কুমারগ্রাম ও কামাখ্যাগুড়ি, ১ মার্চঃ জন্ম সম্বন্ধীয় বংশগত রোগ থ্যালাসেমিয়া দূর করতে উদ্যোগী হল কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার। সম্প্রতি যৌথ উদ্যোগে আলিপুরদুয়ার জেলার বিভিন্ন স্কুলে তপশিলি উপজাতির ছাত্রছাত্রীদের রক্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে।
জন্ম সম্বন্ধীয় সমস্যা রয়েছে, নির্ধারিত জনজাতির এমন পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর বিশেষ দল তৈরি করেছে। তারা বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে রক্ত সংগ্রহ করছে। জানা গিয়েছে, ওই রক্ত পরীক্ষার পর সমস্যা ধরা পড়লে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার চিকিৎসা করানো হবে। জেনেটিক প্রবলেম সমূলে উৎখাত করতে তাদের বাড়িতে গিয়ে বাবা-মাকেও এ ব্যাপারে সচেতন করা হবে। বিয়ের সময় এ ব্যাপারে বিশেষ নজর দেওয়া হলে থ্যালাসেমিয়া রোগ সমূলে উৎখাত করা সম্ভব বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। এ ব্যাপারে আলিপুরদুয়ার জেলার মুখ্যস্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ পূরণ শর্মা জানান, এটা কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের রুটিন প্রোগ্রাম। সমস্ত স্কুল এবং কলেজে তপশিলি উপজাতিভুক্ত ছাত্রছাত্রীদের থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে স্কুলগুলিতে রক্তের নমুনা সংগ্রহের কাজ চলছে। পরবর্তীতে সমস্ত স্কুল-কলেজের পড়ুয়াদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, হিমোগ্লোবিন সংশ্লেষণে গলদ থাকলে থ্যালাসেমিয়া রোগ হয়া। সচেতন না হলে বংশানুক্রমে জন্ম সম্বন্ধীয় এই রোগ ছড়ায়। আলিপুরদুয়ারে এই রোগের প্রভাব অনেকটাই বেশি। এ প্রসঙ্গে কুমারগ্রাম বালিকা বিদ্যালয়ের (উচ্চতর) প্রধান শিক্ষিকা সুচিস্মিতা উকিল ঘোষ বলেন, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সেইমতো আমরা বিদ্যালয়ে তপশিলি উপজাতিভুক্ত পড়ুয়াদের সচেতন করেছি। রোগমুক্ত সুস্থ জীবনযাপনের লক্ষ্যে তারাও রক্ত দিতে আগ্রহী।
জলনেশ্বরী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সিরূপ বসুমাতা বলেন, থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিংযে বিষয়টি জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে। এরপর আমরা ছাত্রদের এ ব্যাপারে সচেতন করি। সম্প্রতি একটি শিবির হয়েছে। সেখানে পড়ুয়াদের ভালো সাড়া মিলেছে। বাদবাকি ছাত্রদের রক্তের নমুনা সংগ্রহের জন্য আরও একদিন শিবির হবে। মদন সিং উচ্চবিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বপন চক্রবর্তীর বক্তব্য, জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের চিঠি পেয়েছি। থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ে মধ্যে নানা ধরনের জেনেটিক প্রবলেম অধিকমাত্রায় লক্ষ করা গিয়েছে। এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা হয়েছে। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিং শিবির হবে।
জলনেশ্বরী হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অভিষেক মোছারি, দশম শ্রেণির ছাত্র প্রণয় মোছারি সহ অন্যরা জানিয়েছে, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও বলেছেন রক্ত পরীক্ষা করলে ভবিষ্যৎ সুন্দর হবে। থ্যালাসেমিযার প্রবণতা থাকলে সরকারিভাবে প্রযোজনীয় পরামর্শ দেবে এবং চিকিৎসা করাবে। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের এমন উদ্যোগে তাঁরা খুশি। আদর্শ হিন্দি হাইস্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানান, বিদ্যালয়ে অধিকাংশ পড়ুয়া তপশিলি উপজাতিভুক্ত। ফলে এটা থ্যালাসেমিয়া রোগ নির্মূলে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বড়ো পদক্ষেপ। কয়েক দিন আগেই বিদ্যালয়ে এ ব্যাপারে শিবির হয়েছে। পড়ুয়ারাও সচেতনভাবে এগিয়ে এসেছে। সমস্ত স্কুল পড়ুয়ার রক্তের নমুনা সংগ্রহের লক্ষ্যে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের সহযোগিতায় বুধবার দ্বিতীয় শিবিরটি হয়।
আলিপুরদুয়ার জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তপশিলি উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রবণতা অধিকমাত্রায় লক্ষ্য করা যায়। এই রোগ প্রতিরোধে প্রথম পর্যায়ে জেলাজুড়ে বিভিন্ন স্কুলের পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ার রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। থ্যালাসেমিয়া রোগের প্রবণতা রয়েছে এমন পড়ুয়াদের চিহ্নিত করে প্রযোজনীয় চিকিৎসা হবে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সচেতন করা হবে। পরবর্তীতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদেরও থ্যালাসেমিয়া স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনা হবে। জলনেশ্বরী হাইস্কুল, আদর্শ হিন্দি হাইস্কুল, মারাখাতা জেটমল হাইস্কুল সহ বেশকিছু বিদ্যালয়ে পড়ুয়াদের রক্তের নমুনা সংগ্রহে শিবির হয়েছে। থ্যালাসেমিয়া নির্মূল করতে ধাপে ধাপে এই শিবির হবে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2IJgBI4
March 01, 2019 at 03:46PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন