বিশ্বনাথের হাফেজ নুর মিয়ার জন্মান্ধতা জয়ের গল্প

77-6মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে :: অন্ধ হয়েই পৃথিবীতে এসেছেন তিনি। বোধশক্তি হওয়ার পরই নেমেছেন জন্মান্ধতাকে জয়ের প্রচেষ্টায়। সুদীর্ঘ ২০ বছর প্রচেষ্টা চালিয়ে কিছুটা ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি এতটুকুও। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস ও প্রখর স্মরণশক্তি দিয়ে পরে মাত্র ৪ বছরেই করেন জন্মান্ধতা জয়। হিফজ তকমীল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বনে যান পুরোদস্তুর কোরআনের হাফেজ। শুরু করেন নতুন করে পথচলা। নেমে পড়েন কোরআনের হাফেজ তৈরীতে মহান শিক্ষকতা পেশায়। সেই থেকে প্রায় ২২ বছর ধরে নিয়োজিত আছেন এ পেশায়। নিজ হাতে তৈরী করেছেন বিশের অধিক হাফেজ। পরোক্ষভাবে হাফেজ তৈরী করেছেন তারও অধিক। জন্মান্ধতা জয়ী এই শিক্ষককের নাম হাফেজ নুর মিয়া (৫৩)। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের বাদে কাবিলপুর (ভাটপাড়া) গ্রামের মরহুম লাল মিয়ার জ্যেষ্ঠ পুত্র। ব্যক্তিগত জীবনে নুর মিয়া দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। তারা সকলেই লেখাপড়া করছে।

জানা গেছে, মরহুম লাল মিয়ার চার পুত্র-কন্যার মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান নুর মিয়া অন্ধ হয়েই পৃথিবীতে আসেন। তিনি যখন কিশোর তখন তার চাচার ঘরে খতমে কোরআন পড়তে আসেন স্থানীয় ভুলাগঞ্জ হাফেজিয়া মাদরাসার প্রধান হাফেজ মাহমুদ হোসাইন। নুর মিয়া রাতব্যাপী তার পাশে অবস্থান করেন। কোরআন পাঠের প্রতি তার আগ্রহ দেখে হাফেজ মাহমুদ তাকে তার মাদরাসায় ভর্তি হতে বলেন। এরপরই অই মাদরাসায় ভর্তি হয়ে যান তিনি। সেখানে কিছুদিন কোরআন মুখস্থের প্রচেষ্টা চালিয়ে চলে যান তেলিকোনা আলিম মাদরাসার হাফেজি শাখায়। কিছুটা পারিবারিক স্বচ্ছলতা থাকায় কোরআন মুখস্থের সুবিধার্থে কেনেন টেপ রেকর্ডার। রেকর্ডারের ব্যাটারীর টাকা বাঁচাতে ও বৈদ্যুতিক সুবিধার জন্যে ভর্তি হন রামপাশা হাফেজিয়া মাদরাসায়। দুর্ভাগ্যক্রমে চুরি যায় তার রেকর্ডার। বিঘ্ন ঘটে পড়ায়। এর মধ্যে কেটে যায় প্রায় ২০ বছর। কিছুটা ব্যর্থ হলেও দমে যাননি তিনি। নতুন উদ্যম নিয়ে ভর্তি হন ছাতকের চরমহল্লা ইউনিয়নের কেজাউরা হাফেজিয়া মাদরাসায়।

মাদরাসার তৎকালিন প্রধান হাফেজ কারী ছমির উদ্দিন প্রতিদিন মাগরেবের নামাজের পর থেকে এশার নামাযের পূর্ব পর্যন্ত একাকিত্বে কোরআন পড়ে শুনাতেন নুর মিয়াকে। শুনে শুনে মুখস্থ করতেন তিনি। এভাবে মাত্র ৪ বছরের মাথায় অই মাদরাসা থেকে হিফজ তকমিল পরীক্ষায় অংশ নিয়ে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বনে যান কোরআনের হাফেজ। এর মধ্যে ১৯৯২ সালে কোরআনের ১৫তম পারায় পরীক্ষা দিতে গিয়ে মেধার পরিচয় দেন তিনি। সুলতানুল হুফ্ফাজ কোরআন বোর্ড থেকে লাভ করেন বৃত্তি। হাফেজি শেষ করে নেমে পড়েন শিক্ষকতায়। প্রথমে বিশ্বনাথের রহিমপুর ইয়াকুবিয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় দীর্ঘ ৬ বছর শিক্ষকতা করেন। এরপর নতুন হাবড়া বাজার হাফেজিয়া দাখিল মাদরাসা ও পুরানগাঁও হাফেজিয়া মাদরাসায় কিছুদিন শিক্ষকতা চালিয়ে যান। বর্তমানে দৌলতপুর ইউনিয়নের চড়চন্ডি গ্রামে ভাড়া বাড়িতে সস্ত্রীক বসবাস করে স্থানীয় শাহ মাজদার (র.) ফুরকানিয়া হাফেজিয়া মাদরাসায় সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

কথা হলে জন্মান্ধতা জয়ী হাফেজ নুর মিয়া পরিতৃপ্তির হাসি দিয়ে বলেন, ‘কোরআনের হাফেজ হতে পেরেছি। এক জীবনে এর চে’ বড় পাওয়া আর কি হতে পারে। নিজে যা শিখেছি, তা দিয়ে অন্যকেও আলোকিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ শিক্ষকতা করে যে সামান্য বেতন পান, তা দিয়ে টেনেটুনে সংসার চললেও তাতে কোনো অতৃপ্তি নেই হাফেজ নুর মিয়ার। জানালেন, ‘ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারলেই হল। এছাড়া আরতো কিছু চাওয়ার নেই।’

খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের অহংকার হাফেজ নুর মিয়া যেভাবে লড়াই চালিয়ে জন্মান্ধতাকে জয় করেছেন, তা সকলের জন্যেই অনুপ্রেরণার। তার যেকোনো প্রয়োজনে আমি পাশে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে যাব।’



from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://bit.ly/2T8EWHR

January 22, 2019 at 08:09PM
22 Jan 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top