কলকাতা, ১৮ মে- গত দুমাস ধরে কলকাতা ও রাজ্যের নানা প্রান্তে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ধরা পড়েছে। যাদেরই ধরা হয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই তারা কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। টাকা বাজেয়াপ্ত হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা টাকা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা পড়েছে। শুক্রবার অতিরিক্ত মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক সঞ্জয় বসু জানান, ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত গোটা রাজ্যে ৬৩ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পেছনে রয়েছে বিজেপিরই বড় নেতাদের যোগসাজশ। রাজ্যে শেষ দফা ভোটের আগেও উদ্ধার হল টাকা! সেখানেও সেই বিজেপি নেতা ও তাঁর ৪ সঙ্গী গ্রেপ্তার। তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছুদিন আগেই এক কোটি টাকাসহ বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক ধরা পড়েছিলেন। এছাড়াও কলকাতা শহরে এবং তার লাগোয়া অঞ্চলে যখনই টাকা ধরা পড়েছে, তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, রাজ্যে ভোটের আগে টাকা ঢোকানোর পেছনে সেই বিজেপিরই যোগসাজশ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বকুলতলায় নাকা চেকিংয়ের সময় ২৪ লক্ষ টাকাসহ গ্রেপ্তার করা হয় বিজেপি নেতাকে। অভিযোগ, উত্তরীয়র মধ্যে টাকার বান্ডিল লুকিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাত ১০টা নাগাদ একটি সাদা জাইলো গাড়ি (ডব্লুবি ২০জেড ৬১২২) করে যাচ্ছিলেন বিজেপির জেলা নেতা মিন্টু হালদার। ওই গাড়িতে বিজেপির মণ্ডল সম্পাদক ছাড়াও ছিলেন আরও দুই মহিলা। তাঁদের কাছেও টাকা ছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, তাদের পোশাকের মধ্যে ওই টাকা লুকনো ছিল। এছাড়া উদ্ধার হয়েছে একটি ১০ লক্ষ ৫৪ হাজার ৫০০ টাকার চেক। একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ওই চেক। টাকা ছাড়াও কিছু কাগজপত্র, পদ্মফুলের ছবি দেওয়া রাবার স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে। পুলিশ জানায়, কাগজে লেখা রয়েছে গোসাবা, কুলতলি, বাসন্তীতে কাকেকোথায় টাকা দিতে হবে এমন তথ্য। জয়নগরের বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারি ও বিজেপি পূর্ব জেলার সহসভাপতি গোপাল দেবনাথ ওই চেকে সই করেছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। ধৃত অন্যরা হলেন, কৌশিক মণ্ডল, সরস্বতী হালদার, নমিতা হালদার এবং সুশীল নস্কর। এ ব্যাপারে বারুইপুর পূর্বের জেলা সভাপতি সুনীপ দাস জানিয়েছেন, ওই টাকার সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই। মিন্টু হালদার ব্যবসায়ী। টাকা থাকতেই পারে। বিজেপি প্রার্থী অশোক কাণ্ডারি বলেন, যে চেক পাওয়া গেছে তা আমারই। আমি আমার চেক এজেন্টের মাধ্যমে দিয়েছি। সে কোথায় কী সরবরাহ করবে তা সে বলতে পারবে। এটা বেআইনি কিছু নয়। নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সক্রিয়ভাবে পথে নেমেছিল। এখনও পর্যন্ত ৬ কোটি ৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেখা গেছে, ওই টাকা বিলির পেছনে ভিনরাজ্যের বড় ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। আয়কর দপ্তর ইতিমধ্যেই টাকা ও নগদ মিলিয়ে ২১ কোটি ১১ লক্ষ টাকা উদ্ধার করেছে। কলকাতারই একটি নামী ব্যবসায়িক কেন্দ্রে হানা দিয়ে গোপন ভল্ট থেকে বান্ডিল বান্ডিল নগদ টাকা উদ্ধার হয়েছে। আয়কর দপ্তর জানিয়েছে, ভোটের হাওয়া উঠতেই গত বছর শেষের দিকে নগদ ৮ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল। টাকা ঢুকেছে ভিনরাজ্য থেকে। সেখানে হাওয়ালাচক্রের যোগও মিলিছে। আবার এমনও দেখা গেছে, কলকাতা থেকেই বড় ব্যবসায়ীদের একাংশ টাকা জড়ো করে বিজেপির কর্মীসমর্থকদের মধ্যে বিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য তা ধরা পড়েছে পুলিশের তৎপরতায়। টাকাগুলি পরীক্ষা করে দেখা গেছে, বেশিরভাগই নতুন নোটে ৫০০ ও ২০০০। খোদ বিজেপি প্রার্থী ভারতী ঘোষের কাছ থেকে টাকা মিলেছে। টাকা বিলির চক্রের পেছনে একটি বড় অংশ হল হাওয়ালাচক্রে জড়িত লোকজন। এদিকে, নিউ টাউন থানা এলাকা থেকে শুক্রবার ৮ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার হল। ধৃতের নাম ইন্দ্রনীল আচার্য। বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। নিউ টাউনের একটি আবাসনে সে কিছুদিন হল থাকছিল। সে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বলে পুলিশকে জানিয়েছে। আয়কর দপ্তর ও কলকাতা পুলিশ আজ শনিবারও তৎপর থাকছে। শেষ মুহূর্তে বেআইনিভাবে টাকা ছড়িয়ে ভোটের বাজারে যাতে কেউ অনর্থ না ঘটাতে পারে। আর এস/ ১৮ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/30phIS9
May 18, 2019 at 08:38AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top