ঢাকা, ১৩ নভেম্বর- আগামী ১৬ নভেম্বর হাসিনা- এ ডটারস টেল শিরোনামের ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। ছবিটি এরইমধ্যে আলোচনা তৈরি করেছে। হচ্ছে নানা নেতিবাচক কথাও। অনেকেই মনে করছেন নির্বাচনের আগমুহূর্তে এই ছবিটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই মুক্তি দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ইতিবাচক প্রচারের জন্যই তৈরি হয়েছে ছবিটি। তবে সিনেমার পরিচালক পিপলু খান জানালেন, মোটেও এমন কিছু নয়। এটি একটি সিনেমাই। যেখানে রাজনীতির ইতিহাস আছে, নানা রকমের অজানা তথ্য আছে। সবচেয়ে বড় কথা, এখানে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক আদর্শ নয় বরং তার নিতান্তই ব্যক্তি জীবনের গল্প ফুটে উঠেছে। পরিচালক সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নোত্তর পর্বে বলেন, দেশে দেশেই রাজনীতিবিদদের নিয়ে ছবি নির্মিত হয়। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুর মতো নেতা পেয়েও তাকে নিয়ে কিছু বানাতে পারিনি। অথচ তার সাথে পঁচাত্তরের কাল রাতে ঘটে যাওয়ার ঘটনায় শত শত বই লেখা হয়েছে। আমি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছু নির্মাণের সাহস করিনি। তবে আমার দেখা একজন রাজনীতিবিদ শেখ হাসিনা। যিনি রানিং প্রধানমন্ত্রী। আমার ও আমাদের সিনেমার টিমের মনে হয়েছে তার জীবনের গল্প আছে, সেগুলো মানুষ জানতে চায়। তার ব্যক্তি জীবন নিয়ে মানুষের অনেক আগ্রহ। সেটা তুলে ধরতেই আমি ছবিটি বানিয়েছি। আমাকে এই ছবির জন্য সরকার থেকে কোনো প্রস্তাব দেননি, সরকার এটিকে নিয়ে বাণিজ্যও করছে না। তেমনটি হলে সারাদেশের সব হলেই হয়তো ছবিটি আমরা নিয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাদের সেই উদ্দেশ্য নেই। মনে হয়েছে শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি কাজ করা আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব। সেটা পালন করেছি। আমার চেয়ে ভালো নির্মাতা এই দেশে অনেকেই আছেন। তারা বানালে হয়তো আরও ভালো বানাতে পারতেন। আমি শুরু করেছি, এবার অন্যরাও করবে। ছবিটিতে এত জটিল ভাবনার কিছু নেই। প্রধানমন্ত্রী একদম সাধারাণ একজন নারী হিসেবে আমাদের সময় দিয়েছেন। পাঁচ বছর ধরে কাজ করে তাকে নিয়ে ছবিটি আমরা বানিয়েছি। এখানে তার ব্যক্তিজীবনের নানা কথাই দেখবেন দর্শক। একজন সাধারণ নারী তার এক বোনকে নিয়ে কেমন করে পরিবারের সব প্রিয়জন হারিয়ে টিকে থাকলেন, অসাধারণ হয়ে উঠলেন সেই মানিবকতার কাহিনি আছে এখানে। রাজনৈতিক ভিউ নয়, রাজনীতি ও ইতিহাসকে এখানে কাব্যের ভাষায় দেখতে হবে। শিল্পের ভাবনায় একজন দর্শক ছবিটি দেখলে তারা আরাম পাবেন। আর সেটাই হবে আমাদের স্বার্থকতা। পিপলু খান প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, যখন প্রধানমন্ত্রী রাজি হলেন আমাদের সময় দেয়ার তখন থেকেই আমি চেষ্টা করেছি সাদামাটা একটা উপস্থাপনের। আমার মাথায় ছিলেন ব্যক্তি শেখ হাসিনা। তিনি কী পছন্দ করেন, কী খেতে ভালোবাসেন, কী ধরনের শাড়ি তিনি পছন্দ করেন? ছেলেমেয়ে ও নাতিদের সঙ্গে কীভাবে সময় কাটান, তার বোনের সঙ্গে রসায়নটা কেমন, কেমন তার জীবনযাপন? স্বজন হারানোর ভাবনা তাকে কীভাবে প্রভাবিত করে, কীভাবে কেটেছে তার নির্বাসিত জীবনের দিনগুলো- এইসব জানতে চেয়েছিলাম। বাঙালি জানে ঠাকুর বাড়িতে কী রান্না হতো, ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা কীভাবে শাড়ি পড়তো, কেমন করে পড়তো। সেইসব নিয়ে পত্রিকায় নানারকম লেখা ও ফিচার দেখি। কিন্তু বাঙালি কোনোদিন জানতে চায়নি বঙ্গবন্ধুর পরিবারে কী রান্না হতো? সুলতানা কামাল চমৎকার শাড়ি পড়তেন, ফ্যাশনেবল ছিলেন। সেগুলো কিন্তু আমাদের মেয়েদের কাছে জনপ্রিয়তা পায়নি। কেন? যে পরিবারটি এ দেশের রাজনীতির সঙ্গে এত গভীরভাবে জড়িত, দেশের মুক্তির সঙ্গে যে পরিবারের এত ত্যাগ রয়ে গেছে সেই পরিবারটির সঙ্গে আমাদের এত দূরত্ব কেন? কারণ নানা রিউমার ও গল্প ঘৃণার জন্ম দিয়ে একটা দেয়াল তৈরি করা হয়েছে। আমরা যারা আশির দশকে বেড়ে ওঠেছি দেখেছি তখন জয় বাংলা বলা যেত না। কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম নিশানা ছিলো না। ওসব প্রায় নিষিদ্ধ ছিলো। বাঙালি জাতিসত্ত্বার গুরুত্ব ছিলো না। বলা হতো দেশটা মুসলিমদের। কিন্তু যখন নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হলো তখন বুঝলাম দেশের ইতিহাস নিয়ে এতদিন একটা ফাঁকি দেয়া হয়েছিলো আমাদের। আমি নিজে এমন একটি পরিবারে বড় হয়েছি যেখানে আমিও অনেক জানতে পারিনি। ইতিহাস সম্পর্কে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার সম্পর্কে। আসলে আমার বাবা বৃটিশ আমলের মানুষ। তিনি বৃটিশদের দেখেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছেন। পাকিস্তান ভাগ হতে দেখেছেন। সেখানেও কন্ট্রিবিউশন ছিলো। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্যও কাজ করেছেন। তার কাছে মুক্তিযুদ্ধের পরে আর তেমন করে দেশপ্রেমের আবেগ কাজ করেনি। এতগুলো জাতিসত্ত্বার ভেতর দিয়ে যাতায়াত করে তার জাতীয়তার বড়াইটা আর ছিলো না। কিন্তু আমি তো সেই বড়াটা করতে চেয়েছি। আমি কেন জানবো না আমার জাতির জনকের পরিবারের কথা। বঙ্গবন্ধু তার স্ত্রীকে রেনু বলে ডাকতেন। এটা আমার ছেলে কেন জানবে না। আমার এটা মনে হয়েছে। এবং সেটা জানার ও জানানোর চেষ্টা করতেই এই ছবিটি বানিয়েছি। যে দেয়ালটা তৈরি করা হয়েছিলো সেই দেয়ালটা ভাঙতে চেয়েছি। আর যেহেতু এটা ওই পরিবারের ও শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত গল্প তাই শুরু থেকেই উনার সঙ্গে ক্যাজুয়ালি মিশতে চেয়েছি। ঘরের মানুষের মতো। উনি প্রধানমন্ত্রী সেটা মাথায় থাকলে কাজ করা যেত না। তাই প্রথমবার যখন দেখা হলো তখনই বলেছিলাম উনাকে- আমি আপনাকে আপা বলে ডাকবো। মজার ব্যপার হলো তিনিও সেটা রিসিভ করলেন। প্রথমে আমাকে এই ছেলে বলে ডাকলেও একটা সময় পিপলু পিপুল বলে ডাকতে লাগলেন। আমাদের সম্পর্কটা তখন ভাইবোনের পর্যায়ে এসে গেল। আর সেজন্যই ছবিতে বাড়তি কিছু আমাকে রাখতে হয়নি। আমি শতভাগ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছি। মনে আছে প্রথম সাক্ষাতের সময় আলাপে আলাপে প্রধানমন্ত্রী বলছিলেন এই জানো, আমি রেহানা একে অন্যের শাড়ি ভুল করে পরে ফেলি। তার মুখে এই রসাত্মক কথাটা শুনতে শুনতে আমার মনে হয়েছিলো এই মানুষটির সঙ্গে ডাল চাল নিয়ে কথা বলা যায়। তিনি একদমই ঘরের মা-বোনের মতো আচরণ করেছেন। আর সেটাই আমাদের দরকার ছিলো। ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে দেশের অনেক ইতিহাস ও আবেগ পড়ে আছে দাবি করে পিপুল খান বলেন, খুব অবাক করা ব্যাপার হলো ৩২ নম্বরের বাড়িটি নিয়ে আমাদের কোনো আবেগ নেই। ওখানে যারা যান তারা কেউ কাজের জন্য, কেউ বা বেড়াতে-ঘুরতে যান। কিন্তু ইতিহাস জানতে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে জানতে যান না কেউ। ওই বাড়িতে অনেক আবেগ জমে আছে। বঙ্গবন্ধুর চিঠিগুলো অসাধারণ। কবিতার মতো। আমি পড়েছি। প্রতিটি চিঠিতে তিনি স্ত্রীকে লিখতেন প্রাণের রেনু। দাম্পত্যের কী চমৎকার প্রেম। আজকাল তো আমরা চিঠিই লিখছি না প্রেমিকার কাছে। কিন্তু প্রেমমাখা এসব চিঠি পড়লে দেখবেন মন ভালো হয়। তারপর ধরেন আপনি এমন একজন স্বামীকে চেনেন যিনি প্রতিদিন স্ত্রীর হাতে বানানো পান অফিসে নিয়ে যান। কিন্তু তিনি পান খান না। এমনই একজন প্রেমিক স্বামী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। স্ত্রীকে খুশি রাখতে রোজ রোজ সকালে পান হাতে নিয়ে বের হতেন। সেই পান তিনি খানওনি দিনের পর দিন। এই গল্পটা একটা সিনেমার নায়কের হতে পারতো না? কিন্তু সেগুলো জানার চেষ্টাই হয়নি। দেখুন, দুটো মানুষ সারাজীবন প্রেমের কবিতা লিখেছেন তাদের দাম্পত্যে। অথচ আর্মিরা যখন বঙ্গবন্ধুর স্ত্রীকে বলছিলেন বঙ্গবন্ধুর লাশের কাছে যেতে তিনি যাননি। উত্তর দিয়েছিলেন, আমি ওর মরা মুখ দেখতে পারবো না। তোমরা যদি আমাকে মেরে ফেলতে চাও, তবে এখানেই মারো। নরমালি কী হয়, প্রেমিক-প্রেমিকারা বলে যে আমরা একসাথে বাঁচবো, একসাথে মরবো। কিন্তু এখানে প্রধানমন্ত্রীর মা অন্য দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন। এই প্রেমের গল্প ছুঁয়ে না গিয়ে পারে না। আরও অবাক করা ব্যাপার দেখুন, বঙ্গবন্ধুর ও তার স্ত্রীর কবরও হয়েছে আলাদা আলাদা। দূরে। নিজের পাশাপাশি বাবা-মা ও পরিবারের সদস্যদের এইসব গল্প হাসিনা- এ ডটারস টেল ছবিতে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবিটা হয়তো সবাইকে খুশি করবে না, কোনো ছবি সেটা পারেও না। তবে পাঁচশ বছরের ইতিহাসকে সামনে রেখে যখন ভাববেন তখন দেখবেন খুব ভালো একটি সংগ্রহ হবে এই ছবিটি। সিনেমাটি দেখার পর প্রধানমন্ত্রীর অনুভূতি কেমন ছিলো সেই প্রশ্নের জবাবে পরিচালক পিপলু খান বলেন, ছবিটি নিয়ে তার কোনো উচ্ছ্বাস নেই। তিনি দেখেছেন এবং মজা পেয়েছেন। কোনো কারেকশান দেননি যে এটা এরকম করো, এটা বদলে দিও। তিনি কেবল মজা করেছেন তার মেকাপ নিয়ে। বলছিলেন, বয়স হয়েছে। মেকাপ যেন বেশি না লাগে। সেটা আমরা এডিটিংয়ের সময় মাথায় রেখেছিলাম। হাসিনা-এ ডটারস টেল সিনেমাটি নিয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইন্সটিটিউটে আয়োজিত হয় এক সংবাদ সম্মেলন। সেখানে এর পরিচালক পিপলু খান ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের নির্বাহী পরিচালক সাব্বির বিন শামস, গ্রে বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কান্ট্রি হেড গাউসুল আলম শাওন। দেখুন হাসিনা-এ ডটারস টেল ছবির ট্রেলার : একে/০৮:১৩/১৩ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2z5EHFO
November 14, 2018 at 02:12AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন