তৃণমূলের মদতে ইসলামপুর মহকুমায় চা বাগানের জমি দখল

অরুণ ঝা,  ইসলামপুর, ৪ মার্চঃ ইসলামপুর মহকুমায় ডানকানসের ছেড়ে যাওয়া দেড় হাজার একর চা বাগানের দখল নিয়ে কোটি কোটি টাকার কারবার চলছে। জমির দখল নিতে প্রায়ই চলছে বোমা, গুলি। রাজ্যের শাসকদলের নেতাদের একাংশের ইশারায় জমির লিজ বদল থেকে শুরু করে কার হিস্সায় কত জমি যাবে তার ফতোয়াও জারি হচ্ছে। কেউ বেগড়বাই করলে কপালে জুটছে আগ্নেযাস্ত্রের ঝলকানি। বাগানের শয়েশয়ে শেড ট্রি হাজার হাজার টাকায় পাচার হয়ে যাচ্ছে। স্বভাবতই অবৈধ এই কারবারের জেরে নেতা থেকে শুরু করে তাদের চামচারা পর‌্যন্ত রাতারাতি ফুলেফেঁপে উঠছে। চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমান জানিয়েছেন, দলের কেউ নয়, এলাকার গুন্ডারা এইসবে যুক্ত। ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওযালের দাবি, বাগানের মালিক না থাকার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। শ্রম দপ্তর সমস্যার কথা স্বীকার করলেও বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারে নয় বলে দাবি করেছে। তবে অবৈধ এই কারবারের টাকার একাংশ এলাকার রাজনৈতিক দখলদারির জন্য গোলাবারুদের পিছনে ঢালা হচ্ছে বলে অন্তর্তদন্তে উঠে এসেছে।

প্রসঙ্গত, ইসলামপুর এবং চোপড়া থানা এলাকায় ডানকানস গ্রুপের কমপক্ষে ১৬০০ একর জমির চা বাগান রয়েছে। একসময় এই চা বাগানের উপর নির্ভর করে এলাকার অর্থনীতির ব্যাপক বদল ঘটেছিল। সাধারণ কৃষকরা বাগানে তাঁদের কৃষিজমি ন্যূনতম দামে বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট বাগানেই চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু বছর তিনেক আগে ডানকানস কর্তপক্ষ বাগান ছেড়ে কার্যত পালিয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে অসহায় অবস্থায় পড়েন বাগানের শ্রমিক ও কর্মচারীরা। পরে রাজনৈতিক এবং প্রচ্ছন্নভাবে প্রশাসনিক উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে কমিটি গঠন করে বাগানগুলি চালু রাখার ব্যবস্থা করা হয়।

কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে বর্তমানে পরিস্থিতি অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। কমিটির বদলে এলাকার শাসকদলের নেতাদের একাংশ বর্তমানে ওই বাগানের কার্যত মালিক সেজে বসেছেন। বাগানে যাঁদের জমি গিয়েছে তাঁরাও নিজেদের ভাগের বাগানের পাতা ছুঁতে সাহস পান না। বাগানের কত জমি কাকে কত টাকায় লিজ দেওযা হবে তা এই নেতারাই চড়ান্ত করছেন। প্রশ্ন উঠছে, সেই লিজের টাকার হক কার? একর প্রতি ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা লিজে পেলে সেই টাকা কাদের পকেটে ঢুকছে? এক-একটি শেড ট্রি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই টাকাই বা কারা নিচ্ছে? প্রশাসনিক কোনো নজরদারি এবং বাগান কর্তপক্ষ না থাকায় শয়েশয়ে একর জমির দখল নিয়ে হরির লুটের টাকা আখেরে যাচ্ছে কোথায়? ঘটনার তদন্তে নেমে যা উঠে এসেছে তা হল, জোর যার মুল্লুক তার- এই ফর্মুলাতেই বর্তমানে বাগানগুলি চলছে। গোলাবারুদ এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় তণমূল নেতারাই বাগানের সমস্ত লেনদেনের হর্তাকর্তাবিধাতা হয়ে বসেছেন।

ইসলামপুরের পাটাগড়া হোক কিংবা চোপড়া- সর্বত্রই গানম্যানদের সামনে রেখে এই লুঠতরাজ চলছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িতরা এলাকায় গাড়ি, বিলাসবহুল বাড়ি বানিয়ে দাপিয়ে ঘুরছে বলেও এলাকাবাসীর দাবি। প্রশাসনের এক কর্তা জানিয়েছেন, আসলে মালিক না থাকায় বাগান কী হবে বা কেমন করে চলবে আইনত তা দেখার কোনো উপায় নেই। আর সেই ফাঁক গলেই এই কারবার চলছে।  চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল এই প্রসঙ্গে বলেন, আমার এলাকায় এই সমস্যা খুব বড়ো নয়। যাঁরা জমি দিয়েছিলেন তাঁরাই বাগানের পাতা তুলছেন। তবে কিছু এলাকায় গুন্ডাবাহিনী শেড ট্রি এবং বাগানের দখল নিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে। দলের কেউ এতে যুক্ত নয়। ইসলামপুরের বিধায়ক কানাইয়ালাল আগরওয়াল বলেন, বাগানের মালিক না থাকায় যা হওযার তাই হচ্ছে। তবে দলের কেউ এসবে যুক্ত থাকলে তাকে সতর্ক করা হবে। ইসলামপুর মহকুমার শ্রম আধিকারিক নৌশাদ আলম বলেন, শ্রমিকদের সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় আমার দপ্তর দেখে। এই ধরনের সমস্যা তৈরি হয়েছে জানি। তবে তা আমার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না।



from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2IQ8XM8

March 04, 2019 at 01:16PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top