ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর- আজকের ম্যাচটি ছিল ডু অর ডাই। হারলেই সিরিজ হাতছাড়া হয়ে যাবে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে উড়িয়ে দিয়ে সব শংকা দূর করল সাকিব আল হাসানের দল। এই জয়ে লিটন-সৌম্য-রিয়াদের ব্যাটিংয়ের যেমন অবদান, তেমনি অবদান সাকিবের অল-রাউন্ড নৈপূণ্যের। ব্যাট হাতে ঝড়ো ৪২* রানের পর বল হাতে ৫ উইকেট নেন সাকিব। দুর্দান্ত টিম পারফর্মেন্সে উইন্ডিজকে ৩৬ রানে হারিয়ে সিরিজ ১-১ করে ফেলল বাংলাদেশ। আগামী শনিবার মিরপুরে তৃতীয় ওয়ানডে হবে সিরিজ নির্ধারণী। বাংলাদেশের দেওয়া ২১২ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে তৃতীয় ওভারেই আবু হায়দার রনির বলে লিটন দাসের হাতে ধরা পড়েন এভিন লুইস (১)। এরপর নিকোলাস পুরানকে নিয়ে ঝড় তোলেন শাই হোপ। দুজনের ৪১ রানের জুটি ভাঙেন সাকিব। তার ঘূর্ণিতে তামিম ইকবালের তালুবন্দি হন ৬ বলে ১৪ রান করা পুরান। হোপের সঙ্গী হয়ে আসেন শিমরন হেটমায়ার। তাকে আউট করতেই হয়তো মিরাজকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। গত ৯ ম্যাচে ৭ বার এই ক্যারিবীয়র উইকেট নিয়েছেন মেহেদী মিরাজ। বোলিংয়ে এসেই সবচেয়ে বড় ব্রেক থ্রু উপহার দেন এই ঘূর্ণি তারকা। ১৯ বলে ৩৬ রান করা শাই হোপ মিরাজের বলে ধরা পড়েন লিটন দাসের হাতে। ৬২ রানে ৩ বড় ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে বিপদেই পড়ে যায় সফরকারীরা। এরপর মিরাজের প্রিয় শিকার শিমরন হেটমায়ার আজ প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক সাকিবের বলে। অবশ্য মিরাজের বলেই একবার হেটমায়ারকে এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন অভিষিক্ত আম্পায়ার গাজী সোহেল। হেটমায়ার রিভিউ নেন সঙ্গে সঙ্গেই। রিপ্লেতে দেখা যায়, বল লেগেছে ব্যাটে, প্যাডে স্পর্শই করেনি। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের বলেই সাইফউদ্দিনের হাতে ধরা পড়েন ১৭ বলে ১৯ রান করা হেটমায়ার। একই ওভারের শেষ বলে ড্যারেন ব্র্যাভোকে (২) মুস্তাফিজের তালুবন্দি করেন সাকিব। ১০১ রানে ৫ উইকেট হারানো উইন্ডিজের বিপদ আরও বেড়ে যায় অধিনায়ক কার্লস ব্র্যাথওয়েট (৮) সাকিবের চতুর্থ শিকার হলে। সাকিবের বলে দারুণ স্টাম্পিং করেন মুশফিক। বিশ্বসেরা অল-রাউন্ডারের পঞ্চম শিকার হন ফ্যাবিয়ান অ্যালেন (০)। তাকে বোল্ড করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবারের মতো পাঁচ উইকেট নেন সাকিব। ৪ ওভারে খরচ করেন মাত্র ২১ রান! দলের ব্যর্থতার মাঝেও ৩৩ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন রোভম্যান পাওয়েল। ফিফটি করেই তিনি বেদম মার খাওয়া মুস্তাফিজের বলে ধরা পড়েন তামিমের হাতে। কাটার মাস্টারের দ্বিতীয় শিকার হন কিমো পল। ১৬ বলে ২৯ করা এই ব্যাটসম্যান ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানার ওপরে ধরা পড়েন আরিফুলের হকের হাতে। উইন্ডিজের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন মাহমুদউল্লাহ। তার বলে থমাসের (০) স্টাম্প উড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ১৯.২ ওভারে ১৭৫ রানে অল-আউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ৩৬ রানের দারুণ এই জয়ে সিরিজ ১-১ সমতায় এনে ফেলল টিম টাইগার। এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দুই জুনিয়র এবং দুই সিনিয়রের ব্যাটিং তাণ্ডবে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১১ রান তোলে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করে এটাই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টি-টোয়েন্টি স্কোর। বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন লিটন দাস। অন্যপ্রান্তে থাকা দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল আগের ম্যাচের মতোই জীবন পেয়ে কাজে লাগাতে পারেননি। বাঁহাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেন বলটি তামিম উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন কটরেলের হাতে। ভাঙে ৪২ রানের ওপেনিং জুটি। বিধ্বংসী লিটন দাসের সঙ্গী হন সৌম্য সরকার। টাইগারদের রানের গতি যেন আরও বেড়ে যায়। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে বাংলাদেশ তুলেছে ৬১ রান। লিটনের অবদান ১৯ বলে ৪১। ২৬ বলে ৫টি চার এবং ৪টি ছক্কায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। এই উইন্ডিজের বিপক্ষেই সর্বশেষ সিরিজে ২৪ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন লিটন। আজ অপর প্রান্তে জ্বলে ওঠেন সৌম্য সরকারও। উইকেটের চারদিকে দেখা যায় দৃষ্টিনন্দন সব শট। ১০.১ ওভারেই টাইগারদের স্কোর ১০০ ছাড়িয়ে যায়। দারুণ জমে গিয়েছিল দ্বিতীয় উইকেটে সৌম্য-লিটনের জুটি। দলকে এগিয়ে নিতে যা যা করা দরকার সেটাই করছিলেন এই দুজন। মাত্র ৭ ওভারে এসে যায় ৬৮ রান। যাতে সৌম্য সরকারের অবদান ২২ বলে ৩ চার ১ ছক্কায় ৩২। সম্ভাবনাময় ইনিংসটি শেষ হয় কটরেলের বলে পুল করতে গিয়ে ব্র্যাথওয়েটের হাতে ধরা পড়ে। প্রথমে লাফিয়ে উঠে বলটি এক হাতে থামিয়ে দ্বিতীয় দফায় তালুবন্দি করতে সফল হন ৬ ফুট ৩৩ ইঞ্চি উচ্চতার উইন্ডিজ অধিনায়ক। ১১০ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। সৌম্যর বিদায়ের পর লিটনও টিকতে পারেননি। শিকারী সেই কটরেল। একই ওভারে বোল্ড হয়ে শেষ হয় ৩৫ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ৪ ওভার বাউন্ডারিতে গড়া লিটনের ৬০ রানের অসাধারণ ইনিংস। এই দুই ব্যাটসম্যান যখন বিদায় নেন, বাংলাদেশ তখন ১২ ওভারে ৩ উইকেটে ১১৩ রান তুলে ভালো অবস্থানে। থমাসের বলে ছক্কা মারতে গিয়ে ক্যাচ দেন ১ রান করা মুশফিক। অধিনায়ক সাকিবের সঙ্গে হাত খুলে খেলতে শুরু করেন মাহমুদউল্লাহ। লিটন-সৌম্য যে ভিত্তি গড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন, তার ওপর দাঁড়িয়ে তাণ্ডব শুরু করেন সাকিব-রিয়াদ। দুজনের জুটি ছাড়িয়ে যায় পঞ্চাশ। শেষ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ৯১ রান। সাকিব খেলেন ২৬ বলে ৫ চার ১ ছক্কায় অপরাজিত ৪২* রানের বিধ্বংসী ইনিংস। আর মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৪৩ রানে। নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেটে ২১১ রান তোলে টিম টাইগার। এমএ/ ০৯:০০/ ২০ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2R8fu7D
December 21, 2018 at 03:07AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top