধানে বস্তা হাতে নিয়ে কুড়িয়ে বেড়াচ্ছে ভাঙারি হিসেবে পরিচিত ফেলে দেয়া বস্তু। এসব বিক্রি করে চলে তাদের জীবন সংসার। এমনি করে নোংরা পাত্র কুড়াতে কুড়াতে আসক্ত হচ্ছে আঠার নেশায়। ওদেরও স্বপ্ন আছে, আছে ইচ্ছা ও সাধ। তবে বাস্তবতা ওদেরকে করেছে বিপথগামী। ওরা বেশিরভাগই পিতা মাতা ও অভিভাবক হীন। পরিবেশ ও সমাজের অনেকেই ওদেরকে দেখছে ভিন্ন চোখে।
জানা গেছে, এ উপজেলায় প্রায় অর্ধশত পথশিশু রয়েছে। উপজেলা সদরের বিভিন্ন কলোনিতে এদের বসবাস। এরা শিশি-বোতল ও কাগজ কুড়িয়ে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে। অনেকে দিনের একটা সময় ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি করে। জমানো কিছু টাকায় খাবার ও কিছু টাকায় আঠা কিনে ‘ড্যান্ডি’ নেয় রোজ। এ মাদকের নীল নেশায় অন্ধকারের পথে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব ছিন্নমূল পথশিশু। ক্রমেই ধাবিত হচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। নেশার টাকার জন্য জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। চুরির দায়ে জেলেও গেছে এদের অনেকে।
নেশায় আসক্ত পথশিশুর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অনেকের বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে চলে যাওয়ায় মায়ের সঙ্গে বিভিন্ন কলোনিতে বেড়ে উঠছে। কেউ দরিদ্রতার কশাঘাতে পিষ্ট হয়ে, কেউবা সৎ মায়ের জ্বালায় ছেড়েছে সংসার। পথশিশু জয়নাল (১২) জানায়, তাজউদ্দিন নামে এক পথশিশু চুরির দায়ে জেল খেটে এসে ঢাকা চলে যায়। কিছু দিন পর ঢাকা থেকে ফিরে এসে সেই ড্যান্ডির নেশা শেখায় সবাইকে। সন্ধ্যার সময় সবার কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে নেশার ব্যবস্থা করত সে। এভাবেই তারা ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এখন দিনে তিন থেকে চারবার এ নেশা করতে হয়। না হয় শরীর ‘ঝিনঝিন’ করে। জয়নাল আরো জানায়, খাবার ও নেশার টাকা জোগান দিতে তার ভাই আক্তার (১৭) ও দিলোয়ার (১৩) চুরির দায়ে ইতোপূর্বে একাধিকবার জেলেও গেছে।
এদিকে সম্প্রতি দিনদুপুরে ‘ড্যান্ডি’ সেবনকালে বিশ্বনাথ বাসিয়া ব্রিজের নিচে একদল পথশিশুকে ধাওয়া করেন পুলিশের এএসআই কামরুজ্জামান। ধাওয়া খেয়ে দিগিদিকে পালিয়ে যায় এসব পথশিশুর দল।
বিশ্বনাথ থানার ওসি শামসুদ্দোহা পিপিএম সাংবাদিকদের বলেন, যারা ওইসব শিশুর কাছে নেশার সরঞ্জাম বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবু ইউসুফ জানান, আমাদের কাছে ওদের কোনো তালিকা নেই। মূলত ‘শেখ রাসেল দুস্থ শিশু পুনর্বাসন ও প্রশিক্ষণ সংস্থা’ এদের নিয়ে কাজ করে যা আমাদের উপজেলায় নেই।
বিশ্বনাথ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অমিতাভ পরাগ তালুকদার সাংবাদিকদের বলেন, পথশিশুদের সুরক্ষায় কাউন্সিলিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। এসব শিশু ও অভিভাবক যারাই আছেন তাদের নিয়ে পৃথক কাউন্সিলিং প্রয়োজন। সিলেট জেলা শিশু একাডেমির শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা সাইদুর রহমান ভূঞা সাংবাদিকদের বলেন, পথশিশুদের নিয়ে আমাদের কোনো কার্যক্রম নেই।
সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান সাংবাদিকদের বলেন, পথশিশুদের নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম নেই। তবে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2LVQMWj
August 05, 2018 at 03:08PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন