ফ্লোরিডায় খেলা শেষে হোটেল লবিতে প্রবেশের সময় জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের বিতর্কিত ইঙ্গিত নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে, সাকিব আল হাসান এক যুবকের দিকে তেড়ে যান। পরে ওই যুবককে রক্ষা করেন এক নারী। এসময় আরও একজন প্রবীণ ব্যক্তি পিঠে হাত বুলিয়ে সাকিবকে শান্ত করেন। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার লডারহিলে শেষ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বৃষ্টি আইনে ১৯ রানে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওই রাতে হোটেলের লবিতে ঘটে এ ঘটনা। এ নিয়ে ফেসবুকে সাকিবের পক্ষে-বিপক্ষে নানা আলোচনা সমালোচনা চলছে। কেউ দাবি করছেন, বাংলাদেশের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নিয়ে সাকিবের সাথে কথা বলতে যাওয়ায় মেজাজ হারান বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। আবার কেউ দাবি করছেন, ওই ব্যক্তিটি সাকিবের সাথে ছবি তোলার পরও তার সঙ্গে ভিডিও তোলার জন্য বারবার বিরক্ত করছিলেন- এতে সাকিব এমন আচরণ করেন। বুধবার এ বিষয়ে সাকিব তাঁর ফেসবুকে ওই ঘটনার বিবরণ দিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। তিনি দাবি করেন, এই ক্লিপটি সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে না। সাকিব তার স্ট্যাটাসে এই ক্লিপটি সম্পূর্ণ ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা প্রকৃত ঘটনা প্রকাশ করে না বললেও প্রকৃত ঘটনার কোনো বিবরণ দেননি। তবে পুরো পোস্ট পড়ে এমনটাই ধারণা পাওয়া যে, খেলা শেষে ক্লান্ত অবস্থায় হোটেলে ফেরার পর হাত ব্যাগ সরঞ্জামে পূর্ণ ছিল। সে কারণে অটোগ্রাফ দেয়ার মতো অবস্থা ছিল না। তখন ওই তথাকথিত ফ্যান (সাকিবের ভাষায়) বা অন্য ভক্তরা খেলোয়াড়দের অবস্থা না বুঝে অটোগ্রাফ চাইলে ভিডিওতে দেখা যাওয়া বিতর্কিত ইঙ্গিতটি করেন সাকিব। এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ওই যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দেশের প্রথম সারির এক গণমাধ্যমকে জানান, তার নাম তানভীর চৌধুরী। তিনি নিজেও একজন ক্রিকেটার। তানভীর যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্টেট লিগের একজন পেশাদার ক্রিকেটার। বর্তমানে ডেলাওয়ার স্টেটের ব্লু হেন্স ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন। কী হয়েছিল সেদিন? সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিয়ে তানভীর চৌধুরী বলেন, আমি আমার ওয়াইফসহ বাংলাদেশ দলের খেলা দেখার জন্য তিন দিনের ছুটি নিয়ে শনিবার ডেলাওয়ার থেকে ফ্লোরিডায় যাই। প্রায় তিন ঘণ্টার বিমানের পথ। সাকিব ভাইরা উঠেছিলেন ম্যারিয়ট (নর্থ) হোটেলে। আমার আর নাঈমা (স্ত্রী) ওই হোটেলেই উঠেছিলাম। বাংলাদেশ টিমের সদস্যরা থেকেছেন ৪র্থ, ৫ম ও ৯ম ফ্লোরে। আর আমরা দুইজন উঠি ১১ তলার ১১১৪ রুমে। বাংলাদেশের শেষ ম্যাচটি ছিল সোমবার। খেলা দেখতে বিভিন্ন স্টেট থেকে অনেক বাংলাদেশি এসেছেন। তাদের মধ্যে আবার অনেকে খেলোয়াড়দের দেখতে ম্যারিয়টে আসেন। তাই ওইদিন স্টেডিয়ামের উদ্দেশে হোটেল ছাড়ার আগে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সাকিব ভাই, তামিম ভাইরাসহ অন্য ক্রিকেটাররা হোটেল লবিতে ভক্তদের সাথে কথা বলেছেন, ছবি উঠিয়েছেন, আমি এবং আমার ওয়াইফও সাকিব ভাইয়ের সাথে ছবি উঠিয়েছি এবং পরে সেগুলো ফেসবুকেও পোস্ট করেছি। এরপর ৪টার দিকে উনারা বের হয়ে যান। আমরাও খেলা দেখার জন্য স্টেডিয়ামে যাই। রাত ৮টায় ম্যাচ শুরু হয়। খুব এনজয় করেছি খেলাটা। আমরা সব বাংলাদেশিরাই খুব এক্সাইটেড ছিলাম। আমেরিকাতে এসে আমাদের দেশ জিতে ফিরছে। রাত ১২টার দিকে ম্যাচ শেষ হয়। আমরা তখনই হোটেলে ফিরি। ফিরতে ফিরতে রাত দেড়টা বেজে যায়। ভোর ছয়টায় আমাদের ফ্লাইট। তাই ভাবলাম এই কয় ঘণ্টা আর ঘুমানোর দরকার নেই। হোটেল লবিতে আড্ডা দিয়ে কাটিয়ে দেই। তখন সেখানে ৭০ থেকে ৮০ জন দর্শক জড়ো হয়েছেন। সবাই অপেক্ষা করছিলেন আমাদের ক্রিকেটাররা কখন ফিরবেন। বিজয়ী হওয়ায় সবাই তাদেরকে কংগ্রাচুলেট করতে চাচ্ছিল। তানভীর বলেন, আমরা হোটেলে পৌঁছার আরও প্রায় ৪০ মিনিট পর টিমের গাড়ি আসে। ওরা গাড়ি থেকে নামার সময় বাংলাদেশি ভক্তরা আমরা যারা ছিলাম তারা কংগ্রাচুলেশন্স বলে বলে রিসিভ করছিলাম। তখন অনেক নারী এবং কয়েকজন শিশুও ছিল। আমাকেও তারা ক্রিকেট খেলোয়াড় হিসেবে চেনে। এর মধ্যে দুটি বাচ্চা আগে থেকেই খুবই উৎসাহী হয়ে অপেক্ষা করছিল সাকিব ও রুবেলের ফেরার জন্য। ওরা এই দুইজনের খুবই ভক্ত। তাদের অটোগ্রাফ চায়। এর মধ্যে ১০ বছরের মতো বয়স হবে একজনের। সে বাংলাদেশ দলের জার্সি পরে এসেছিল। ওই সময় সাকিবের কাছে কোনো অটোগ্রাফ চাননি জানিয়ে তানভীর চৌধুরী বলেন, খেলোয়াড়রা গাড়ি থেকে নামার পর স্বাভাবিকভাবেই অনেকে ঘিরে ধরে ছবি তোলা ও অটোগ্রাফের জন্য। আমরা যারা দিনের বেলা ছবি তুলে নিয়েছি তারা আর নতুন করে আগ্রহী হইনি। উনাদের (খেলোয়াড়) ক্লান্ত দেখাচ্ছিল। কিন্তু যারা দিনে ছিল না, এবং বিশেষ করে বিজয়ী হওয়ার পর তাদের এক্সাইটমেন্ট আরও বেড়ে যায়। ভিড়ের মধ্যে ওই বাচ্চা দুটি খেলোয়াড়দের কাছে ভিড়তে পারছিল না। রুবেল, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বিররা অটোগ্রাফ দিচ্ছিলেন। কিন্তু সাকিব তখন কাউকেই দিচ্ছিলেন না। উপরে উঠে যাচ্ছিলেন। তখন আমাদের ওই দুটো বাচ্চার একজনের অভিভাবক সাকিবের উদ্দেশে বলে উঠেন, ছেলেটার মনে হয় খুব ভাব। আমিও উনার কথায় সায় দিয়ে বলি, তাই তো মনে হচ্ছে। অনেক ভাব! আমার কথাটা বেশ লাউড ছিল। সেটা সাকিবের কানে যায়। এরপরই তিনি খুবই রেগে আমার দিকে তেড়ে আসেন। এবং যাচ্ছেতাই ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ঘটনা আকস্মিকতায় আমি পুরো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। রেগে গিয়ে কী বলেছিলেন সাকিব? রেগে গিয়ে কী বলেছিলেন- এমন প্রশ্নে জবাবে তানভীর চৌধুরী বলেন, হাত দিয়ে ইঙ্গিত করার সময় একটা বাক্য বলেছেন যা উচ্চারণ করার মতো নয়। তবে প্রথমে এসেই জিজ্ঞেস করেন- এই তুই কী বলেছিস? তোর মতো (অপ্রকাশযোগ্য ভাষা) পোলাদেরকে আমি অনেক খাইছি।(অপ্রকাশযোগ্য ভাষা) পোলা। (অপ্রকাশযোগ্য ভাষা)। এভাবে একবার গালি দিয়ে উনি উপরে উঠে যাচ্ছিলেন। সিড়িতে পা দিয়ে আবারও ফিরে এসে একই রকম গালিগালাজ করেন। পরে অন্য দুয়েকজন তাকে সরিয়ে নিয়ে যায়, দাবি করেন তানভীর চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, ৩ ঘণ্টা ফ্লাই করে এসে নিজেদের দেশের ক্যাপ্টেনের কাছ থেকে এমন আচরণ পাওয়া খুবই কষ্টের। আমরা তো দেশকে ভালোবেসে আসি। আমার ওয়াইফ সাকিবের খুবই ভক্ত। কিন্তু সেদিনের আচরণটা সে ভুলতে পারছে না। আমিও ওকে নিয়ে এসে লজ্জায় পড়লাম। চাইলে আমরা ওই সময়ই পুলিশ কল করতে পারতাম। ওই দেশে আইন সবার জন্য সমান। কিন্তু এসব করলে নিজের মাতৃভূমির জন্য লজ্জার হবে, তাই আমি একদম শান্ত থেকেছি। প্রথমে ভেবেছিলাম যা ঘটেছে শেষ। কিন্তু এখন দেখছি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে কিছু জিনিস ভুলভাবে আসছে। তাই সেদিন কী ঘটেছিল তা বললাম। ওখানে আরও যারা ছিলেন তারাও দেখেছেন বিষয়টা। আর নিরাপদ সড়ক আন্দোলন নিয়ে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়। সাকিব ভাইয়ের বা অন্য কোনো খেলোয়াড়ের সঙ্গেই এ নিয়ে আমার কোনো কথা হয়নি। যা কথা হয়েছে খেলার আগে বিকাল বেলা ছবি তোলার সময় হয়েছে। সেই ছবি আমার ফেসবুকেও আপলোড দেয়া আছে। বলেন যুক্তরাষ্ট্রের লীগের বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত এ ক্রিকেটার। উল্লেখ্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর শেষে আজ দেশে ফিরেছে টাইগাররা। তবে দলের পাঁচ সিনিয়র ক্রিকেটার আরও কিছু দিন পরে ফিরবেন। সদ্য সমাপ্ত এই সফরে টেস্টে লজ্জাজনকভাবে হারলেও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ঠিকই ঘুরে দাড়িয়েছে বাংলাদেশ। তথ্যসূত্র: বিডি২৪লাইভ আরএস/০৮:০০/ ০৯ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2B2MrMe
August 09, 2018 at 03:32PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top