টরেন্টো, ২৫ ফেব্রুয়ারি- আনন্দ-উচ্ছ্বাস শুধু নয়, একই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধনের ব্যতিক্রমী এক মহড়া দিয়ে টরেন্টোতে উদযাপিত হলো ঢাকা কলেজ সন্ধ্যা ২০১৯। প্রবাস জীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও কলেজের প্রাক্তন ছাত্ররা পরিবার-পরিজন নিয়ে উপভোগ করেছেন দীর্ঘ এ উদযাপনের প্রতিটা মুহূর্ত। স্থান-কাল-পাত্রের বিস্তর ব্যবধান কিছু সময়ের জন্য হলেও ঘুচে গিয়েছিল এ মিলনমেলায়। এ উদযাপনে যেমন সামিল হয়েছিলেনপ্রায় ছয় দশক আগের ১৯৬০ ব্যাচের ছাত্র আসাদুল হাকিম, তেমনি ২০০৯ ব্যাচের ছাত্র ওমর বাবু হাজির হয়েছিলেন দেড় বছর বয়সের সন্তানকে কোলে নিয়ে। মঞ্চে তাঁরা যখন একসাথে, ভৌগলিক ও সময়ের দূরত্বের সাথে আনন্দ উপভোগের নৈকট্য ততক্ষণে মিলেমিশে একাকার! মূল পর্বেও ছিল সেই একইচিত্র। নতুন প্রজন্মের গান দিয়ে ওমর বাবু শুরু করলেও কিছুক্ষণ পর শহীদ খন্দকার টুকু হলভর্তি শ্রোতাদেরকে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েক প্রজন্ম আগের কিশোর কুমার, ভুপেন হাজারিকার সময়ে। আবার এরপরই তরুণ প্রজন্মের প্রিয় সব গান দিয়ে উচ্ছ্বাসে সবাইকে মাতিয়ে তোলেন রিয়াদ মাহমুদ। শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া আনন্দ যজ্ঞ রোববার প্রথম প্রহরে গড়ালেও যেন শেষ হচ্ছিল না! কেননা মঞ্চে তখনো রাজীব হাসান চৌধুরী। বাংলাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঢাকা কলেজ। ১৮৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাবিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তবে টরেন্টো এবং আশেপাশের শহরে বসবাসরত কলেজের প্রাক্তন ছাত্ররা ২৩ ফেব্রুয়ারি টরেন্টোর কেনেডি কনভেনশন সেন্টারে প্রথমবারের মতো একত্রিত হলেন ঢাকা কলেজ সন্ধ্যা ২০১৯ উদযাপনের মধ্য দিয়ে। ঢাকার চকবাজারে গত সপ্তাহের মর্মান্তিক ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন এবং বাংলাদেশ ও কানাডার জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে, কলেজের প্রাক্তন ছাত্র ও বিশিষ্ট লেখক তাজ হাশমী একুশে ফেব্রুয়ারির সংক্ষিপ্ত পটভূমি তুলে ধরেন। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে ১৯৭২ ব্যাচের ছাত্র সামসুল আলম, ১৯৬৬ ব্যাচের তাজ হাশমী ছাড়াও শহীদ খন্দকার টুকু, মনির ইসলাম কলেজে ছাত্র থাকাকালীন সময়ের বিভিন্ন ঘটনার স্মৃতিচারণ করেন। আয়োজকদের পক্ষে শহীদ খন্দকার টুকু কলেজের প্রাক্তন ছাত্রদের এ পরিবারের মাধ্যমে আগামীতে আরো ভালো কিছু করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। মনির ইসলাম আগামী গ্রীষ্মে আরো আকর্ষণীয় অনুষ্ঠান আয়োজনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। সামসুল আলম বলেন, কলেজের ছাত্র হিসেবে আমি আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ, আলাউদ্দিন আল আজাদ, শওকত ওসমানের মতো গুণী মানুষদের সংস্পর্শে আসতে পেরেছিলাম যা আমার জীবনের অন্যতম বড় পাওয়া। প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ কতটা আবেগ প্রবণ হয়ে পড়েছিলেন তার কিছুটা উঠে এসেছে অংশগ্রহণকারী কয়েকজনের প্রতিক্রিয়ায়। রাজীব হাসান চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, গানের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি সবাইকে নিয়ে আবারও সেই সময়ে ফিরে যেতে। হয়তো পেরেছি। হয়তো পারিনি। কিন্তু খুব সুন্দর একটা সময় কেটেছে। আবার দেখা হবার অপেক্ষায় থাকলাম। কলেজ জীবনের স্মৃতি রোমন্থন করে তিনি বলেন, অনেক অনেকদিনপর, কলেজেরক্যান্টিন, পুকুরপাড়, মাঠ, গ্যালারি ক্লাসরুমের কথা মনে পড়ে গেলো। মনে আছে, ঢাকা কলেজের অডিটোরিয়ামে আজম খানের কন্সার্টের কথা। জেমসের কন্সার্ট হয়েছিল মাঠে। গানের মাঝখানে বৃষ্টি নামলো, জেমস থামলনা। গান চালিয়ে গেলো।আহ স্মৃতি! কত কত স্মৃতি। রিয়াদ মাহমুদ তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এ উদযাপনে অংশনিতে পেরে খুব ভালো লেগেছে। আসলে আমি ফিরে গিয়েছিলাম সেই সময়ে অর্থাৎ ১৯৮৯-১৯৯১ সালে। অসংখ্য স্মৃতি...আহ...সেই সময়টা যদি আবারও ফিরে পেতাম। কলেজের ১৯৮১ ব্যাচের ছাত্র পিয়ার আহমেদ ভুঁইয়া জানালেন, পাশ করে বের হবার পর সেই আশির দশকে একবার এ ধরণের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ বিরতি দিয়ে টরেন্টোতে আয়োজিত প্রাক্তন ছাত্রদের এ অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে খুব ভালো লেগেছে। অনুষ্ঠানের লক্ষ্য বড়দের সন্মেলন হলেও ছোটদের জন্য আয়োজনের ঘাটতি ছিল না। ছোটদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ ছিল যাদু প্রদর্শনী। দান্তে দ্য ম্যাজিশিয়ান যাদু প্রদর্শনীর মাধ্যমে শিশুদেরকে দীর্ঘক্ষণ মাতিয়ে রাখাহয়। এছাড়া, রোলার স্কেটিং কোচ শেখ আনোয়ার হোসেন বিভিন্ন কলাকৌশল দেখিয়ে এ সম্পর্কে শিশুদের মনোযোগ আকর্ষণ করেন। জাহিদুল ইসলাম মোল্লা তুষার এবং সাজ্জাদুর রহমানযৌথভাবে অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন। র্যাফেল ড্রর পর পুরানো সেই দিনের কথা গানটি সমবেতভাবে গাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ দিনের বহুজনের কাঙ্ক্ষিত এ মিলন মেলার। মর্টগেজ এজেন্ট মোঃআব্দুর রহিম, ব্যারিস্টার সাকিব আলম, মর্টগেজ এজেন্ট আসিফ চৌধুরী, রিয়েল্টর মোহাম্মদ দোজা, চিকিৎসক মোঃহাফিজ উদ্দিন এবং টরেন্টোতে বাংলাদেশী পোশাকের অন্যতম ব্রিক্রেতা প্রতষ্ঠিান ডভিাইনড্রসে এর সত্ত্বাধিকারী মোঃ এরশাদ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2EyfCqd
February 26, 2019 at 05:23AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top