মিশিগান, ২৯ মার্চ- জেনারেল মোটরস (জিএম) যুক্তরাষ্ট্রের হ্যামট্র্যামক শহরে থাকা কারখানা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ায় চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তিরা। গাড়ি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটির এই ঘোষণা তাদের জন্য অনেক বড় এক ধাক্কা। বছরের পর বছর ধরে তারা এই ছোট্ট শহরটাকে নিজেদের বাসস্থান হিসেবে গড়ে তুলেছেন। খুব বেশি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি জেনারেল মোটরসের সংশ্লিষ্ট কারখানায় সরাসরি কর্মরত না থাকলেও, সেখানে ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ও অন্যান্য জিনিস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। কারখানা বন্ধের ঘোষণায় চিন্তিত হয়ে পড়েছেন অন্য আরও অনেকের মতো খাবার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিরা। জেনারেল মোটরসের অনেক কর্মী যেতেন হ্যামট্র্যাকের আলাদিন ক্যাফেতে। এর মালিক মোহাম্মদ উদ্দিন টিপু। কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, দুপুরের খাবারে বুফে খুবই জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু এখনই এর চাহিদা প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে।শুধু দুপুর ও রাতের খাবারের জন্যই যে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ভিড় হতো তা-ই নয়, কারখানায় খাবারের দরকার হলে তাও সরবরাহ করতেন তিনি। জেনারেল মোটরস হ্যামট্র্যামক থেকে চলে গেলে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে বড় ব্যবসায়িক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন টিপু। হ্যামট্র্যামক যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েটের কাছে থাকা একটি ছোট শহর। বাসিন্দাদের অধিকাংশই মুসলিম এবং প্রায় ৪৫ শতাংশই অভিবাসী। এদের প্রায় এক চতুর্থাংশ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। বাংলাদেশিদের অনেকেই হ্যামট্র্যামকে বসতি গড়েছেন সেখানকার কম জীবনযাপন ব্যয়, বাসস্থানের জন্য বড় জায়গার প্রাপ্যতা, ছোট ছোট কারখানায় কাজ করার সুযোগ এবং মেট্রো ডেট্রয়েটে বড় মুসলিম জনসংখ্যার উপস্থিতির জন্য। হ্যামট্র্যামক শহরে অনেক দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসীরা। তাদের কারণে শহরটির একটি অংশের নাম বাংলা টাউন। হ্যামট্র্যামকের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আনাম মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, জেনারেল মোটরস শহরটির সবচেয়ে বড় করদাতা। প্রতিষ্ঠানটি যদি তাদের কারখানা বন্ধ করে দেয় তাহলে অর্থায়নের অভাবে বহু নাগরিক সুবিধা বিঘ্নিত হবে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আনাম মিয়া আরও বলেছেন, কারখানা বন্ধের ঘোষণায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা সত্য। শহর কর্তৃপক্ষ অর্থায়নের জন্য কারখানার স্থানে নতুন কিছু করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করছে। তার ভাষ্য, স্থানীয়দের চাকরি পাওয়ার বড় ক্ষেত্রগুলোর একটি জিএম এবং তারা প্রতি বছর ১০ লাখ ডলার করে করে কর দিত। এই ক্ষতি অনেক বড়। ২০১৫ সালের একটি গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাড়ি শিল্পে প্রতি একজন কর্মীর নিয়োগ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ছয়জনের কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে। কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে তার উল্টো প্রভাব পড়বে। জিএমের সংশ্লিষ্ট কারখানাটি ২০১০ সালে উৎপাদনে ফিরে প্রশংসা কুড়িয়েছিল। কিন্তু এই কারখানায় যে হাইব্রিড মডেলের গাড়ি তৈরি হতো তা তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। জিএম প্রথমে ২০১৯ সালের জুনে কারখানাটি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল। সময় বর্ধিত করে পরে তা ডিসেম্বরে কার্যকরের কথা জানানো হয়। করণীয় নির্ধারণে কাউন্সিল মেম্বারদের সঙ্গে স্থানীয়দের বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা জানিয়ে কাবাব হাউস নামের রেস্টুরেন্টের মালিক সেলিম আহমেদ বলেছেন, আমাদের বিকল্প কোনও কিছুর কথা ভাবতে হবে। তা না হলে টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতরা অনেক খাবারের প্রতিষ্ঠান চালান, যাদের মূল ক্রেতাই জিএম। তাদের ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনও গতি থাকবে না। আর/০৮:১৪/২৯ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2uwqa3f
March 30, 2019 at 04:39AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন