কলকাতা, ০৭ নভেম্বর- দক্ষিণ ভারতের শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেও কাজ হয়নি। একই ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তার পরেও তাঁরা নিরুত্তাপ। মেয়েরা অশুচি, তাই কালীপুজোর মণ্ডপে তাঁদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাই বহাল রাখলেন চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের বারোয়ারি কালীপুজোর উদ্যোক্তারা। মঙ্গলবার, কালীপুজোর দিন বিকেলে গিয়ে দেখা গেল, মণ্ডপ থেকে খানিকটা দূর পর্যন্ত অংশ বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মেয়েরা যাতে ওই বাঁশ পেরিয়ে মণ্ডপের কাছে আসতে না পারেন। চেতলা হাট রোডের ওই পুজোর উদ্যোক্তাদের দাবি, ৩৪ বছর আগে তারাপীঠের তান্ত্রিকেরা পুজোটি শুরু করেছিলেন। তখন থেকেই মেয়েদের পুজো থেকে দূরে রাখা হত। এখনও সেই রীতিই বহাল রেখেছেন তাঁরা। আর এই রীতি মেনে নিয়েছেন এলাকার মেয়েদের একাংশও। এ দিন মণ্ডপের কাছে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত ক্লাবের পুরুষ সদস্যেরা। এক জন মহিলাও নেই। মণ্ডপে ঢোকার খানিকটা আগেই রয়েছে হাঁড়িকাঠ ও যজ্ঞের জায়গা। তারও কিছুটা আগে থেকে বাঁশ দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মেয়েরা মণ্ডপের সামনে এলেও যাতে বাঁশ টপকে ভিতরে না ঢোকেন, তা নিশ্চিত করতেই ওই ব্যবস্থা। পাশেই রাখা একটি ঝুড়ি। মেয়েরা পুষ্পাঞ্জলি দিতে চাইলে বাঁশে ঘেরা অংশের বাইরে থেকে ফুল নিয়ে ওই ঝুড়িতে ফেলতে হবে। পরে পুজোর শেষে ঘট বিসর্জন হলে কোনও পুরুষ ওই ফুল নিয়ে গিয়ে কালী প্রতিমার পায়ে দেবেন। অর্থাৎ, পুজো চলার সময়ে মেয়েদের ছোঁয়া ফুলও কেউ স্পর্শ করবেন না। পুরোহিতেরা মেয়েদের হাতে জলও গ্রহণ করবেন না। সুপ্রিম কোর্ট তো বটেই, গত সোমবার দক্ষিণেশ্বরের স্কাইওয়াক উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কারও নাম না করেই বলেছিলেন, পুজো তো সকলেই করতে পারেন! তাতে পুরুষ ও মহিলা আলাদা কীসের? মহিলারাই তো প্রতি দিন বাড়িতে লক্ষ্মীপুজো করেন। তা হলে ভেদাভেদ কীসের? চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের কিছুটা দূরে চেতলার ৮৬ পল্লি ক্লাবের কালীপুজোর মণ্ডপেও মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তবে বেশ কয়েক বছর হল উদ্যোক্তারা নিয়ম কিছুটা শিথিল করেছেন। সেখানে মণ্ডপে মেয়েরা না থাকলেও ভোগ রান্না বা পুজোর আয়োজনে তাঁরা শামিল হচ্ছেন। এখানে কালী ছিন্নমস্তা রূপে পূজিত হন। কিন্তু চেতলা প্রদীপ সঙ্ঘের ক্ষেত্রে পুজোর কোনও কাজেই অংশ নিতে পারেন না মেয়েরা। এক উদ্যোক্তার সাফ কথা, পূর্বপুরুষেরা এই নিয়ম করে গিয়েছেন। যাঁরা পুজো করেন, তাঁরাও এই বিধান দেন। এটা কুসংস্কার নয়। একটা প্রথা। কলকাতার প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের স্নাতকের প্রথম বর্ষের ছাত্র কৌস্তুভ আঢ্য স্পষ্ট বলেন, যে প্রথা চলে আসছে, সেটা ভাঙব কেন? তবে এলাকার মেয়েদের একাংশও এই নিয়ম মেনে নিয়েছেন। স্থানীয় বাসিন্দা মিঠু মাঝির সাফ কথা, যা নিয়ম, তাই মানব। এর কোনও অন্যথা হবে না। নিয়ম পরিবর্তন করতে গিয়ে যদি পাড়ায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তার দায় কে নেবে? প্রথা ভাঙতে রাজি নই। কাঞ্চন হালদার নামে আর এক মহিলা বলেন, পুজোয় অংশ নিতে খুব ইচ্ছা করে। কিন্তু উপায় নেই। সকলে অনেক বছর ধরে যা মানছেন, আমিও তা-ই মানছি। পুরোহিতেরা প্রথমে যুক্তি খাড়া করতে চাইলেও পরে উদ্যোক্তাদের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন। বীরভূমের মল্লারপুর থেকে এ দিন পুজো করতে এসেছিলেন রাজীব ভট্টাচার্য। মণ্ডপে মেয়েদের প্রবেশাধিকার নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মেয়েরা ঋতুমতী। তাই তাঁরা অশুচি। পুজোয় অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু মেয়েরা ঋতুমতী না হলে এই জগৎ সৃষ্টি হত কী ভাবে? এটা তো একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। রাজীববাবুর সাফাই, আমরাও এই রীতি ভাঙতে চাই। মেয়েরা পুজোয় প্রবেশ করলে আমাদেরই সুবিধা হয়। পুজোর কাজে মেয়েরা অনেক বেশি পটু। কিন্তু যাঁদের পুজো, তাঁরাই ভাঙতে চান না। আমরা এক বার উদ্যোক্তাদের বলে দেখব। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরেও হুঁশ ফিরল না মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে কিছু দূরের এই পুজো উদ্যোক্তাদের। তথ্যসূত্র: আনন্দ বাজার একে/০৫:৫৫/০৭ নভেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2OuRTbP
November 07, 2018 at 11:55PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top