জলপাইগুড়ি, ১৭ মার্চঃ প্রায় চার দশক পেরিয়ে গেলেও তিস্তা ব্যারেজের বাঁহাতি খালে এক ফোঁটাও জল নেই। ক্যানেলে গোরু চরে বেড়ায়। সেচের জলের অভাবে নন্দনপুর-বোয়ালমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাহাড়েরহাট এলাকায় সমস্ত জমি কঙ্কালসার হয়ে পড়েছে। ভালো ফসল ফলে না। বহুদিনের পুরোনো এই সমস্যাকে ঘিরে আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে এলাকায় নতুনভাবে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। ভোটবাক্সেই এর জবাব মিলবে বলে বাসিন্দারা হুমকি দিয়েছেন। ইশ্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল একে অপরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে।
১৯৭৭ সালে তিস্তা ব্যারেজের পরিকল্পনা হয়। পরবর্তীতে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়নের কাজ শুরু হলে বাঁহাতি খাল খনন করে সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের সুযোগ প্রতিবেশী কোচবিহায় জেলায় পৌঁছে দেওয়া হবে বলে সরকারিভাবে জানানো হয়। জলপাইগুড়ি জেলার সদর ব্লকের গ্রামাঞ্চলের ক্যানেল প্রতিবেশী কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ি ব্লকে সম্প্রসারিত করা হবে বলে বলা হলেও সেই কর্মসূচি বাস্তবায়িত না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে।
তিস্তা ক্যানেলে জল নেই। সেখানে গোরুর পাল চরে বেড়াচ্ছে। ক্যানেলের দুই পাড়ে ঘুঁটে শুকানো হচ্ছে। সেচ দপ্তরের রথী-মহারথীদের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের নেতারা এই তিস্তা ক্যানেলকে কেন্দ্র করে আটের দশকের সূচনায সবুজ বিপ্লবের কথা বললেও আজও কোনো কাজের কাজ হয়নি। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেসের আমলেও অবস্থার বদল হযনি। শুধু নন্দনপুর পাহাড়েরহাটই নয়, মণ্ডলঘাট গ্রাম পঞ্চায়েত, খারিজা বেরুবাড়ি-১, খারিজা বেরুবাড়ি-২ এবং নগর বেরুবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সেচের হাল করুণ হয়েছে।
পাহাড়েরহাট মোড়ে দিলীপ সরকার সমস্যার বিষয়ে বলেন, দীর্ঘদিন আগে তৈরি তিস্তা ক্যানেলের বেহাল অবস্থা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ক্যানেলের বিভিন্ন অংশ ভাঙতে শুরু করেছে। শুখা মরশুমে জল পাব বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই আশা অপূর্ণই রয়ে গেল। সেচের সুযোগ পেলে এখানকার জমি একফসলা থেকে তিনফসলা হতে পারে বলে তিনি অবশ্য আশা প্রকাশ করেন। এলাকার বাসিন্দা দেবাশু রায় বলেন, সামান্য জমি রয়েছে। কিন্তু সেখানে ভালো ফলন হয় না। তাই মুদির দোকান করে কোনোমতে সংসার চালাচ্ছি। অমৃত সরকারের আক্ষেপ, সেচের জল পেলে এখানকার জমি উর্বর হতে পারত। কিন্তু আমাদের কে সেই সুযোগ দেবে!
বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও পরস্পরের বিরুদ্ধে সমালোচনায় মুখর হয়েছে। ফরোয়ার্ড ব্লকের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য গোবিন্দ রায় বলেন, বামফ্রন্ট তো বটেই, তৃণমূল জমানাতেও তিস্তার বাঁহাতি খাল নিয়ে সমস্যা মিটল না। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষদস্তিদার বলেন, গণি খান চৌধুরি সেচমন্ত্রী থাকাকালীন এখানে এই প্রকল্পটির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রকল্পটি কার্যকর করতে পারল না।
তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সহসভাপতি দুলাল দেবনাথের কথায়, প্রকল্পটিকে ঘিরে বামেদের সময়ই সবচেযে বেশি দুর্নীতি হয়েছিল। সেই সময় ২০ জন ইঞ্জিনিযারকে জেলে পাঠানো হয়। জমিজটের জেরে সমস্যা হলেও সেই সমস্যা মিটে বর্তমানে প্রকল্পের কাজে গতি এসেছে বলে দুলালবাবু জানান।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2Fi6nKM
March 17, 2019 at 03:11PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন