কলকাতা, ০৭ ফেব্রুয়ারি- রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মতো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হাজার হাজার মানুষ সারদা, রোজভ্যালিতে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। তিন দিনের টান টান উত্তেজনা। কলকাতার নগরপালের বাড়িতে সিবিআই হানা থেকে শুরু করে ধর্মতলায় মুখ্যমন্ত্রীর ধরনা। যার জেরে দিল্লিতে সু্প্রিম কোর্টে সিবিআই বনাম রাজ্যের আইনি লড়াই। নাটকীয় উপাদানে ভরপুর এই টানাপোড়েনে কোন পক্ষের নৈতিক জয় হলো, তা নিয়ে বিশেষ ভাবিত নন দেবব্রত সরদার, ভোলা প্রামাণিকরা। তাঁরা শুধু বুঝছেন, রাজনীতির এই টানাপোড়েনে বিলম্বিত হচ্ছে চিটফান্ড তদন্ত, কমছে জমানো টাকা ফেরত পাওয়ার আশা। রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মতো দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার হাজার হাজার মানুষ সারদা, রোজভ্যালিতে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। সর্বস্ব হারিয়ে কেউ কোনওক্রমে দিন গুজরান করছেন, কেউ আবার সঞ্চয়ের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়েছেন প্রিয়জনকেও। ক্যানিং-এর বাসিন্দা দেবব্রত সরদার সারদায় টাকা আমানত করেছিলেন। সারদার এজেন্টও হন তিনি। নিজে চার লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করার পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদেরও সারদায় টাকা রাখার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ও তাঁর পরিচিতরা সকলে মিলে প্রায় সতেরো লক্ষ টাকার বেশী খুইয়েছেন এই চিটফান্ডে। কোনও টাকাই ফেরত পাননি কেউ। বর্তমানে দিনমজুরি করে সংসার চালান দেবব্রতবাবু। টাকা খোয়া যাওয়ায় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব অনেকের সঙ্গেই সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে তাঁর। একই অবস্থা বারুইপুরের বলরামপুরের বাসিন্দা ভোলা প্রামাণিকের। তাঁর মা ঊর্মিলা প্রামাণিক সবজি বিক্রি করে জমানো নিজের সমস্ত পুঁজি সারদায় সঞ্চয় করেছিলেন। কিন্তু প্রতারিত হয়ে গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিলেন তিনি। ঊর্মিলাদেবীর একমাত্র সন্তান ভোলা প্রামাণিক বর্তমানে ভ্যান চালিয়ে কোনওক্রমে সংসার চালান। দেবব্রত, ভোলার মতোই দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার হাজার হাজার মানুষ এই চিটফান্ডে টাকা রেখে প্রতারিত হয়েছেন। বহু এজেন্ট এখনও ঘরছাড়া রয়েছেন। অনেকে সমস্ত কিছু বিক্রি করে সর্বস্বান্ত হয়েও আমানতকারীদের টাকা মেটাতে পারেননি। বুধবার বেশ কয়েকটি আমানতকারী পরিবার ও এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে চিটফান্ড কাণ্ডের তদন্তে রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে একরাশ হতাশা প্রকাশ করে ফেললেন অনেকেই। যদিও, মনে একরাশ ক্ষোভ থাকলেও স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ সবাই। চিটফান্ড তদন্ত নিয়ে তিন দিন ধরে চলা টানাপোড়েনের খবর তাঁরাও জানেন। যত সংঘাত তীব্র হয়েছে, তত আশঙ্কাও বেড়েছে তাঁদের। যে সিবিআই তদন্ত টাকা ফেরত পাওয়ার একমাত্র আশা, তাকে ঘিরেই এমন অচলবস্থা তৈরি হলে শেষ আশাটুকুও নষ্ট হয়ে যাবে না তো? দেবব্রত, ভোলারা তাই বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী চাইলে হয়তো আমরা আমাদের সঞ্চিত টাকা ফেরত পাব। এতদিনে পাওয়াও উচিত ছিল। সিবিআই তদন্তই টাকা ফেরত পাওয়ার একমাত্র উপায়। সেই তদন্তটা অন্তত ঠিক মতো হোক। আর/০৮:১৪/০৭ ফেব্রুয়ারি
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2HVk0Dm
February 07, 2019 at 04:57PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন