অটোয়া, ২৩ ফেব্রুয়ারি- বাঙালির আবেগরঙিন একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে কানাডার রাজধানী শহর অটোয়ায় সিটি হলে অনুষ্ঠিত হল বহুবর্ণিল ও বহুজাতিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে চার ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠান। গত ১৬ ফেব্রুয়ারির এই বর্ণিল আয়োজন করে অটোয়ার বাংলা ক্যারাভান ও পিস নামের দুটি সংগঠন। অনুষ্ঠানটিতে নিজস্ব সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য নিয়ে অংশ নেয় অটোয়ায় বসবাসরত নানাভাষী বিভিন্ন জনগোষ্ঠী। পর্বে পর্বে তারা প্রদর্শন করে গান, নৃত্য ইত্যাদি। বিভিন্ন দেশের দর্শকশ্রোতার আগমনে অনুষ্ঠানস্থল মুখরিত থাকে সারাদিন। বেলা ২টায় কানাডার জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এ সঙ্গীত পরিবেশন করে ১১ বছরের ভারতীয় বংশোদ্ভূত কিশোরী আনিশা। প্রথমেই কানাডার আদিবাসীদের একটি ভাবগম্ভীর প্রার্থনাসঙ্গীত, যা ইনুয়িট ভাষায় প্রথাগত মৃদঙ্গ সহযোগে পরিবেশন করেন আদিবাসী আলগনকুইন প্রতিনিধি ডরেন স্টীভেন্স ও আনি সিনাভ। এরপর ৬টা পর্যন্ত অটোয়া সিটিহলে টানা চার ঘণ্টার অনুষ্ঠানে বিশেষভাবে থাকে প্যানেল আলোচনা। অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ভাষাবিদ ও অর্ডার অব কানাডা মেডেলিস্ট শানা পপলাক, আবরার হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল ড. আলি এবং আন্তর্জাতিক ভাষাশিক্ষা অ্যাসোসিয়েশনের ডিরেক্টর কন্সটারটিন ইয়ানিউ প্রমুখ এতে অংশ নেন। আলোচনা পর্বটি সঞ্চালনা করেন অটোয়া সিবিসি নিউজের কো-হোস্ট অ্যাড্রিয়ান হেয়ারউড। আলোচনা অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিষয়ে মাতৃভাষা অমৃতসমান মর্মবাণীর আলোকে জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসীবর্ষ ২০১৯ এবং ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসর স্বীকৃতি প্রস্তাবনা নিয়ে কানাডার সিনেটে আনীত এস-২৪৭ বিলটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মিজানুর রহমান, কানাডার ফেডারেল সংসদ সদস্য চান্দ্রা আরিয়া, ফেডারেল সংসদ সদস্য এন্ড্রো লিজলি, অটোয়া মহানগরের মেয়র জিম ওয়াটসন, অটোয়া সেন্টারের প্রাদেশিক সংসদ সদস্য জুয়েল হার্বার, এমপিপি নাতালি দেরুজে ও কানাডিয়ান কাউন্সিল ফর ইউনেসকোর সেক্রেটারি জেনারেল সিবাস্তিন গোপেল প্রমুখ। বাংলা ক্যারাভান ও পিসর পক্ষ থেকে স্বাগত বক্তব্য দেন ড. মনজুর চৌধুরী। অংশগ্রহণকারী ও অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য দেন বাংলা ক্যারাভানের মমতা দত্ত ও হারুন ম রশীদ। এ পর্ব সঞ্চালনা করেন অটোয়া কার্ল্টন ডিস্ট্রিক্ট স্কুলবোর্ডের শিক্ষক নীরা ডোকিরান ও কার্ল্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি শিক্ষার্থী আকসানা। এছাড়া সামগ্রিক বিষয়ের আলোকে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার অন্টারিও প্রদেশের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ডলি বেগম। অটোয়ায় অভিবাসী বাঙালি জনগোষ্ঠীসহ বিশ্বের নানা দেশের অভিবাসী গোষ্ঠীর কচিকাচাদের অংশগ্রহণে দারুণ উপভোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানটি দর্শকশ্রোতার করতালি ও হর্ষধ্বনিতে মুখরিত হয়। সাংস্কৃতিক পর্বের শেষ গানটি ছিল ইংরেজি ভাষায়, যা পরিবেশন করেন ব্রায়ান লেড্রিগান ও তার পত্নী। এই পর্বটি সঞ্চালনা করেন অদিব বখত ও উজমা খান। শিশুদের চিত্রাঙ্কন, হরেক ভাষার পুথিপুস্তক ও ভাষাবৃক্ষ প্রদর্শন অনুষ্ঠানটিকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে। দর্শকদের বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলেটি নাগরী বা ফুলনাগরী হরফের বাংলার মধ্যযুগের পুথি। পুথিপুস্তক প্রদর্শনীর দায়িত্বে থাকা লেখক মহসীন বখত দর্শকদের জানান, গোটা বিশ্বে কেবল দুটি ভাষা রয়েছে ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা পরিবারে, একটি বাংলা ও অপরটি আইরিশ, যার লেখ্য পদ্ধতির একাধিক বর্ণমালার সন্ধান মেলে। সিলেটি নাগরী বাঙালি ও বাংলা ভাষার গৌরবের আরেকটি দিক। হলঘরের একদিকে নির্মাণ করা হয় হরেক ভাষার বর্ণপত্রে সজ্জিত নয়নশোভন অতিকায় ভাষাবৃক্ষ, যার শাখায় শাখায় পল্লবে ঝুলে থাকে নানাভাষার বাহারি বর্ণ। মূল মঞ্চের একপাশে বসানো ছিল বাঙালির আবেগের শহীদ বেদী, যা নানা দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের নজর কাড়ে। ভাষাবৃক্ষের তলায় ঢালাই বিছানায় ধুম লাগে বাচ্চাদের কিচিরমিচির ও চিত্রাঙ্কনের উৎসবে। ছিল মুখরোচক জলখাবার আয়োজন। অটোয়ায় বিশেষ করে বাংলাদেশি অভিবাসীসহ অনেক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে মুখরিত এই অনুষ্ঠান কানাডার হৃদস্পন্দনে বহুজাতিক বহুভাষিক সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে প্রস্ফুটিত-বিকশিত করতে সহায়তা করবে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন বিজ্ঞজনেরা। বাংলা ক্যারাভান ও পিসর হারুন ম রশীদ, ড. মনজুর চৌধুরী, স্থপতি আনওয়ার খান, মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হোসাইন, ড. প্রণত বড়ুয়া, মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ বখত ময়নু, অধ্যাপক অমিতাভ স্যানাল, লেখক মহসীন বখত, শাহেদা চৌধুরী, সৌরভ বড়ুয়া, গুলজাহার রুমী, মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুল হক, মমতা দত্ত, রিয়াজ জামান, আব্দুল্লাহ আল মামুন, অং সোং থোয়াই, ইয়ানিক কনরাড মুলার ও মুহম্মদ নিজাম উদ্দিন প্রমুখের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় অটোয়ায় এই অনুষ্ঠান হয়। গোটা অনুষ্ঠানের টেকনিক্যাল সাপোর্টে ছিলেন কারিনা কর্মকার। এমএ/ ০৪:২২/ ২৩ ফেব্রুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2ErLtIV
February 23, 2019 at 11:04PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top