টরন্টো, ০১ সেপ্টেম্বর- আলোকচিত্র ভ্রমণের মাধ্যমে একটি বিশেষ ভূনৈসর্গিক জনপদের বিবর্তন দেখতে দুই দিনব্যাপী প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে কানাডার টরন্টো শহরে। যে জনপদটিকে ক্যামেরা লেন্সের ভেতর দিয়ে অবলোকনের সুযোগ নিয়ে এসেছে এই স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, সিলেট সেই জনপদের নাম। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী টিলা আর হাওরবেষ্টিত জলঝরনার লোকায়ত ঐতিহ্য ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এই জনপদের জীবনযাত্রা আলোকচিত্রে ধরে রেখেছেন দুই ভিন্ন সময়ের দুজন আলোকচিত্রশিল্পী রজার গোয়েন ও আনিস মাহমুদ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রেজার ১৯৭১এর উদ্যোগ ও জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সার্বিক সহযোগিতায় আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি টরন্টোর গ্র্যান্ড প্যালেস কনভেনশন সেন্টারে অনুষ্ঠিতব্য চতুর্থ বিশ্ব সিলেট উৎসবের একটি অনন্য সংযোজন। দুই দিনব্যাপী (১-২ সেপ্টেম্বর) সিলেট উৎসবের আসরে বিশেষ কলেবর জুড়ে থাকছে প্রদর্শনীটি। আয়োজন সম্পর্কে ট্রেজার ১৯৭১এর উদ্যোক্তা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীটির কিউরেটর উজ্জ্বল দাশ জানিয়েছেন, ব্রিটিশ আলোকচিত্রী রজার গোয়েনের ছবিগুলো সত্তর দশকের প্রথমদিকে শহর ও প্রত্যন্ত সিলেট চিত্রায়িত করেছেন। ফটোজার্নালিস্ট আনিস মাহমুদের কাজে একদম সাম্প্রতিক সিলেট ধরা রয়েছে পূর্ণায়ত প্রকৃতি ও প্রাণ নিয়ে। একটি মায়াবী জনপদের দুই দূরবর্তী সময়ের চিত্রকর্মসমূহ দর্শকের চোখে যেন সচলায়ত চিরসময়ের সিলেট জনপদটিকে ফুটিয়ে তোলা যায়, সেই প্রচেষ্টাই করেছি। স্মৃতিচিত্রে সিলেট: এক্সিবিশন থ্রো দ্য লেন্সেস অব রজার গোয়েন অ্যান্ড আনিস মাহমুদ শীর্ষক প্রদর্শনীর আলোকচিত্রী দুজনের মধ্যে রজার গোয়েন বয়সে প্রবীণ ও মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পরে ক্যামেরা কাঁধে নিয়ে সরাসরি ফিল্ডফোটোগ্র্যাফি করতে ঘুরে বেড়িয়েছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের আনাচকানাচে। এই চিরকালীন বাংলাদেশবান্ধব মুক্তিযোদ্ধা ব্যক্তিটি ব্রিটিশ হলেও মনেপ্রাণে ও আচারে-আচরণে আশ্চর্য বাঙালিয়ানার এক প্রতিমূর্তি। পুরো নাম এডওয়ার্ড রজার গোয়েন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি বিলেতের বিভিন্ন শহরে ক্যামেরা নিয়ে জনপ্রতিবাদ ও মিছিল-সমাবেশের দলিলায়ন করে বেড়িয়েছেন। রজার গোয়েন বিলেতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামে ঝাঁপিয়ে-পড়া ভিনদেশি এক মুক্তিযোদ্ধা। প্রদর্শনীর অন্য রচয়িতা আনিস মাহমুদ বয়সে নবীন, তরুণ উদ্যমী, ফোটো সাংবাদিকতায় ব্যাপৃত রয়েছেন। এরই মধ্যে দেশের ভেতরে ও দেশ গণ্ডি পেরিয়ে পেয়েছেন আলোকচিত্রমোদীদের সমাদর। তার তোলা ক্যামেরার কাজগুলো দেশের শীর্ষ সারির দৈনিকের শিরোনাম চিত্র হয়ে জাতীয়ভাবে খ্যাতি অর্জন করেছে। আনিস মাহমুদ ২০১২ সালে প্রথম আলোর সেরা আলোকচিত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন এবং পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০১৪ সালে প্রথম আলোর সেরা কর্মীর পুরস্কার হিসেবে ফটোসাংবাদিক বিভাগে তিনি পুরস্কার পান। তার তোলা একাধিক ছবি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সিলেটকে নতুন করে পরিচিত করে তুলেছে। স্মৃতিচিত্রে সিলেট প্রদর্শনী সম্পর্কে টরন্টোতে বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আহ্বায়ক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, এটি একটি অনন্য ও প্রশংসনীয় প্রয়াস। ছবিগুলো থেকে বর্তমানের সিলেট এবং পুরোনো সিলেটের বৈচিত্র্যময় ইতিহাসের খোঁজ মিলবে। শুধু স্মৃতিকাতরতা নয়, এই প্রদর্শনী বিশ্বের সংস্কৃতিঋদ্ধ জনপদগুলোকে দুনিয়ার সামনে উন্মোচন ও সংরক্ষণের একটি তাগিদ জোগাবে ভবিষ্যতের বিশ্ব কর্ণধারদের কাছে। প্রদর্শনীটির আয়োজন সহযোগী জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টোর সভাপতি দেবব্রত দে তমাল বলেছেন, স্মৃতিচিত্রে সিলেট: আলোকচিত্র প্রদর্শনীটি উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের সিলেটের একাল-সেকাল দেখার সুযোগ করে দেবে। আমাদের উৎসবেরও মূল বক্তব্য দুনিয়ার সংস্কৃতি নিসর্গ কোনো দেশের বা ভূখণ্ডের একলার নয়, পৃথিবীর সবারই রয়েছে এর উত্তরাধিকার। বাংলাদেশের একটি ছোট্ট জনপদ দুনিয়াজুড়ে ছড়িয়ে-থাকা উত্তরাধিকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার লক্ষ্যেই বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের আসরগুলো বসছে একাধারে বিভিন্ন দেশে। প্রদর্শনীটি উৎসব চলাকালে দুই দিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত। দুই দিনব্যাপী বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই শ্রীময়ী জনপদের কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে বর্ণিল আয়োজনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাগতিক দেশ কানাডার আয়োজক সংস্থা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব টরন্টো, কানাডা। আয়োজনের সহযোগী হিসেবে রয়েছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা। সম্মেলনটি উৎসর্গ করা হচ্ছে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি, সিলেটের কৃতী সন্তান জেনারেল এম এ জি ওসমানীর স্মৃতির প্রতি। বৃহত্তর সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি, পর্যটন, পরিবেশ, মুক্তিযুদ্ধে সিলেটের অবদান, বাংলাদেশের উন্নয়নে সিলেটি প্রবাসীদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজক সংগঠনের নেতারা। সিলেটের ইতিহাস, ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা ও একইসঙ্গে দেশের তথা সিলেটের উন্নয়নে অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের এবারকার আয়োজন। তথ্যসূত্র: প্রথম আলো আরএস/ ০১ সেপ্টেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2C8EyFu
September 01, 2018 at 11:45PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন