কলকাতা, ০৪ ফেব্রুয়ারি- ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রবিবার সন্ধ্যে থেকে ঘটে চলেছে একের পর এক নাটকীয় ঘটনা। সারদা চিটফান্ড মামলায় তদন্ত চালানোর সময়ে কলকাতার লাগোয়া বিধাননগর পুলিশের তৎকালীন কমিশনার, যিনি এখন কলকাতার পুলিশ প্রধান, সেই রাজীব কুমারের সরকারি বাসায় সিবিআই-এর কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য যাওয়ার পরেই এসব ঘটনা ঘটতে থাকে। সারদা চিটফান্ড মামলার তদন্তকারী হিসাবে তিনি যা যা তথ্য প্রমাণ বাজেয়াপ্ত করেছিলেন, সেগুলোর সবকিছু এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে তুলে দেননি মি. কুমার, এমনটাই অভিযোগ সিবিআই-এর। সে বিষয়েই কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়েছিলেন সিবিআই কর্মকর্তারা। কিন্তু পুলিশ কর্মীরা সিবিআই অফিসারদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়, তারপরেই কমিশনারের বাসায় পৌঁছে যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। সেখানে তিনি বৈঠকে বসেন রাজ্য পুলিশের প্রধান, প্রাক্তন প্রধান এবং শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে মমতা ব্যানার্জী বলেন, পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে যাওয়া ভারতের ফেডারেল ব্যবস্থার ওপরেই আঘাত। তিনি নিজের রাজ্যের পুলিশ বাহিনীর পাশে দাঁড়ানোর বার্তা দিয়ে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেখানেই তিনি জানান যে, নিজের বাহিনীর কর্মকর্তার ওপরে কেন্দ্রীয় সরকারের হেনস্থার প্রতিবাদে তিনি শহরের প্রাণ কেন্দ্র ধর্মতলায় অবস্থান কর্মসূচিতে বসেছেন। কিন্তু কে এই রাজীব কুমার - যার জন্য মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত রাস্তায় ধর্ণা দিতে বসে পড়লেন? উত্তরপ্রদেশের আজমগড়ে জন্ম রাজীব কুমারের। দেশের সেরা প্রকৌশল কলেজগুলির অন্যতম কানপুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা আইআইটির ছাত্র ছিলেন মি. কুমার। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক হয়ে তারপরে তিনি সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা দিয়ে ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস বা আইপিএস অফিসার হন ১৯৮৯ সালে। যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারে। পুলিশের কাজে মি. কুমার তার প্রকৌশল বিদ্যা ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর জন্য পরিচিত। একের পর এক তদন্তে তিনি ইলেকট্রনিক সার্ভেল্যান্স চালিয়ে অপরাধীদের ধরতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তিনি পুলিশ মহলে রাফ এন্ড টাফ অফিসার হিসেবে প্রথম নজরে আসেন তখন, যখন ১৯৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে বীরভূমের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কয়লা মাফিয়াদের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযান চালাতেন। চুরির কয়লা ভর্তি ট্রাক ধাওয়া করে ধরার পরে সব চাকার হাওয়া খুলে দিতেন তিনি - যাতে চাকাগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীকালে মি. কুমার কলকাতা পুলিশের উপ-কমিশনার যেমন ছিলেন, তেমনই সিআইডির অপারেশনস প্রধানও ছিলেন। সেই সময়ে কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে লুকিয়ে থাকা একাধিক বাংলাদেশী অপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হন তিনি। বেশ কয়েক বছর আগে নদীয়া জেলায় একটি গির্জার প্রধান, ৮০ বছরেরও বেশী বয়সী এক সন্ন্যাসিনীকে গণধর্ষণে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করেন ইলেক্ট্রনিক সার্ভেল্যান্স চালিয়েই। তার এই যন্ত্রের সাহায্যে নজরদারী নিয়ে মমতা ব্যানার্জী বিরোধী নেত্রী থাকার সময়েও অভিযোগ তুলতেন। মিজ ব্যানার্জী বলেছিলেন মি. রাজীব কুমারই নাকি তার ফোন ট্যাপ করান। তবে সরকার পরিবর্তনের পরে যখন মমতা ব্যানার্জী ক্ষমতায় আসেন, তখন রাজীব কুমার মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের অফিসারদের মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠেন। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের প্রধান থাকাকালীনই ২০১৩ সালে সারদা চিটফান্ড মামলা সামনে আসে। মি. রাজীব কুমারের নেতৃত্বাধীন বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করা হয়। এরপরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার হন রাজীব কুমার। তার কাজকর্মের জন্য একাধিকবার সমালোচিতও হয়েছেন তিনি। নির্বাচন কমিশন তাকে একবার ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছিল পক্ষপাত করতে পারেন, এই আশঙ্কার কথা বলে।ভোট শেষ হতেই যদিও আবার তাকে পুরণো পদে ফিরিয়ে আনা হয়। এমএ/ ০৯:৩৩/ ০৪ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2Sp1FT4
February 05, 2019 at 03:55AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন