গত ১ ও ২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ টরন্টোতে অনুষ্ঠিত ৪র্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলন ছড়িয়ে দিয়ে গেছে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বার্তা যা সিলেটের হিন্দু-মুসলমান শত শত বছর ধরে লালন করে আসছে। সম্মেলন জানান দিয়ে গেছে সিলেটিরা কাঁটা তারের বেড়ায় বিশ্বাস করে না। যেখানেই সিলেটি সংস্কৃতির চর্চা হচ্ছে সেটাই সিলেট। তা হোক ভারত, হোক বৃটেন, যুক্তরাষ্ট্র কিংবা কানাডা। মূল ভূখন্ডের সাথে সেতুবন্ধন রচনার লক্ষ্য নিয়েই প্রতিবছর আয়োজন করা হচ্ছে বিশ্ব সিলেট সম্মেলন। আর এ বছর এটা সার্থকতায় রূপ নিলো। আশির দশকে লেখা শাহ আব্দুল করিমের লেখা গান গ্রামের নওজোয়ান, হিন্দু-মুসলমান মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শীদি গাইতাম, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম...। এবারকার সম্মেলনে প্রমাণ হয়েছে এখনও সিলেটের হিন্দু-মুসলমান এক সাথে মিলে মিশে কাজ করে, একই সুরে গান গায়, একই প্লেটে ভাত খায়, একজন আরেকজনের কাঁধে হাত রেখে এক সাথে ঘুরে। সুখে-দুঃখে তারা একে অন্যের পাশাপাশি থাকে। বিশ্ব সিলেট সম্মেলন নিছক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর সেমিনারের মধ্যে সীমাবদ্ধতা ছিল না; ছিল একটি পুনর্মিলনী। কারো সাথে দেখা হয়েছে ১০ বছর পর; কোন কোন বন্ধুর সাথে দেখা হয়েছে ৩০ বছর পর। এ কদিন নগরীতে বসবাসরত সিলেটি পরিবারগুলোর বাসা-বাড়িতে ছিল অতিথি আর আত্মীয়-স্বজনে ঠাসা। প্রবাস জীবনে ঈদ কিংবা দুর্গোপুজোয় যে আনন্দ বয়ে আনতে পারেনি, বিশ্ব সিলেট সম্মেলন দিয়ে গেছে সে আনন্দ, মন্তব্য অংশগ্রহণকারীদের। বাংলাদেশের সংগীতাঙ্গনকে যে কজন ব্যক্তি সমৃদ্ধ করেছেন তারা হলেন মরমী কবি হাসন রাজা, রাধারমন, আরকুম শাহ, শিতালং শাহ এবং শাহ আব্দুল করিম। বাংলাদেশের অনেক শিল্পী তারকাখ্যাতি পেয়েছেন এদের গান গেয়ে। এছাড়া সিলেটের বিয়ের গান সারা বাংলাদেশে জনপ্রিয়। এদেরই গান গাইতে যুক্তরাজ্য থেকে এসেছিলেন প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পী হিমাংশু গোস্বামী, যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাউল শিল্পী তাজুল ইমাম। আর বাংলাদেশ থেকে এসেছিলেন বাউল শিল্পী কালা মিয়া ও আশিক। দুই দিনই তারা মঞ্চ কাঁপিয়ে দর্শকদের আনন্দ দিয়েছেন। স্থানীয় শিল্পীরাও গেয়েছেন সিলেটের জনপ্রিয় গানগুলো। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন কানাডাসহ উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন শহর থেকে আগত সিলেটি বংশদ্ভূত শিল্পীবৃন্দ। একটি নিদৃষ্ট ভুখন্ড (সিলেট) থেকে আগত এত শিল্পীর অংশগ্রহণ রীতিমত চমকে দিয়েছে আয়োজকদের। দুইদিনব্যাপী সাংস্কৃতিক পর্বে প্রায় ৫০জন শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। সিলেটের কৃতিসন্তান নৃত্যগুরু বিপ্লব করের নির্দেশনায় দলীয় নৃত্যে অংশগ্রহণ করে ইন্দ্রা বিদুষী, দিষানা, শ্রেয়ানা, আনুষা, ইমন, পারিজাত, সৃজা, অর্পিতা, ফারিন, ফারজিন, আকশারা, সাকশারা, মাইশা, রাইশা এবং দীপশিখা। সিলেটের কৃতিসন্তান নৃত্যগুরু তাপস দেবের নির্দেশনায় সূচনা পর্বে অংশগ্রহণ করে চিত্রা দাশ, অরণ্য, মম, প্রিয়া, চারুশি, শ্রেয়শী, নওরিন, সুলগ্না, ইমন, সুমন, পাপলু, অপর্ণা, ঊষা, শ্যামলী ও মিনাক্ষি। সংগীত পরিবেশন করেন ইভা নাগ, সৌমেন রায়, ফারহানা চৌধুরি লিমা, মৈত্রি সোম, জয়া দত্ত, ফারহানা জয়, বীথিকা, পরমা পাল তমা, শাফায়াত চৌধুরি, নোবেল প্রমুখ। মন্ট্রিয়লের রূপা চৌধুরি, শেলি দেব ও আশরাফুল পাভেল এবং নিউইয়র্ক থেকে সেঁজুতি দে প্রমুখ। যন্ত্রে ছিলেন রাজীব, অনুপ চৌধুরি মিঠু এবং অনিমেষ কর। দুই দিনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার উপস্থাপনায় ছিলেন ফারহানা আহমেদ , অজন্তা চৌধুরী ও নজরুল কবীর। সাংস্কৃতিক পর্বটি সফলভাবে পরিচালনা করেন স্বপ্না দাশ। ৪র্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলনের মিডিয়া পার্টনার ছিলো: টরন্টোর দেশে বিদেশে, সাপ্তাহিক ভোরের আলো, সাপ্তাহিক আজকাল, লণ্ডনের সাপ্তাহিক সুরমা, সাপ্তাহিক পত্রিকা ও চ্যানেল এস। নিউ ইয়র্কের সাপ্তাহিক ঠিকানা, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন।
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2O3JQUi
September 10, 2018 at 05:03AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন