কলকাতা, ১৫ ফেব্রুয়ারি- বছর দুয়েক আগের কথা৷ স্পিড পোস্টে একটি চিঠি পেয়েছিলেন হাওড়া স্টেশনের রেল কর্তারা৷ তাতে স্পষ্ট হুমকি ছিল নাশকতা ঘটানো হবে পূর্ব ভারতের তথা দেশের অন্যতম স্টেশনে৷ আত্মঘাতী হামলার সেই হুমকির জেরে টানা কয়েকদিন ছিল নিরাপত্তার প্রবল কড়াকড়ি৷ কারণ হুমকি দিয়েছে জইশ ই মহম্মদ৷ পাকিস্তান থেকে পরিচালিত এই সংগঠনটির আরও এক বড় ঘাঁটি বাংলাদেশের সৈকত শহর কক্সবাজার এলাকা৷ অধিকৃত কাশ্মীর ও পাক পাঞ্জাব প্রদেশের মূল ঘাঁটি থেকেই পরিচালিত হয় জইশ ই মহম্মদ৷ বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এমনও দাবি করে, জঙ্গি সংগঠনটির সুপ্রিম কমান্ডার মাসুদ আজহারকে প্রোটেশকন দেয় খোদ পাক সেনা৷ তাকে বহাল তবিয়তে রাখা হয় রাওয়ালপিন্ডিতে৷ এমনই জঙ্গি নেতার নির্দেশে জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সেনাবাহিনীর কনভয়ে ভয়াবহ হামলা হয়েছে৷ জইশের পূর্বাঞ্চল ঘাঁটি: শুধু পাকিস্তান সীমান্তবর্তী জম্মু-কাশ্মীর বা পাঞ্জাব রাজ্যটি নয় জইশ ই মহম্মদ গত কয়েক বছরে রীতিমতো সক্রিয় বাংলাদেশে৷ আর পশ্চিমবঙ্গ সংলগ্ন প্রতিবেশী এই রাষ্ট্রের অন্যতম সৈকত শহর কক্সবাজার হল জইশ জঙ্গিদের ঘাঁটি৷ বঙ্গোপসাগরের তীরে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন কক্সবাজার আবার মায়ানমার লাগোয়া৷ সেই দেশটির রাখাইন প্রদেশ (পুরনো আরাকান) জুড়ে আইএসআই যে নাশকতার জাল বিছিয়েছে তাকেই বাস্তবে রূপ দিতে চায় জইশ জঙ্গিরা৷ বাংলাদেশের গোয়েন্দা বিভাগের কাছে এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য এসেছে৷ কক্সবাজারকে কেন্দ্র করে জইশ জঙ্গিদের কর্ম তৎপরতা নিয়ে এই রিপোর্টে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে৷ বাংলাদেশ গোয়েন্দা বিভাগের দাবি, পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ ই মহম্মদ রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে৷ পাকিস্তান থেকে এই কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে সংগঠনটির অন্যতম নেতা এক মৌলানা৷ সেই ব্যক্তির নাম সাবের৷ একসময় কক্সবাজারে থাকা সাবের এই এলাকা সম্পর্কে অবহিত৷ তাকে দিয়েই সংগঠন ছড়াচ্ছে আইএসআই৷ এই নেটওয়ার্কের কিছু জঙ্গিকে গ্রেফতারের পর বাংলাদেশ সরকারের নজরে আসে জইশ জঙ্গিদের বিষয়টি৷ জইশের পরিকল্পনা: ১. চট্টগ্রাম ও রাখাইন প্রদেশ জুড়ে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন৷ অনেকটা ইসলামিক স্টেটের কায়দায় সেই রাষ্ট্র পরিচালিত হবে৷ বাংলাদেশ জঙ্গি দমন শাখা (সিটিটিসি) এই সংক্রান্ত কিছু তথ্য পেয়েছে৷ ২.জইশের টার্গেট কলকাতা মহানগরী ও হাওড়া স্টেশন৷ নিরাপত্তার ঢিলেমির অভিযোগ থাকে কলকাতার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায়৷ মেট্রো স্টেশনগুলি ও হাওড়াতেও সেই ঢিলেমি দেখা যায়৷ জঙ্গি সংগঠনগুলির কাছে সেটাই বড় পাওনা৷ রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি: মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশটি জাতিগত সংঘর্ষে রক্তাক্ত৷ এখানকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের সঙ্গে বৌদ্ধ গোষ্ঠীর সরাসরি সংঘর্ষ হয়৷ দু পক্ষই তাদের সশস্ত্র বাহিনী ব্যবহার করে৷ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) আর বৌদ্ধদের সংগঠন আরাকান আর্মির মধ্যে সংঘর্ষের মদত দিচ্ছে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠী৷ গত বছর একটি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে মায়ানমার সরকারের সেনা অভিযান ঘিরে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন চট্টগ্রামে৷ সেখানকার রোহিঙ্গা শিবিরেই ছড়িয়ে পড়েছে জইশ ই মহম্মদের রিক্রুটাররা৷ গোয়েন্দা রিপোর্টে উঠে এসেছে এই তথ্য৷ ছড়িয়েছে জঙ্গি জাল: বাংলাদেশের মাটিতে জঙ্গি তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না৷ এমনই বার্তা বারে বারে দেন এই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ঢাকায় ভয়াবহ গুলশন হামলার পর হাসিনা সরকারে যেভাবে জঙ্গি দমন অভিযান শুরু করে তাতে অনেকটাই ব্যাকফুটে নব্য জামাত উল মুজাহিদিন জঙ্গিরা৷ তবে তাদের পুরনো শাখাটি পশ্চিমবঙ্গেও বেশ সক্রিয়৷ গোয়েন্দা বিভাগের আশঙ্কা, পুরনো জেএমবি-কে দিয়েই নাশকতার ছকটি কার্যকর করতে পারে জইশ ও আল কায়েদা৷ উগ্র ধর্মান্ধতার মোড়কে আইএসের মতো সংগঠনও ছড়িয়েছে৷ তারও তৎপর৷ মূলত বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি কার্যকলাপ ছড়িয়ে দিতে তারা তৈরি হচ্ছে৷ এই কাজে সংযুক্ত আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি), হিজবুত তাহরীরের মতো সংগঠনও৷
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2UUVyDq
February 15, 2019 at 11:22PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন