নির্বাচনের আর মাত্র ৩৭ দিন বাকি। কিন্তু দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক দল বা জোটই এখনও পর্যন্ত তাদের প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেনি। ফলে কোন আসনে কোন দল থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কে-এ নিয়ে সর্বস্তরে রয়েছে আগ্রহ। বিশেষ করে দেশে রাষ্ট্র ক্ষমতায় কে বসবে, এটার ‘নির্ধারক’ হওয়ায় সিলেট-১ আসন নিয়ে সারা দেশেই আগ্রহ রয়েছে। মর্যাদাপূর্ণ এই আসনটিতে কে হচ্ছেন দল বা জোটের প্রার্থী, তা জানতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষায়। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জয়ের জন্য এ আসনে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ওপরই সবচেয়ে বেশি আস্থাশীল। অন্যদিকে প্রার্থীর জন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময় থেকে দেশে যতো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, সবগুলোতে সিলেট-১ আসনে যে দলের প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন, সে দলই সরকার গঠন করেছে। এমন সমীকরণের ফলে এ আসনটি সবসময় সব দলের কাছে বাড়তি গুরুত্ব পায়। গ্রহণযোগ্য, বিতর্কহীন ও সেরা প্রার্থীই এ আসনে দেয়ার চেষ্টা করে রাজনৈতিক দলগুলো। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও এর ব্যত্যয় ঘটবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সিলেট-১ আসনের বর্তমান সাংসদ আবুল মাল আব্দুল মুহিত। সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মুহিত এবার ‘অবসরে যেতে চান’। তিনি একাধিকবার বলেছেন, আর নির্বাচন করবেন না, এ আসনে নির্বাচন করবেন তাঁর ছোট ভাই জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের জন্য তাঁরা দুজনই আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানও এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। ড. মোমেন ও মিসবাহ সিরাজ দীর্ঘদিন ধরে এ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য তৎপর রয়েছেন। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল অনুষ্ঠানেই অংশগ্রহণ করে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছার বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দলে একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও এ আসনে আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বিকল্প এখনও নেই। সিলেটে সাধারণ মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মীর কাছে এখনও তাঁর গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। ফলে মুহিত আবারও প্রার্থী হলে এ আসনে জয়ের সম্ভাবনা বাড়বে। নেতাকর্মীরা বলছেন, এবার নির্বাচনে বিএনপি তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটও অংশগ্রহণ করছে। ফলে নির্বাচন হবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। এজন্য সিলেট-১ আসনে সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য মুহিতকেই প্রার্থী করা হলে দল লাভবান হবে। অবশ্য, কেন্দ্র থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে, তার পক্ষেই কাজ করার কথাও বলছেন তারা।
এদিকে, সিলেট-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির মাঠে কাজ করলেও সম্প্রতি এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় যোগ হয়েছে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরীর নামও। গুঞ্জন আছে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে ঘিরেও। এছাড়া বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীও এ আসনে লড়তে চেয়ে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা মনে করছেন, ভিআইপি এ আসনে কে প্রার্থী হচ্ছেন, তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটের মধ্যে সমন্বয়ের ওপর নির্ভর করছে। পৃথক এই দুই জোটের মধ্যে বিএনপি সমন্বয় করেই আসনটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারে। তবে বিএনপি নিজ দলের বাইরে জোটের কোন দলের নেতাকে এ আসনটি ছেড়ে দেবে না বলেই মনে করছেন নেতাকর্মীরা। স্থানীয় নেতাকর্মীদের এমন গুঞ্জনও রয়েছে, দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পান, তবে তিনিও হয়তো এ আসনটিতে প্রার্থী হতে পারেন।
প্রসঙ্গত, সিলেট সিটি করপোরেশন ও সদর উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত সিলেট-১ আসন। স্বাধীনতার পর থেকে অনুষ্ঠিত ১০টি সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ চারবার এবং বিএনপি ও জাতীয় পার্টি দুইবার করে বিজয়ী হয়েছে। এ আসন থেকে বিজয়ী হয়ে প্রয়াত সাইফুর রহমান অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে এ আসনের সাংসদ আবুল মাল আব্দুল মুহিতও আছেন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ https://ift.tt/2TCu71k
November 22, 2018 at 05:59PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন