ঢাকা, ১৭ এপ্রিল- নব্বই দশকের দিকে ঢাকাই সিনেমায় এক ধূমকেতুর আগমন ঘটেছিল যার নাম সালমান শাহ। ক্যারিয়ারের অল্প সময়ে মধ্যে উপহার দিয়েছিলেন ২৭টি ছবির যার অধিকাংশই ছিল ব্যবসা সফল। স্টাইল, অভিনয় দিয়ে জয় করে নিয়েছিলেন অগণিত মানুষের হৃদয়। ১৯৯৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হঠাৎ করেই অকাল প্রয়াণ ঘতে এই তারকার। তার প্রয়াণে শোবিজ জগত ছাড়াও কেদেছিল গোটা দেশ। আজও তার নাম মনে করে চোখের জল ফেলেন তার ভক্ত অনুরাগীরা। সালমান শাহ যখন ঢালিউডে পা রাখেন তখন ইন্ডাস্ট্রিতে বেশ ব্যস্ত নায়ক ছিলেন ওমর সানি। সেসময়ে ওমর সানির সিনেমা মানেই যেন প্রযোজকদের মুখে হাসি। যখন সালমান শাহের প্রথম ছবি কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পেল তখন যেন ইন্ডাস্ট্রি মোড় নিল অন্যদিকে। প্রথম ছবিতেই স্টাইল আর অভিনয় দিয়ে বাজিমাত করেন সালমান শাহ। তখন প্রযোজকরা সালমানকে নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। সালমান অভিনীত বেশিরভাগ ছবিই ছিল হিট। তার অভিনয় আর স্টাইলের প্রশংসায় মুগ্ধ ছিল পরিচালক, প্রযোজক, নায়ক, নায়িকা থেকে সবাই। ক্যারিয়ারের তিন বছরে মুগ্ধ করে গিয়েছেন অসংখ্য ভক্তদের। সম্প্রতি একটি রেডিও অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে সালমান শাহর স্টাইল নিয়ে মতামত প্রকাশ করেন চিত্রনায়ক ওমর সানি। সেখানে তিনি বলেন, আমি সালমানকে অনেক পছন্দ করতাম। ও স্টাইলের দিক থেকে অনেক আপডেট ছিল। অনেক অ্যাডভান্স স্টাইল করতো। স্টাইলের দিক থেকে আমি ওর অনেক পিছনে ছিলাম-যেটা আমি অকপটে স্বীকার করি। একটা জিনিস আমি বুঝাতে পারি না যে আমি যদি এই জিনিসটা স্বীকার করি, এতে তো আমিই বড় হচ্ছি। এখন আমি যদি বলি যে আমি খুব পাওয়ারফুল আর্টিস্ট তাহলে তো আমারই ক্ষতি হচ্ছে, আমার শেখার জায়গাটা আমি হারিয়ে ফেলছি। তিনি আরও বলেন, সালমান অনেক ড্যামকেয়ার ছিল। অনেক ভালো অভিনেতা ও অনেক ভালো স্টাইল করতে জানতো। ওর ক্যারিয়ারের ২৭টি ছবির মধ্যে কিছু ফ্লপ ছিল, বাকি সব ব্যবসাসফল ছিল। আরেকটা বিষয় হচ্ছে সালমান তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসতো। আমি মনে করি, এটা ওর জন্য অনেক বড় একটা কাল ছিল। এতবছর পর আমি একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই যেটা হচ্ছে, সালমানকে আমার ছোট ভাই বলেন বা বন্ধু বলেন তার স্ত্রীকে আমি অনেক শ্রদ্ধার চোখে দেখি। কিন্তু সালমান যে মেয়েটিকে বিয়ে করেছিল তাকে আমি একদমই শ্রদ্ধার চোখে দেখবো না। এর কারণ এতকিছু হওয়ার পরও সালমানের মৃত্যুর কিছুদিন পরেই মেয়েটা আবার বিয়ে করে ফেলল। বিয়ে করে অন্য জায়গায় সংসার করছে, এখনো বেঁচে আছে। বাঁচার অধিকার পৃথিবীতে সবারই আছে। কিন্তু সালমান বোধহয় একটু বেশিই ভালোবাসতেন তাকে এবং সে নিজেকে যদি আরও কন্ট্রোল করতো, যদি ভুল না করতো। সর্বশেষে একটি কথা বলবো আল্লাহ হয়তো চায় নি যে সালমান পৃথিবীতে থাকুক, এটাই সান্ত্বনা। এভাবেই বলেন ওমর সানি। সালমান চলে যাওয়াতে তার জায়গাটার জন্য বিশেষ করে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এখন প্রশ্ন করতে পারেন যে সালমান মরে যাওয়ায় আপনার আবার ক্ষতিটা কি? সেক্ষেত্রে আমি বলবো, আমার ক্ষতিটা হয়েছে এই যে, আমি তখন ভাবতে শুরু করলাম আমার তো আশেপাশেই কেউ নেই। এটাই হচ্ছে- আমার ক্ষতির কারণ। প্রসঙ্গত, সালমান শাহের পুরো নাম ছিল চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্র দিয়ে ঢাকাই সিনেমায় পা রাখেন তিনি। প্রথম ছবিতে তার নায়িকা ছিলেন মৌসুমী। তিন বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ২৭টি ছবি করেছিলেন। সর্বাধিক ছবিতে জুটি বেঁধেছিলেন শাবনুরের সাথে, প্রায় ১৪টি ছবি। সালমানের সর্বশেষ ছবি ছিল বুকের ভেতর আগুন। সিনেমার বাইরেও তিনি নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করেছিলেন। তার উল্লেখযোগ্য নাটকগুলো হলো- আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী, পাথর সময়, ইতিকথা। এছাড়াও মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটার বিজ্ঞাপনে দেখা গিয়েছিল তাকে। সবাইকে কাঁদিয়ে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর না ফেরার দেশে চলে যান সবার প্রিয় সালমান শাহ। সূত্র: বিডি২৪লাইভ আর এস/ ১৭ এপ্রিল
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2GqaB3C
April 17, 2019 at 07:36PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন