ঢাকা, ২০ মার্চ- তিনিই বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কিনা? তা নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে। তবে তামিম ইকবালই যে তিন ফরমেটে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান, তাতে এতটুকু সন্দেহ নেই। কারণ টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি; তিন ফরমেটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রান তার। তাই পরিসংখ্যানকে মানদণ্ড বা নিয়ামক ধরলে অনিবার্যভাবেই বাংলাদেশের এক নাম্বার ব্যাটসম্যান এখন তামিম ইকবাল। তার সাহস, আস্থা, আত্মবিশ্বাস, আত্মনিবেদন ও পারফরম্যান্সই তাকে নিয়ে গেছে অন্য উচ্চতায়। ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলা ও রান করার কারণে তামিম হয়ে উঠেছেন টাইগারদের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় নির্ভরতার প্রতীক। টিম বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রধান তিন স্তম্ভর মূল পিলারই তামিম। যে কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে আস্থার জায়গাই তামিমের ব্যাট। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া পরিবারের সেই কনিষ্ঠ সদস্য তামিম ইকবালের আজ ৩০তম জন্মদিন। ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ বন্দরনগরী চট্টগ্রামের কাজীর দেওরিতে বিখ্যাত খান পরিবারে জন্ম তামিমের। পিতা ইকবাল খান ছিলেন আপাদমস্তক ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়ানুরাগী ও ক্রীড়া অন্তঃপ্রাণ। ফুটবল ও ক্রিকেট একসঙ্গেই খেলেছেন দাপটে। সত্তর দশকে ঢাকার ফুটবলের সূর্য যখন মধ্যগগণে, তখন ইকবাল খান ছিলেন নামী ফুটবলারদের একজন। ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম মোহামেডানের অধিনায়ক ইকবাল খান ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেটও খেলেছেন। চট্টগ্রাম লিগে তার সেঞ্চুরিও আছে। চাচা আকরাম খান বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার হাত ধরেই ১৯৯৭ সালে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে উড়েছিল ক্রিকেটে জয়ের কেতন। বড় ভাই নাফিস ইকবালও ছিলেন জাতীয় দলের স্টাইলিশ ওপেনার, টেস্ট সেঞ্চুরিয়ানও। স্বভাবতই ক্রিকেটটা তামিমের রক্তে, অস্থি-মজ্জায়। ড্যাশিং এই ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় ২০০৭ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। তবে তামিম সবার সবার নজর কাড়েন ২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপে নিজের অভিষেকে সাহসী ব্যাটিংয়ে। দুর্দান্ত এক হাফসেঞ্চুরির পথে ভারতের সে সময়ের এক নাম্বার ফাস্ট বোলার জহির খানকে উইকেট ছেড়ে দু পা বেরিয়ে লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকিয়ে তামিম জানান দিয়েছিলেন-শুধু জহির খানকে নয় বিশ্ব ক্রিকেটকে শাসন করতেই এসেছি আমি। জহির খানের বলে তামিমের ওই ছক্কা হাঁকানোর আক্রমণাত্মক ভঙ্গিই মাঝে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হয়ে গিয়েছিল। চাচা আকরাম খান ছিলেন মারকুটে ব্যাটসম্যান। আর বড় ভাই নাফিস ইকবালকে ধরা হতো সিম্বল অব এলিগেন্স। কিন্তু তামিম বড় হয়েছেন নিজের মতোই। তার বয়স যখন ১১-১২ বছর তখনই কিশোর তামিমকে দেখিয়ে এ প্রতিবেদকসহ কয়েকজন সিনিয়র সাংবাদিককে চাচা আকরাম খান বলেছিলেন-আমার চেয়েও জোরে মারতে পারে আমার এই ভাতিজা। এই বয়সেই ওর ব্যাটের তেজ অনেক ঝাঁঝালো। চাচা আকরাম আর বড় ভাই নাফিসের চেয়ে সত্যিই বিগ হিট নেয়ার প্রবণতা ও ক্ষমতা-দুইই বেশি তামিমের। ক্যারিয়ারের শুরুতে তার ব্যাট ছিল খোলা তরবারি। যে ফরমেটের খেলাই হোক, তামিম উইকেটে গিয়েই যাকে তাকে ইচ্ছেমত চার ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টা করতেন। সেই আক্রমণাত্মক মেজাজ, অসীম সাহস ও নিজের সামর্থ্যের প্রতি প্রচন্ড বিশ্বাসের কারণেই তামিম সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেছেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। সময়ের প্রবাহতায় ব্যাটিং স্টাইল ও অ্যাপ্রোচ পাল্টেছেন। আগে শুরু থেতেই তেড়েফুরে চার ছক্কা হাঁকাতে চাইতেন। দীর্ঘ সময় উইকেটে থেকে লম্বা ইনিংস খেলার চেয়ে চিত্তাকর্ষক ব্যাটিং করে দর্শক ভক্তদের মনোরঞ্জনই ছিল লক্ষ্য। কিন্তু সময়ের ফেরে সেই তামিম এখন অনেক পরিণত, ধীর স্থির। চটকদার মার আর বাহারি স্ট্রোক প্লেতে মাঠ মাতানোর চেয়ে এখন দলের প্রয়োজন মেটাতেই অধিক মনোযোগী তামিম। তাই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের প্রাণ এখন তিনি। এখন পর্যন্ত তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তামিম। খেলেছেন ৫৮টি টেস্ট, ১৮৯ ওয়ানডে আর ৭৫টি টি-টোয়েন্টি। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিন ফরমেটেই সেঞ্চুরি আছে তার। মোট সেঞ্চুরি ২১টি। দেশে বিদেশে এর পক্ষ থেকে তামিম ইকবালকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। আর/০৮:১৪/২০ মার্চ
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2FpTQFw
March 20, 2019 at 07:36PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন