ফর্ম ছাপিয়ে হকারদের থেকে মুচলেকা শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে

ভাস্কর বাগচী, শিলিগুড়ি, ১৮ মার্চঃ শহরের ফুটপাথ দখল হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু সেই ফুটপাথ দখল করাকে এবার যেন স্বীকৃতি দিল ওয়ার্ড কমিটি, স্থানীয় ব্যবসায়ী সমিতি। ফর্ম ছাপিয়ে ফুটপাথ ব্যবসাযীদের জীবনপঞ্জি নেওয়া হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীদের মুচলেকা দিতে হয়েছে, কোনো অনিয়ম হলে ব্যবসায়ী সমিতি সেখান থেকে সেই ব্যবসায়ীকে সরিয়ে দিতে পারে। বিষয়টি জানাজানি হতেই শিলিগুড়ির শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে শুরু হয় গুঞ্জন।

রবিবার মার্কেটের প্রায় সব দোকানপাটই বন্ধ থাকে। ফলে প্রতিটি দোকানের সামনেই ডালা পেতে বসে যান ফুটপাথ ব্যবসায়ীরা। আগে তাঁরা মাঝেমধ্যে বসলেও ফর্ম পূরণ করার পর থেকে রীতিমতো মেলা বসেছে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে। অভিযোগ, প্রতি রবিবার প্রায় ৪৫০ জনের কাছ থেকে ডালাপ্রতি ৫০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যে ফর্ম ওই ব্যবসায়ীদের দেওয়ি হচ্ছে, সেখানে শুধুমাত্র শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিই নয়, ১১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটি ও হংকং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে।

পুরো বিষযটিতে ক্ষুব্ধ শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। কারণ, ছুটির দিনে ফুটপাথের ব্যবসায়ীরা তাঁদের দোকানের সামনে ডালা বসালেও তা নিয়মিত ছিল না। কিন্তু এখন যদি ব্যবসায়ী সমিতি ও ওয়ার্ড কমিটি ডালা বসানোর স্বীকৃতি দেয়, তবে ভবিষ্যতে দোকানের সামনে হয়তো প্রতিদিনই ডালা বসাতে চাইবে বলে আশঙ্কা দোকান মালিকদের। মার্কেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ফর্মের উপর যে রেজিস্ট্রেশন নম্বর রয়েছে তা ব্যবসায়ী সমিতির। সেই কারণেই বিষযটি নিয়ে কিছুটা আতঙ্কিত দোকানদাররা। শেঠ শ্রীলাল মার্কেটের ব্যবসায়ী প্রাণ বণিক বলেন, ডালা নিয়ে আগেও এখানে বসতেন অনেকে। কিন্তু হঠাৎ দেখি অনেকের ফর্ম পূরণ হয়েছে। কোথা থেকে ফর্ম এল, কে ফর্ম দিল, কিছুই জানি না।

আরেক ব্যবসায়ী অর্জুন গুপ্তা বলেন, আমরা সপ্তাহে ৬ দিন দোকান করি। একদিন বন্ধ রাখি। রবিবার ফুটপাথের দোকানদাররা আমাদের দোকানের সামনে ব্যবসা করেন। আমরা কিন্তু কোনো দিন বারণ করিনি। এখন আমরা দেখছি ওনারা একটা ফর্ম দেখাচ্ছেন যেখানে ওয়ার্ড কমিটি, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি, হংকং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, ফোন নম্বর দেওয়া আছে। ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের নাম, আধার নম্বর, কোন দোকানের সামনে বসা হয়, সেই সবও লেখা থাকছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ওনাদের নাকি বলা হয়েছে স্থাযীভাবে তাঁদের বসিয়ে দেওয়া হবে। তাই যদি হয়, তাহলে আমরা তো বিপদে পড়ে যাব। আমরা ব্যবসা করব কী করে?

যদিও ফর্ম দেওযা নিয়ে শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক খোকন ভট্টাচার্য ও ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মঞ্জুশ্রী পালের কথায় কোনো মিল নেই। খোকনবাবু বলেন, মাস ছয়েক আগে ওয়ার্ড কমিটির উপস্থিতিতে একটি মিটিং হয়। সেই মিটিংয়ে শেঠ শ্রীলাল মার্কেটে কতজন ফুটপাথ ব্যবসায়ী আছেন, তা জানার জন্য ফর্ম দেওয়া হয। প্রত্যেকের থেকে সেই ফর্ম নিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমরা বলে দিয়েছি, এর বাইরে কোনো হকার সেখানে বসতে পারবেন না। কিন্তু এতদিন পর আবার ফর্ম কোথা থেকে এল তা জানি না। আমরা কোনো ফুটপাথ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনো টাকা নিই না। আমি কলকাতায় আছি। ফিরে গিয়ে পুলিশে এফআইআর করব। যাতে উপযুক্ত তদন্ত করা হয়।

এদিকে, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মঞ্জুশ্রী পাল বলেন, শেঠ শ্রীলাল মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতি ও হংকং মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে ছয়মাস আগে আমরা মিটিং করেছিলাম। সেই মিটিংযে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ফুটপাথে কে বা কারা বসছে তা চিহ্নিত করা হবে। ফর্মের ব্যাপারে কোনো কথাই হয়নি। এখন কীভাবে ফর্ম বিলি হচ্ছে জানি না। আমরা পরে দেখছি কী করা যায়।



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2ucnwiT

March 18, 2019 at 02:41PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top