মো. আবুল কাশেম, বিশ্বনাথ (সিলেট) থেকে :: ছিল ৩১ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সম্প্রতি উন্নীত হয়েছে ৫০ শয্যায়। স্থাপিত হয়েছে নতুন ভবন। কিন্তু এতদিন পরেও নানা কারণে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনে শুরু হয়নি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। পুরনো ভবনে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে সেবা দেয়া হচ্ছে রোগীদের। চিকিৎসক ও ঔষধ সংকটের কারণে সেটাও অনেকটা মানহীন, দায়সারা। মানহীন রোগীদের দেয়া খাবারদাবারও। রয়েছে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ, দালাল ও ভুয়া রোগীদের উৎপাত। এসব নানা কারণে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই উপজেলাবাসীর। ইতিপূর্বে মেয়াদ উত্তীর্ণসহ অবাধে সরকারী ঔষধ বিক্রি, ডাক্তারের বদলে নার্সের রোগী দেখা, ওয়ার্ডের ভেতর বহিরাগতদের জাল বোনা, স্থানীয় বখাটেদের দ্বারা মহিলা রোগীদেরকে ইভটিজিংসহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও নানা সমস্যা নিয়ে গণমাধ্যমে অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তেমন কোনো পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি।
জানা গেছে, বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষ বছরে ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয় বিশ্বনাথ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। অই বছরের ৩০ জানুয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেট সফরকালে ৫০ শয্যায় উন্নীত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন। এটি নির্মিত হলেও তাতে এখনও শুরু হয়নি চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। কমপ্লেক্সে ১৫৪টি পদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ৪৪টি পদশূন্য রয়েছে। দীর্ঘদিন এসব শূন্য পদের বিপরীতে জনবল সঙ্কট থাকায় চিকিৎসা সেবাসহ দাফতরিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে খাতাকলমে ৭জন চিকিৎসক থাকলেও হাসপাতালে উপস্থিত হন ৫জন। অনেক সময় চিকিৎসকের অভাব এবং অনুপস্থিতির কারণে নার্স-আয়ারা লেগে যান রোগীদের চিকিৎসা সেবায়। জনবল সংকটের কারণে পুরো কমপ্লেক্স জুড়ে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ লেগেই থাকে। তাতে করে রোগ সারাতে এসে উল্টো আশংকা তৈরী হয় রোগাক্রান্ত হওয়ার। ওয়ার্ডগুলোর বিছানাপত্র যেমন অপরিচ্ছন্ন থাকে, তেমনি সেখানে ভর্তি হওয়া রোগীদের জন্যে জুটে মানহীন খাবার।
সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঘুরে দেখলে চোখে পড়ে নানা সমস্যা। নানা অভিযোগ মেলে রোগীসহ এলাকাবাসীর। দেখা যায়, কমপ্লেক্সে মহিলা ও শিশু রোগীর সংখ্যা অত্যধিক। পুরুষ রোগীদের বহিঃর্বিভাগ খালি থাকলেও একজন চিকিৎসক পুরষ-মহিলা রোগী দেখছেন জরুরী বিভাগে। আরেকজন চিকিৎসক মহিলা বহিঃর্বিভাগে দেখছেন মহিলা ও শিশুদের। দুটি বিভাগের বাহিরে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভ, দালাল ও ভুয়া রোগীদের উৎপাত লেগেই আছে। রোগীদেরকে যে সকল ঔধষ লিখে দিচ্ছেন চিকিৎসক, সেগুলোর অনেকগুলো মিলছে না স্টোরে। এর মধ্যে চেরাগ আলী নামে একজন স্থানীয় লোক এ প্রতিবেদকের সামনেই স্লিপ ছাড়াই নিয়ে যান একগাদা ঔধষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রোগী জানান, ডাক্তাররা উপজেলা সদরের চেম্বারে যাওয়ার জন্যে তাড়াহুড়ো করে রোগী দেখেন। যে ঔষধ লিখে দেন, তার অনেকগুলোই বাইরে থেকে আনতে হয়।
এ প্রতিবেদক কমপ্লেক্সের দু’তলায় পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গেলে শুধুই মহিলা ওয়ার্ডে একজন পুুরুষ ও একটি শিশু রোগীর দেখা পান। পুরুষ রোগী জানান, তিনি ভর্তি হতে এসেছেন। আপাতত তাকে এখানে রাখা হয়েছে। শিশু রোগীর পিতা উপজেলার কাটলীপাড়া গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তার মেয়েকে নিয়ে তিনদিন ধরে এখানে আছেন। রাতে যে খাবার দেয়া হয় সেগুলো খুবই মানহীন, অখাদ্য। দিনের বেলায় চেয়ে নিয়ে আসতে হয় খাবার। তিনি আরও জানান, তিনদিন ধরে এক বিছানার কাপড়ের মধ্যে রাখা হয়েছে তার মেয়েকে। এটি বদল করে নতুন বিছানার কাপড় দিতে বললেও কেউ তাতে ভ্রুক্ষেপ করে না।
এ ব্যাপারে কথা বলতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুর রহমানের কক্ষে গেলে ফাঁকা মেলে সেটি। জানানো হয়, তিনি দু’দিনের ছুটিতে গেছেন। ফোনে কথা কথা হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবার মান আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে এবং আগের তুলনায় কমপ্লেক্সটি অনেক পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন দাবী করে ডা. রহমান বলেন, এটি ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণে নতুন যে ভবন নির্মাণ হয়েছে, সেটির অনুমোদন এখনও দেয়া হয়নি। সরকার থেকে এখানে যে ঔষধ সাপ্লাই দেয়া হয়, এই ঔষধের পাশাপাশি রোগীদের প্রয়োজনে অনেক সময় চিকিৎসকরা তার বাইরেও ঔষধ লিখে দেন। যার ফলে সেটা বাইরে থেকে আনতে হয়। সরকার থেকে সাপ্লাই দেয়া কোনো ঔষধের সংকট এখানে নেই। বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টিভদের অনেক আগেই বলে দেয়া হয়েছে, তারা যেন প্রতি রবি ও বুধবার দুপুর ১২টার পরে আসেন। তাদেরকে দুপুরের আগেই পাওয়া গেল-
প্রতিবেদকের এই কথার জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখব। দালাল ও ভুয়া রোগীদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. রহমান বলেন, এরা রোগী হিসেবে আসে হেতু আমাদের কিছু বলার থাকে না। আর রোগীদের খাবারের ব্যাপারটা কন্ট্রাক্টরই ভালো বলতে পারবেন। তবে, বিছানা যে প্রতিদিন পাল্টাতে হবে এমন কোনো কথা নেই। যদি ময়লা হয়, তাহলে অবশ্যই পাল্টে দেয়া হয়।
from সিলেট – দ্যা গ্লোবাল নিউজ ২৪ http://bit.ly/2Bh5i3H
February 02, 2019 at 05:49PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন