ময়নাগুড়ি, ২৪ মার্চঃ নিজের খাবার জোটে না ঠিকমতো, থাকার কোনো নির্দিষ্ট ঠিকানা নেই। কিন্তু বাজারের কুকুরদের খাওয়ানো চাই। ভালোবাসা থাকলে অর্থের অভাব যে কোনো বাধা নয়, তা প্রমাণ করছেন ময়নাগুড়ি বাজারে থাকা ভবঘুরে জযন্তী রায়। প্রতিদিন চেয়েচিন্তে দোকানে ঘুরে ঘুরে নিজের খাবার সংগ্রহ করেন। আর তার সিংহভাগই বিলিয়ে দেন কুকুরদের মধ্যে। মযনাগুড়ি বাজার সুপার মার্কেট, থানা মোড়, খেলার মাঠ এলাকায় দেখা মিলবে জযন্তী রায়ের।
দীর্ঘদিন ধরেই ময়নাগুড়ি বাজার এলাকায় রয়েছেন জয়ন্তী রায়। তিনি ঘুরে ঘুরে কাটিয়ে দেন সারাদিন। ময়নাগুড়ি বাজার এলাকার কিছু সহৃদয় বাসিন্দা তাঁকে নিয়মিত খাবার এবং বস্ত্র দেন। সেটাই একমাত্র ভরসা বৃদ্ধার। নিজের নামটা বহু কষ্টে বলতে পারেন জয়ন্তীদেবী। তার চাইতে আর বেশিকিছু বলতে পারেন না। তবে খাবার আঁচলে বেঁধে নিয়ে আসেন বাজার ঘুরে ঘুরে। তারপর প্রথমেই খাবার বিলি করেন কুকুরগুলিকে। তারপর যেটুকু বেঁচে থাকে, তা নিজে খান। এই দৃশ্য দেখে পথচলতি মানুষ মাঝে মাঝে খাবার কিনে জয়ন্তীদেবীকে দেন। আবার কেউ নগদ টাকাও দেন।
তবে এখন জয়ন্তীদেবীকে সেভাবে আর কারও কাছে খাবার চাইতে হয় না। বরং খাবারের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে দোকানদার নিজে থেকেই কিছু খাবার দেন তাঁকে। আর ওই খাবার তিনি ভাগ করে নেন অবলা প্রাণীগুলির সঙ্গে। ভবঘুরে জয়ন্তীদেবী অনেক কিছু বোঝেন না। কিন্তু এটা বোঝেন, কুকুরগুলিকে খাওয়ানোর মতো মানুষের অভাব রয়েছে। অনেক চেষ্টা করে তাঁর সঙ্গে সামান্য কথা বলা সম্ভব হয়েছে। কোনোরকমে তিনি বললেন, ওদেরও খাবার নেই, আমারও খাবার নেই। তাই আমি যেটুকু খাবার জোগাড় করতে পারি, তা সবাই মিলে ভাগ করে খাই। তাতে কোনো অসুবিধা হয় না।
এমন দৃশ্য অবাক করেছে ময়নাগুড়ির বাসিন্দাদেরও। আধুনিক সমাজের আত্মকেন্দ্রিক জীবনের মধ্যেও এমন হতে পারে, এটাই প্রশ্ন তাঁদের। এ প্রসঙ্গে ময়নাগুড়ি থানার আইসি তমাল দাস বলেন, ওই দৃশ্য দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। পরিবারের সঙ্গে বাজারে গিয়ছিলাম। হঠাৎ আমার স্ত্রী আমাকে বলে, দৃশ্যটি দ্যাখো। পরে আমার স্ত্রী ওই বৃদ্ধাকে সামান্য কিছু টাকা দেয় আরও খাবার কেনার জন্য। শহিদগড় পাড়ার বাসিন্দা ব্যবসায়ী বিলু গুন বলেন, জয়ন্তী রায বহু দিন ধরেই ময়নাগুড়িতে রয়েছেন। তবে তাঁর বাড়ি এখানে নয়। তিনি যখন বাজারের কুকুরগুলিকে খাওয়ান, তখন দেখলে অবাক হতে হয়। কুকুরগুলিও জয়ন্তী রায়কে ঘিরেই থাকে।
from Uttarbanga Sambad | Largest Selling Bengali News paper in North Bengal https://ift.tt/2U4ZdSy
March 24, 2019 at 02:30PM
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন