কলকাতা, ২৫ মার্চ- নির্বাচনে ঝুঁকি নিয়ে বাজিমাত করার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জির পরিচিতি কারও অজানা নয়। রাজ্যে নিজের দলের জয় সুনিশ্চিত রাখতে একদিকে যেমন পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদদের জায়গা দিয়েছেন তেমনি যুব সমাজের মন বুঝে গ্ল্যামারের জগতের ওপরও ভরসা রেখেছেন মমতা। নির্বানী তালিকায় টালিউড ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে ফের পাঁচজন তারকাকে টিকিট দিয়েছেন মমতা। ২০১৪ সালের নির্বাচনে টালিগঞ্জের পাঁচ তারকাকে প্রার্থী করে পাঁচ জনকেই জিতিয়ে এনে ছিলেন মমতা। এরমধ্যে মুনমুন সেন, শতাব্দী রায় এবং দীপক অধিকারীকে (দেব) এবারও প্রার্থী করেছেন মমতা। কিন্তু শারীরিক কারণে বিশ্রাম দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা রায়কে এবং চিটফান্ড কেলেঙ্কারির মামলায় নাম জড়িয়ে যাওয়ায় তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন তাপস পালও। ওই দুই জায়গা ভরাট করতে মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহানের মতো নবাগতদের জায়গা দিয়েছেন প্রার্থী তালিকায়। রাজ্যের ৪২ টি আসনের অন্যতম হল যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র। এবার এই কেন্দ্র থেকেই তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী করা হয়েছে মিমি চক্রবর্তীকে (৩০)। ২০১০ সালে বাংলা টিভি সিরিয়াল গানের ওপারে-এর মধ্যে দিয়ে অভিনয় জগতের প্রবেশ মিমির। তখনই বোঝা গিয়েছিল খুব শিগগির পাকাপাকি ভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে চলেছেন তিনি। এরপর ২০১২ সালে বাপি বাড়ি যা এবং বোঝে না সে বোঝে না-মিমির দুইটি ছবিই বাণিজ্যিক ভাবে সফলতা লাভ করেছিল। এবার সেই মিমিকেই যাদবপুরের প্রার্থী করেছেন তৃণমূল। তবে তৃণমূলের একটি অংশের অভিমত যাদবপুরে মিমিকে প্রার্থী করার পেছনে রয়েছে তৃণমূলের অভ্যন্তরীন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকানো। অন্যদিকে কলকাতার বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্ম নুসরাত জাহানের (২৯)। স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে মডেলিং জগতে প্রবেশ। ২০১০ সালে ফেয়ার-ওয়ান মিস কলকাতা বিউটি কনটেস্ট শিরোপা জয়। এরপর জিৎ-এর বিপরীতে নুসরতের প্রথম অভিনিত ছবি পরিচালক রাজ চক্রবর্তীর শত্রু। ২০১৩ সালে ফিরে এসে খোকা-৪২০ এবং খিলাড়ি ছবিতে অভিনয় করেন-এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি নুসরাতকে। এই অভিনেত্রীকেই এবার তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে। দলের লক্ষ্য এই কেন্দ্রের ৫৪ শতাংশ মুসলিম ভোট নিজেদের দখলে আনা। তবে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হলেও গরু পাচার, সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ এবং অনুপ্রবেশ সহ একাধিক ইস্যুতে জর্জরিত এই কেন্দ্র-তাই লড়াইটা অতটা সহজ নয় নুসরাতের কাছে। যদিও নুসরাত জানিয়েছেন অভিনেত্রী হিসাবে মানুষের মন জয়ের পাশাপাশি নবাগত রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি মানুষের হৃদয় জয় করতে চান। বাণিজ্যিক এবং বিকল্প ধারার ছবিতে সফলতার সাথে কাজ করা অভিনেত্রী শতাব্দী রায়কে (৪৯) প্রথমবার ২০০৯ সালে সাংসদ করেছিলেন মমতা। আর প্রথমবারেই রাজ্যটির বীরভূম লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয় ছিনিয়ে আনেন তিনি। প্রতিপক্ষ সিপিআইএম প্রার্থী ব্রজ মুখার্জিকে ৬০ হাজারের বেশি ভোটে পরাজিত করেন শতাব্দী। ২০১৪ সালেও তিনি এই আসনটি নিজের দখলে রাখেন। এবারও এই আসনটিতে শতাব্দীর ওপরই আস্থা রেখেছেন দলনেত্রী। যদিও তার প্রতিপক্ষ বিজেপির প্রার্থী দুধকুমার মন্ডল ইতোমধ্যেই নির্বাচনী প্রচারণায় শতাব্দীকে আউটসাইডার বলে অভিহীত করে বলেছেন ভোট ছাড়াও এলাকার মানুষ তার নাগাল পায় না। ১৭তম লোকসভা নির্বাচনের মমতার আরেক অস্ত্র মুনমুন সেন (৬৪)। মা প্রয়াত অভিনেত্রী সুচিত্রা সেন এবং বাবা দিবানাথ সেনের কন্যা মুনমুন নিজেও টালিউড ও বলিউড-উভয় ক্ষেত্রেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে কাজ করেছেন। বাংলা ছবির পাশাপাশি হিন্দি, তামিল, তেলেগু, মারাঠি, কেড়ালা ছবিতেও দাপটের সাথে অভিনয় করেছিলেন মুনমুন সেন। অক্সফোর্ডের সোমেরভিলে কলেজ থেকে স্নাতক পাশের পর যাদবপুর বিশ্বাবিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করেন তিনি। ২০১৪ সালে রাজনীতিতে যোগদান মুনমুনের। ওই বছরই বাঁকুড়া কেন্দ্রে সিপিআইএম হেভিওয়েট প্রার্থী ও ওই কেন্দ্রের নয় বারের সাংসদ বাসুদেব আচারিয়াকে প্রায় এক লাখ ভোটে পরাজিত করে তৃণমূলের সাংসদ হয়েছিলেন মুনমুন। কিন্তু আসন্ন লোকসভার নির্বাচনে পুরনো কেন্দ্র বাঁকুড়ার বদলে তাকে প্রার্থী করা হয়েছে আসানসোল কেন্দ্রে। যেখানে মুনমুনকে লড়াই করতে হবে বিজেপির বর্তমান সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের বিরুদ্ধে। মমতার এই সিদ্ধান্তের ফলে দলেরই অনেকে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন যে জেনে শুনে কেন এভাবে মুনমুনকে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে ফেলে দেওয়া হল। যদিও মুনমুন বিজেপি প্রার্থীকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মানতে একেবারেই রাজি নন। একজন সেনসেশনাল অভিনেতা হিসেবে ও পশ্চিমবঙ্গের সীমানা ছাড়িয়ে রাজ্যের বাইরেও জনপ্রিয়তার নিরিখে প্রথম সারিতে থাকা দীপক অধিকারী ওরফে দেব (৩৬)-এর অভিনয় জগতে প্রবেশ ২০০৬ সালে- অগ্নিশপথ ছবিতে। এইমুহূর্তে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সবচেয়ে বেশি অর্থ পান দেব-ই। তার নিজেরও একটি প্রোডাকশন হাউজ রয়েছে, যার নাম দেব এন্টারটেনমেন্ট ভেঞ্চারর প্রাইভেট লিমিটেড। ২০১৪ সালে তার রাজনীতিতে প্রবেশ। প্রথমবারই তৃণমূল তাকে প্রার্থী করে মেদিনীপুরের ঘাটাল কেন্দ্রে। সেবার যে কেবলমাত্র ওই কেন্দ্র থেকে জিতেছেন তাই নয়, প্রতিপক্ষ সিপিআই প্রার্থী সন্তোষ রানাকে ২.৬০ লাখের বেশি ভোটে হারিয়েছেন। এবারও ওই কেন্দ্র থেকেই দেবকে প্রার্থী করেছেন মমতা। তবে সাংসদ হওয়ার পর তার কিছু কিছু মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল-যা তার নিজেরও ও দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করে। এজন্য দিদি তাকে এসব থেকে বিরত থাকতে পরামর্শও দিয়েছিলেন। যদিও দেব এখন সবকিছুই পেছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাতে চান। উল্লেখ্য, মোট সাত দফায় শুরু হচ্ছে লোকসভার নির্বাচন-১১, ১৮, ২৩, ২৯ এপ্রিল এবং ৬, ১২, ১৯ মে। পশ্চিমবঙ্গের ৪২ লোকসভা কেন্দ্রেও সাত দফায় ভোট নেওয়া হবে। গণনা হবে আগামী ২৩ মে। সূত্র: বিডি প্রতিদিন আর এস/ ২৫ মার্চ



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2HFjjgn
March 26, 2019 at 01:18AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top