ঢাকা, ০২ অক্টোবর- জেমস বলতে উন্মাদ তরুণ সমাজ। তার গিটারের টান, ঝাঁকড়া চুলের ঝাঁকি আর ঝাঁঝালো কণ্ঠের জাদুতে বিমোহিত দেশের লাখ লাখ তরুণ গানপ্রেমী বাংলা সঙ্গীতের ইতিহাসে যে কজন পপ গায়ক আছেন তাদের মধ্যে জেমস অন্যতম। নগরবাউল বা গুরু নামেও তিনি দেশব্যাপী সমান পরিচিত। জীবনের ৫৩টি বসন্ত পেরিয়ে আজ ৫৪-তে পা দিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের সেই গুরু। ১৯৬৪ সালের এই দিনে নওগাঁ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন ফারুক মাহফুজ আনাম ওরফে জেমস। জেমস বর্তমানে নগরবাউল ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিস্ট। আগে যেটি ফিলিংস নামে পরিচিত ছিল। জেমস তার স্বতন্ত্র কণ্ঠ ও স্টাইলের জন্য বাংলাদেশের পাশাপাশি এবং ভারতের মানুষের কাছেও ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বলিউডের কিছু হিন্দি ছবিতেও গান গেয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার গভীর টান থাকলেও পরিবারের সমর্থন ছিল না। গানের টানে বাবার সঙ্গে অভিমান করে পরে কিশোর বয়সে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। থাকতে শুরু করেন চট্টগ্রামের একটি মেসে। ওই মেসে থাকাকালীনই কয়েকজন বন্ধু মিলে ফিলিংস নামের ব্যান্ড দলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে সেই ব্যান্ড দলের প্রধান গিটারিস্ট ও কণ্ঠদাতা হিসেবে সঙ্গীতে তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। ১৯৮৭ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের সঙ্গে তার প্রথম অ্যালবাম স্টেশন রোড মুক্তি পায়। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক অ্যালবাম অনন্যা। পরবর্তীতে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখেন নগরবাউল। এই নগরবাউল দিয়েই গত তিন দশক ধরে মাতিয়ে রেখেছেন এপার-ওপার দুই বাংলাই। ভারতের সঙ্গীত পরিচালকদের সঙ্গেও কাজ করেছেন জেমস। ২০০৪ সালে বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সঙ্গে তিনি কাজ করেন। ২০০৫ সালে বলিউড সিনেমা গ্যাংস্টার-এ প্রথম কণ্ঠ দেন। ওই সিনেমায় তার গাওয়া ভিগি ভিগি গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে গানটি বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। এর পর তিনি লামহে, লাইফ ইন এ মেট্রো এবং ওয়ার্নিং সিনেমাগুলোতেও গান গেয়েছেন। শুধু গানে নয়, অভিনয়েও চলাফেরা আছে জেমসের। বিজ্ঞাপন চিত্রে কাজ করেছেন তিনি। ২০০০ সালের প্রথম দিকে পেপসির একটি বিজ্ঞাপনে অভিনয় করেন পপগুরু। এটিই ছিল তার ক্যারিয়ারের প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্র। বাংলাদেশে ছাড়া পশ্চিমবঙ্গেও প্রচার হয় এই বিজ্ঞাপনটি। এর পর ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্লাক হর্স-এর বিজ্ঞাপনেও কাজ করেছেন জেমস। সঙ্গীতের পাশাপাশি ব্যবসায়ী হিসেবেও সুনাম রয়েছে গায়কের। রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামের একটি প্রোডাকশন হাউজ পরিচালনা করেন তিনি। এই প্রোডাকশন হাউজ থেকে ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বিউটিফুল বাংলাদেশ শিরোনামে একটি ভিডিও চিত্র তৈরি করা হয়। প্রচুর রিয়ালিটি শো প্রযোজনা করেছেন জেমস। এর মধ্যে দ্য রকস্টার টু, লাক্স চ্যানেল-আই সুপারস্টার, কে হতে চায় কোটিপতি উল্লেখযোগ্য। পারিবারিক জীবনে দুই কন্যা জান্নাত, জাহান, ছেলে দানেশ এবং স্ত্রী বেনজির সাজ্জাদকে নিয়ে গুরুর সংসার। বেনজির জেমসের দ্বিতীয় স্ত্রী। তার প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। ২০০২ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ডিভোর্স হয়। এরপর তিনি বেনজির সাজ্জাদকে বিয়ে করেন। জেমসের প্রতি জন্মদিনেই ভক্তদের পক্ষ থেকে থাকে বিশেষ আয়োজন। গত বছর পুরো অক্টোবর জুড়ে সারা দেশে এক কোটি গাছ লাগিয়েছিল জেমস ফ্যান ক্লাব। যেটির প্রধান পিন্স মোহাম্মদ। তাকে বলা হয় জেমসের পাগলা ভক্ত। জেমস ফ্যান ক্লাব-এ এক লাখেরও বেশি সদস্য আছে। সবার সহযোগিতায় আয়োজনটি বাস্তবায়ন করেছিলেন প্রিন্স। এ ছাড়া সারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় জেমসের ৫৩টি প্রতিকৃতিও টাঙানো হয়েছিল। এর আগে ২০১৫ সালে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ১০টি বিলবোর্ড টাঙিয়ে জেমসকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জের ছেলে প্রিন্স মোহাম্মদ। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রিয় তারকার জন্মদিনে ভিন্ন কিছুর আয়োজন করেন এই ভক্ত। ২০১৬ সালেও নাকি তিনি জেমসের জন্মদিনে বিশাল এক কেক নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছিলেন ঢাকা শহরের নানা জায়গায়। সেই পাগলা ভক্ত এ বছর কী করেন সেটাই দেখার। তথ্যসূত্র: ঢাকাটাইমস আরএস/ ০২ অক্টোবর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2Qr1ceB
October 02, 2018 at 06:44PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন