আঙ্কারা, ২৫ জানুয়ারি- সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠছে তুরস্ক। দেশটিতে আরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি কিছু প্রকল্প, বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত মান আর তুরস্কের ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অবস্থান মূখ্য ভূমিকা পালন করছে। এশিয়া, ইউরোপ এবং আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থিত এ দেশটি একদিকে যেমন হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য বুকে ধারণ করে আছে তেমনই এর আছে সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়ার উচ্চাভিলাষ। তুর্কির উচ্চশিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১২লাখ বিদেশি ছাত্র আছে। এদের মধ্যে প্রায় সতের হাজার সম্পূর্ণ তুর্কি সরকার প্রদত্ত বৃত্তির আওতায় উচ্চশিক্ষা লাভ করছে। সরকার বিদেশী শিক্ষার্থী সংখ্যা ২০২৩ সালের মধ্যে ৫০ লাখে উন্নীত করার লক্ষ্যে ব্যাপক প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ২০১০ সালে তুর্কিয়ে বুরসলারি নামে নতুন শিক্ষা বৃত্তি চালু করার মাধ্যমে বিদেশি ছাত্রদের জন্য নতুন দ্বার উম্মুক্ত করে দেয়। এই বৃত্তির আওতায় প্রতি বছর প্রায় ছয়-সাত হাজার বিদেশী শিক্ষার্থী পূর্ণ তহবিল বৃত্তিতে পড়ালেখা করার সুযোগ পায়। তুর্কি সরকারের বৃত্তির আওতায় শুধু পাসপোর্ট ও ভিসা খরচ ছাত্রের নিজের পকেট থেকে খরচ করতে হয় বাকি সব ব্যয়ভার তুর্কি সরকার বহন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনাদি, তুর্কিতে থাকা-খাওয়াসহ সব খরচ তুর্কি সরকার বহন করে। বৃত্তি পাওয়ার পর তুরস্কে প্রথম আসা এবং পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার বিমান খরচও দেয় তুর্কি সরকার। এছাড়াও প্রতি মাসে প্রায় ১০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হাত খরচ। এই বৃত্তির আবেদন করা যায় অনলাইনে সম্পূর্ণ বিনা খরচে। তবে আবেদন করলেই যে আপনি বৃত্তি পেয়ে যাবেন তার নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবে না। গত বছর পাঁচ হাজার আসনের বিপরীতে সারা বিশ্ব থেকে আবেদন পড়েছিল প্রায় ১৮ লাখ! সুতরাং এই স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য শুধু ভাল ফলাফলই যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় পুরস্কার, বিতর্ক, রচনা লেখা প্রতিযোগিতা, ক্রীড়া অনুষ্ঠানের পদক ইত্যাদি পাঠ্যক্রম বহির্ভূত কার্যক্রমে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর বাইরেও কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিজয়ীদের নির্ধারণ করে। ইউরোপের দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত দেশ তুরস্কে দিন দিন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ প্রিয় হয়ে উঠছে। ২০০৬ সালে সারা তুর্কিতে মাত্র ২০ জন বাংলাদেশী ছাত্র ছিলেন। ২০১৮ সালে এই সংখ্যা প্রায় ৫০০ ছাড়িয়েছে। আগে শুধুমাত্র রাজধানী আঙ্কারা আর ঐতিহাসিক শহর ইস্তানবুলকেই বেছে নিতেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখন তারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তুরস্কের আনাচে কানাচে। তুরস্কের ৮১ জেলার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এখন বাংলাদেশিদের দেখা যায়। ইস্তানবুল, আঙ্কারা ছাড়াও ইযমির, বুরছা, কোনিয়া, আনতালিয়া, আদানা, কায়ছেরি আবং গাযি আনতেপ এ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের পদচারণা দেখা যায়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আছে ইস্তানবুল ইউনিভের্সিটিতে। তার পরে আঙ্কারার মিডল-ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, এবং তিন নম্বরে আছে আদানা শহরে অবস্থিত চুকুরোভা ইউনিভার্সিটি। আর বেসরকারিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি আছে ইস্তানবুলের ছাবাহাত্তিন যাইম ইউনিভার্সিটিতে। এক সময় বাংলাদেশিরা এখানে শুধুমাত্র প্রকৌশল এবং চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যয়ন করতে আসতো। কিন্তু এখন যুগ পাল্টে গেছে, পরিবর্তন এসেছে মানুষের চিন্তা-চেতনা আর চাহিদায়।এখন বাংলাদেশিরা এখানে সমাজবিদ্যা, লোক প্রসাশন, পর্যটন ও হোটেল ব্যবস্থাপনা, ইসলামিক বিজ্ঞান, অর্থনিতি, ব্যবসা প্রশাসন, বিষয় পড়তে তুরস্কে আসছে। বাংলাদেশিরা অন্যান্য দেশের মতো তুর্কিতেও তাদের সাফল্য দিয়ে দেশের সম্মান উজ্জ্বল করছে। তুর্কিতে পড়াশোনা শেষ করে অনেকেই দেশে ফিরে যাচ্ছে। কেউ ঢাকায় তুর্কি দূতাবাসে কেউ বা বাংলদেশে তুর্কি কোম্পানিতে চাকরি করছে। বাংলাদেশে এখন অসংখ্য তুর্কি কোম্পানি আছে। অনেকে আবার দেশে ফিরে বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানেও কাজ করছে। অনেকে আবার উচ্চতর শিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় ইউরোপ, আমেরিকা বা অন্য কোনো দেশে। অনেকে আবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করার পর তুর্কিতেই থেকে যাচ্ছে। এখানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি এবং মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। সরকারি টিভি টিআরটি, স্বাস্থ মন্ত্রণালয়, পর্যটন শিল্পসহ অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছে বাংলাদেশিরা। এর বাইরেও আছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভাষা শিক্ষা সহ বিভিন্ন কোর্সে খন্ডকালীন শিক্ষকতা। এদেশে বাংলাদেশী-তুর্কি যৌথ পরিবারের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। যারা এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করার পরিকল্পনা করছেন তাদের অনেকেই তুর্কি তরুণী বিয়ে করে দ্বৈত নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন। অনেকে আবার বাংলাদেশী নাগরিকত্বকে বিসর্জন দিয়ে তুর্কির নাগরিক হয়েছেন। এই তো গেল বছরও দু-তিন জন বাংলাদেশি তুর্কি রমণীর সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন। বিয়ে করে অনেকে তুরস্কে আছেন কেউ আবার তুর্কি স্ত্রীসহ পাড়ি দিয়েছেন বাংলাদেশে বা অন্য কোনো ভূমিতে। তারা বাংলাদেশ তুরস্কের মধ্যকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক গণ্ডি থেকে একেবারে ব্যক্তি এবং পারিবারিক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। লেখক: সারওয়ার আলম, ডেপুটি চিফ রিপোর্টার-নিউজ পাবলিশার, আনাদলু এজেন্সি, তুরস্ক এমএ/ ১০:৩৩/ ২৫ জানুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2FO0zKO
January 26, 2019 at 04:42AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন