আবু জায়েদ চৌধুরী রাহী সিলেটের বালাগঞ্জের জামালপুর এলাকার সন্তান হলেও জন্ম এবং বড় হয়েছেন সিলেট নগরীর রায়নগর এলাকায়। তিন ভাই এক বোনের মধ্য সবার ছোট রাহী। বড় ভাই আবু খালেদ চৌধুরী সাদী একজন ব্যবসায়ী। মেঝ ভাই মেহেদি হাসান রাদী বর্তমান ইংল্যান্ড প্রবাসী তবে এক সময় খেলেছেন ক্রিকেটের ডিভিশন লিগে। এক মাত্র বড় বোন খালেদা রহমানও ইংল্যান্ডে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধা বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে একদিন দেশের সেরা ক্রিকেটার হবেন রাহী, খেলবে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। বাবা আব্দুল খালিক চৌধুরীর স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। দেশের হয়ে এবার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসর বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছেন ডান-হাতি এই পেসার। ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে ওঠা রাহীকে নিয়ে কথা হয় বড় ভাই আবু হানিফ চৌধুরী সাদীর। তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই রাহী খেলার জন্য পাগল ছিলেন। প্রথমে সিলেট নগরীর পাড়া-মহল্লায় ক্রিকেট খেলতো সেজন্য অনেক সময় মায়ের কাছে বকা খেতে হয়েছে তাকে। আমার মেঝ ভাই মেহেদি হাসান রাদীও ছিলেন ক্রিকেটার। খেলেছেন বিভিন্ন লিগে। রাদীর সঙ্গে সিলেট ক্রিকেট স্টেডিয়ামে যাওয়া শুরু করলো রাহী তারপর ১৪ বছর বয়সে সুযোগ পেয়ে যায় স্কুল লিগে। এরপর আর পেছনে ফেরে থাকাতে হয়নি রাহিকে। একে একে খেলতে থাকেন অনূর্ধ্ব ১৬, ১৭, ১৮ ও ১৯ ক্রিকেট দলে। নিজের ছেলেকে নিয়ে গর্বিত রাহীর মা সৈয়দা ফাতেমা খাতুন। তিনি বলেন, কিশোর বয়স থেকে রাহী ঘর-বাড়ি ছাড়া। শুধু ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত। বিভিন্ন ক্যাম্পে অনেক কষ্ট করেছে আমার ছেলেটা। পরিবারের সবার যে ছোট, সে আজ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সুযোগ পেয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি দোয়া করি আমার ছেলে দেশের জন্য ভালো কিছু করুক। যখন টিভিতে আমার ছেলেকে দেখি তখন মনে খুব আনন্দ লাগে। অন্যান্য খেলোয়াড় যারা ক্রিকেট খেলতে গেছেন সবার জন্য দোয়া করি, সবাই ভালোভাবে খেলুক। আমাদের জন্য তারা বিশ্বকাপ জিতে দেশে ফিরে আসুক। রাহী প্রাথমিক শিক্ষা জীবন শুরু কিশোরী মোহন সরকারী প্রাথমিক স্কুল থেকে। মাধ্যমিক পাস করেন দ্য এইডেট হাই স্কুল থেকে। উচ্চ মাধ্যমিক সিলেট মদন মোহন কলেজ থেকে আর বর্তমানে সিলেট মেট্রপলিটন ইউনিভার্সিটির ব্যবসা প্রশাসন বিভাগে অধ্যয়নরত আছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম বলেন, একসময় সিলেটের চারজন খেলোয়াড় জাতীয় ক্রিকেট দলে খেলত, অনেক দিন ধরে কেউ ছিল না দলে। তবে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে রাহী চান্স পাওয়ায় সত্যি আমরা অনেক আনন্দিত। দিন দিন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। রাহী বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ায় সিলেটের অনেক ছেলেরা ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন দেখবে। আশা করি আগামীতে আমাদের সিলেটের আরও অনেকেই জাতীয় দলে সুযোগ পাবে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২০১২ সালে যখন অস্ট্রেলিয়ায় আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ খেলতে যায় তখন সেই দলের সঙ্গে ছিলেন আবু জায়েদ রাহী। সেই থেকে শুরু করেছিলেন বল হাতে দাপট দেখানো, দেখিয়ে যাচ্ছেন এখনো। তখনকার বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক এনামুল হক বিজয়কে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল বোলিং শক্তি কি রকম? জবাবে তিনি বলেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার মতো কন্ডিশনে পেস বোলিংয়ে ঝড় তোলার জন্য আমার আছে আবু জায়েদ রাহীদের মতো বোলার। সেই বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া বিপক্ষে রিভার্স সুইংয়ে মুগ্ধ করেছেন সবাইকে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পর খেলেছেন বাংলাদেশ এ দলের হয়ে সেখানেও ছিলেন রাহী বল হাতে ধারাবাহিক পারফরমার। জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছেন, খেলেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগও। এছাড়া চারবার খেলেছেন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট লিগের সব চেয়ে বড় আসর বিপিএল। সব লিগেই অন্যতম সেরা পেস বোলার ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ কন্ডিশন যেখানে সব সময় পেস বোলারদের প্রতিকূলে, সেই প্রতিকূলতাকে হার মানিয়ে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন অন্যান্য পেস বোলারদের থেকে অনেক উপরে। নিখুঁত লাইন-লেন্থ এবং সুইং দিয়ে দিশেহারা করছেন দেশি-বিদেশি ব্যাটসম্যানদের। দেখিয়েছেন বল হাতে জাদু। ইফতেখার হোসেন শাওন নামে স্থানীয় এক ক্রিকেট ভক্ত বলেন, টিভিতে যখন খেলা দেখতাম তখন দলে আমাদের সিলেটের কেউ নেই দেখে কষ্ট লাগত। এখন রাহী রয়েছে দলে। তার মাঝেই আমরা সিলেটের সবার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই। আশা করি রাহী অনেক ভালো করবে। সৌরভ নামে আরেক ক্রিকেট ভক্ত বলেন, একসময় রাজিন সালেহ, তাপস বৈশ্য, অলক কপালি, এনামুল হক জুনিয়ররা যখন জাতীয় দলে খেলতো তখন মনে শান্তি লাগতো, তারপর কয়েক বছর চলে যায় সিলেটে কেউ সুযোগ পায়নি জাতীয় দলে। এত বছর পর রাহী জাতীয় দল তথা বিশ্বকাপ আসর খেলতে গেছে এটা আমাদের অনেক খুশির খবর। সূত্র: আরটিভি আর এস/ ২৭ মে



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2VT7eXF
May 27, 2019 at 12:10PM
27 May 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top