গত ৫ দিন ঢাকার রাজপথে বাংলার দামাল ছেলেরা (এবং অবশ্যই মেয়েরা) যা করে দেখিয়েছে- ৭১ এর পর মনে হয় আর দেখেনি কেউ। ১। তারা অহিংস আন্দোলনের প্রতিজ্ঞা নিয়ে পথে নেমেছে... ২। তারা সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একত্রিত হয়ে কাজ করেছে... ৩। তারা নতুন নতুন চমৎকার সব স্লোগান তৈরি করে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে জনগণকে জাগ্রত করেছে... ৪। মোটর সাইকেলের জন্য আলাদা লেন, রিকশার আলাদা লেন, ভারী যানবাহনের আলাদা লেন, প্রাইভেট গাড়ির আলাদা লেন আবার জরুরি ব্যবস্থার (অ্যাম্বুলেন্স কিংবা ফায়ার সার্ভিস) জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ফাঁকা একটি লেন... এটা এতদিন স্বপ্নেও ভাবা যায়নি। আশাতীত সফলতার সাথে জনগণের বহু কাঙ্ক্ষিত এই লেন সমস্যার সমাধান করেছে পুঁচকে ছেলেপুলেগুলো... কি সুন্দর পিঁপড়ার মতো সারিবদ্ধ হয়ে চলেছে সকল যানবাহন...! এমন কি রিকশা কিংবা সিএনজি অটোরিকশা সুযোগ বুঝে তাদের সামনে চাকা অন্য লেনে ঢুকিয়ে বসে থাকেনি...! ৫। প্রতিটা বাস, গাড়ি, মোটর সাইকেলের বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা এবং ড্রাইভিং সিটে বসা চালকের বৈধ লাইসেন্স আছে কিনা তা পরীক্ষা করেছে... কি আশ্চর্য এই বিষয়ে তারা পুলিশ, বিচারবিভাগ কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিজিবি, মন্ত্রী, মিডিয়া কাউকেই ছাড় দেয়নি...! ৬। কাগজপত্র পরীক্ষা কিংবা অন্য কোনও কারণে রাস্তা কিছুক্ষণ আটকে থাকলেও চলাফেরায় শারীরিক ভাবে অসমর্থ মানুষকে পার হয়ে যেতে ঠিকই সাহায্য করেছে তারা... এমনকি একজন রিকশাচালক অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তাকে রিকশায় তুলে নিজেরা চালিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে কয়েকজন ছাত্র..! ৭। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় চট্টগ্রামে ভাঙা রাস্তা মেরামত করতেও দেখা গেছে ছাত্র ছাত্রীদের...! ৮। সারাদিনের কর্মসূচির পর রাস্তা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করে রাখার কাজটাও এরা নিজেরাই করেছে... ৯। সবচেয়ে বড় ব্যাপার যেটা আমার কাছে অদ্ভুত লেগেছে- এদের কোনও নেতা নেই...! এরা প্রত্যেকেই নেতা-প্রত্যেকেই কর্মী...! নেতা হবার হাতছানি তাদের এখনও পেয়ে বসেনি... স্যালুট... তোমাদের যা করবার কথা না তোমরা তার চাইতেও বেশি করেছ... রাষ্ট্র এবং পুরো সমাজকে দেখিয়ে দিয়েছ যে সত্যিকারের ইচ্ছা আর সৎ সাহস থাকলে সব পারা যায়... কিন্তু দিনের পর দিন ঝড়-বৃষ্টি কিংবা চড়া রোদ মাথায় নিয়ে তোমরা রাস্তা নিরাপদ রাখবে, ট্রাফিক সামলাবে অথবা বৈধ কাগজপত্র পরীক্ষা করবে তা তো চাই না... তোমাদের প্রজন্মের হাতে আমাদের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র পরিচালনার ভার... তোমরাই তো আগামীতে দেশের নীতিনির্ধারণে ভূমিকা রাখবে... তোমরা পড়াশোনা থেকে বেশিদিন দূরে থাকলে আমাদের চলবে...? তোমাদের প্রত্যেকে, আবারো বলছি- প্রত্যেকে আমাদের কাছে মহামূল্যবান... এবার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তোমাদের সব দাবি মেনে নেবার ঘোষণা দিয়েছেন... মন্ত্রী ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয়েছে... ঘাতক বাসের চালক, সহকারী, মালিক গ্রেফতার হয়েছে- চালকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে... এগুলো তোমাদের ৯ দফা দাবিরই জয়... তোমাদের নিহত দুই বন্ধুর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে... (বিশ্বাস করো আমরা কখনোই ভাবি না আর্থিক সাহায্যে বাবা মায়ের সন্তান হারানোর শোক চলে যায়- বাবা মায়ের কষ্ট কেবল বাবা মা-ই বোঝেন।) আরও কয়েকটি নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে দেয়া হয়েছে... আশা করি সেগুলোও বাস্তবায়ন হবে। ৯ দফার বাকি দাবিগুলো মানার জন্য সময় নির্ধারণও করা হয়েছে। এবার বিজয়ীর বেশে তোমরা বাড়ি ফিরে যাও। সঠিক সময়ে বাড়ি ফেরাও সুষ্ঠু আন্দোলনের একটা অংশ এটা তোমরা শিখিয়ে দাও বাকিদের... তোমাদের সামনের সারিতে রেখে তোমাদেরই গড়া এই সুষ্ঠ আন্দোলনকে বিতর্কিত করার জন্য শকুনেরা তৎপর... তোমাদের বিভ্রান্ত করে দিনের পর দিন রাজপথে রাখাটাই তাদের মতলব... জানি পড়াশোনার পাশাপাশি সতর্ক থাকবে তোমার চোখ... কথা দিচ্ছি সতর্ক থাকব আমরাও... (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত) সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন আর/১০:১৪/০৩ আগস্ট



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2vgyrJo
August 04, 2018 at 05:58AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top