কলকাতা, ২৮ সেপ্টেম্বর- ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে বলেছেন, নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়। আর দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের এমন রায়ের পর ভারতজুড়ে মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনশিক্ষা প্রসার ও গ্রন্থাগারমন্ত্রী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, ইসলামের সঙ্গে মসজিদ অঙ্গাঙ্গীভাবে যুক্ত। খবর পার্সটুডের। মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আল্লাহ পৃথিবীর মাটি তৈরি করার সময় সর্বপ্রথম খানায়ে কাবা তৈরি করেছেন। পৃথিবীর অস্তিত্বের সূচনায় কাবা ঘর। প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) যখন মদিনা শরীফে আসেন সেখানে নিজের হাতে মসজিদে নববী তৈরি করেন। ইসলাম ধর্মের যিনি প্রতিষ্ঠাতা তিনি নিজের হাতে মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এখন সুপ্রিম কোর্ট কী বলে দেবে মসজিদ প্রয়োজন আছে না, নেই? সুপ্রিম কোর্টকে ব্যাখ্যা কে দিয়েছে তা আমার জানা নেই। মসজিদ অঙ্গাঙ্গিভাবে ইসলামের সঙ্গে যুক্ত। অযোধ্যার বাবরি মসজিদ ভাঙার পর সেখানকার জমির ব্যাপারে এক রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, নামাজের জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়। ১৯৯৪ সালের ওই রায়ে আদালত বলেন, সরকার প্রয়োজনে মসজিদের জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। ওই রায়ের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপ্রিম কোর্টে পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানানো হয়। তবে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ ১৯৯৪ সালে সুপ্রিম কোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখেন। এদিন প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি অশোক ভূষণ একমত পোষণ করলে ভিন্নমত প্রকাশ করেছেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি এস আব্দুল নাজির। তিনি মনে করেন, মামলাটি আরও বড় বেঞ্চে পাঠানো উচিত। এদিকে সর্বোচ্চ আদালত জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবারের এই রায়ে অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা সংক্রান্ত মূল মামলা প্রভাবিত হবে না। সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আজকের এই রায় অযোধ্যার বিতর্কিত জমির মালিকানা সংক্রান্ত মূল মামলার রায়কে প্রভাবিত করবে না। আগামী ২৯ অক্টোবর থেকে ওই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলেও জানান আদালত। সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রসঙ্গে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ঘরে নামাজ পড়লে এক গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। কিন্তু মসজিদে নামাজ পড়লে ২৭ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। জুমার নামাজ মসজিদ ছাড়া হয় না। জামাত মসজিদ ছাড়া হয় না। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কেন ওই রায় দিয়েছেন তা জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট ব্যাখ্যা দিতে পারে। কিন্তু মসজিদের প্রয়োজন আছে না নেই এ ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের কাছে ব্যাখ্যা চাইলে ভালো হতো। তিনি বলেন, কাবা শরীফে নামাজ পড়লে এক লাখ গুণ সওয়াব পাওয়া যায়। লোকে মক্কা নগরে বেড়াতে যায় না। কাবা শরীফের মসজিদে নামাজ পড়তে যায়। মদিনা শরীফে প্রিয় নবীর (সা.) রওজা জিয়ারত করার পাশাপাশি মসজিদে নববীতে নামাজের জন্য মানুষের হুড়োহুড়ি পড়ে। এখানেই বোঝা দরকার মসজিদের প্রয়োজন আছে, না নেই। মসজিদ ছাড়া মুসলিমের পরিচয় নেই। মসজিদ নিয়েই মুসলিমের পরিচয়। অন্যদিকে বিজেপির সিনিয়র নেতা সুব্রমনিয়াম স্বামী বলেছেন, এই রায়ের ফলে রাম মন্দির নির্মাণের পথ প্রশস্ত হলো। তিনি বলেন, মসজিদ স্থানান্তর করা যায়, মন্দির নয়। বাধা দূর হয়েছে, এবার রাম মন্দির নির্মাণ হবে। কিন্তু বাবরি মসজিদ মামলার অন্যতম প্রধান বাদী ইকবাল আনসারী মনে করেন এই রায়ে মুসলিমদের ওপর কোনও প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ওই রায় মসজিদ বা মন্দির নিয়ে ছিল না। সেজন্য মুসলিমদের ওপর এর কোনও প্রভাব পড়বে না। উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় প্রকাশ্য দিবালোকে উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর সেবকের কর্মীরা কয়েকশ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল। অযোধ্যার ওই হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি দাবি করে সেখানে রামের মন্দির নির্মাণ করতে চাচ্ছে হিন্দুত্ববাদীরা। তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইনে আরএস/ ২৮ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2xV7yLj
September 28, 2018 at 05:45PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন