টরন্টো, ২০ মে- সব ভালো তার, শেষ ভাল যার। উচ্ছ্বল, যথাসময়ে, প্রাণবন্ত যবনিকা ছিল এবছরের টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা আয়োজিত ১৪তম বেঙ্গলি পারফর্মিং আর্টস ২০১৯ এর । জনপ্রিয় শিল্পী রুপংকরের গান পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অত্যন্ত সফলভাবে শেষ হলো এবছরের সাংস্কৃতিক উৎসব। এতো সত্যি, কোন অনুষ্ঠানের, উৎসবের দর্শক শ্রোতাই শিল্পীদের চালিকা শক্তি, অনুষ্ঠানের প্রাণ। আর টিএসএস এর প্রধানতম শক্তি তাদের অসাধারণ দর্শক শ্রোতা। মন উজার করে প্রণোদনা দিয়ে আসছে এই টরন্টোর বাঙালি সংস্কৃতিবান, শিকড় সন্ধানী বিদগ্ধজনেরা ফিবছর। প্রতিবারের মত এবারো অনুষ্ঠানে আয়োজনে ছিল মনকাড়া হৃদয় ছোঁয়া নৃত্য, গান, নাটক, নৃত্য , আধুনিক গান, ছোটদের উপস্থাপনা, সেতার বাজনা । সময় ধরে ধরে, যার যার অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে কোন ব্যত্যয় নেই নেই কোন এলোমেলো ভাব ।সব পেশাজীবি দৃষ্টিভঙ্গীতে করা - গোছানো পরিপাটি । ভালবাসা কারে কয়- ধারাবাহিক উৎসবের কি হয় ? প্রথম বছর যেভাবে শুরুটা হয় দেখা যায় পরের বছর, হয় সেটা আকারে প্রকারে আড়ম্বরে বড় হয় আর নয় তো আয়োজিকদের উদ্দিপনায় ভাটা কিংবা নানাবিধ দলাদলির জটিলতায় উৎসবের রঙ ফিকে হয়ে আসে। টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)-র এই বার্ষিক পারফর্মিং আর্ট উৎসব দিনে দিনে ফিকে না হয়ে উজ্জ্বলতর হচ্ছে । এবারকার চেয়ারপার্সন শান্তনু চৌধুরী এর যোগ্য নেতৃত্বে একটি চৌকস, দক্ষ অভিজ্ঞ দল নিরলস পরিশ্রমের কারনে এমন একটি উৎসব আয়োজন করা সম্ভব হয় বলে দর্শকশ্রোতা-শুভানুধ্যায়ীদের অভিমত । কেমন করে শুরুটা- ২০০৪ সালে কয়েকজন আড্ডাবাজ বাঙালির চিন্তার ফসল টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)-র এই বার্ষিক পারফর্মিং আর্ট উৎসব ।কফির আড্ডায় নষ্টালজিক মনের গান-কবিতা-নৃত্য কে তুলে এনে এই প্রবাসে উপস্থাপন করা আর প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করাই লক্ষ্য তাদের । তাইতো এখন বৃহত্তর টরন্টোর বাঙালিদের একটি অন্যতম সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)-র এই বার্ষিক পারফর্মিং আর্ট উৎসব ।২০০৪ সালে দীপক অধিকারী , ২০০৬ সালে কবি ব্যানার্জি আর ২০১১ অরুন চক্রবর্তীর হাত ধরে ২০১৪/১৫/১৬ তে অরুন (রাজকুমার) বিশ্বাস , ২০১৭/১৮/১৯-এ শান্তনু চৌধুরীর যোগ্য নেতৃত্বে দক্ষ অভিজ্ঞ দল নিরলস পরিশ্রমের কারনে এমন একটি উৎসব হচ্ছে ফিবছর। প্রজন্মের প্রাধান্যঃ টিএসএসের লক্ষ্য, এখানে বেড়ে ওঠা প্রজন্মকে সুকুমারবৃত্তির চর্চায় উৎসাহ প্রদান ও প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে বাঙালিত্বের, মূল চেতনার এবং ঐতিহ্যের অধিকার সবারভেতর ধারণ এবং সংস্কৃতির মেলবন্ধনের চেষ্টা। সে-লক্ষ্যে প্রথম থেকেই একের পর এক শিশু-কিশোরদের প্রযোজনা আনছে মঞ্চে তারা। প্রথম দিন- উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিশু কিশোরদের ইমাজিন অনুষ্ঠিত হয় । পরে টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থার প্রযোজনা সৃজন চ্যাটার্জি এর গ্রন্থণা, নির্দেশনা এবং এনাক্ষ্মী সিনহা এর কোরিওগ্রাফি, নির্দেশনায় কালারস অব উইন্টার । এরপরে মঞ্চে আসেন নাট্য অভিনেতা গৌতম হালদার তার গান, আবৃত্তি সম্বন্বয়ে কবি জসিম উদ্দিন নক্সী কাথার মাঠ এর সোজন বাদিয়ার ঘাট। এরপরই আসে অর্পিতা দে এর নির্দেশনায় নাটক আমব্রেলা । ঘন্টাখানেক বিরতির পর মঞ্চে আসেন প্রথম দিনের আকর্ষণ রাস্ট্রীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কণ্ঠশিল্পী ইমন চক্রবর্তী। রবীন্দ্র সংগীত, লোকগীতি, অহমীয়া, হিন্দী, আধুনিক গান গেয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রেখেছিলেন মধ্যরাত ছাড়িয়ে রাত্রীর প্রথম প্রহরে ১টা পর্যন্ত। দ্বিতীয় দিন- রবিবারের অনুষ্ঠান শুরু হয় নৃত্যের থিমেটিক প্রেজেন্টেশন ওয়ান্ডারফুল ওয়ার্ল্ড। এরপর হিন্দোল চ্যাটার্জির সেতার বাদন অনুষ্ঠিত হয় । পারমিতা রায় এর নির্দেশনায় সেডস অব ইন্ডিয়া মঞ্চায়নের পর গানের দল সাথে- এ মিউজিক্যাল ভয়েজারস উপস্থাপন করেন। উৎসবের প্রধান আকর্ষণ রুপংকর বাগচি এবং তিনি মঞ্চে উঠেন বিরতির পর পর। একটানা ঘন্টা দুয়েক দর্শক মাতিয়ে রেখেছিলেন রুপংকর। রবীন্দ্র সংগীত, আধুনিক গান পরিবেশন করেন রুপংকর। প্রকাশনা - উৎসব উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও দৃষ্টিনন্দ স্মারক বের করে টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা। লক্ষ্ণী যারা- টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থার এই দুইদিনব্যাপী অনুষ্ঠানে দর্শকশ্রোতাগন যেমন টিকেট কেটে সাহায্য করেছে ঠিক তেমনি বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দিয়ে , শুভানুধ্যায়ীরা পৃষ্ঠপোষকগন অর্থ অনুদান দিয়ে আর শিল্পী কলাকুশলীরা শ্রম-সময়- মেধা দিয়ে উৎসবকে করেছে সার্থক প্রানবন্ত- উচ্ছ্বল- রঙীন । জয়তু টরন্টো সংস্কৃতি সংস্থা (টিএসএস)-জয়তু বাঙালি কৃষ্টি আর মেধা।



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2EkGXvb
May 20, 2019 at 07:17PM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top