আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড এন্ড ওয়েলসে শুরু হতে যাচ্ছে আইসিসি বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর। মেগা এই ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী দশটি দল ইতোমধ্যেই কম বেশি দলের কম্বিনেশন ঠিক করেছে। অধিকাংশ দলই ইতোমেধ্য গুরুত্বপূর্ণ পজিশন স্থির করেছে। কিংবা কিছু কিছু পজিশন নির্ধারণে চিন্তা-ভাবনা করছে। সম্ভবত এই প্রথমবার টুর্নামেন্টে কোন দলকে আন্ডারডগ হিসেবে বিবেচনা করা যাচ্ছে না। টিম কম্বিনেশনের বিষয়ে বলতে গেলে প্রত্যেক দলেই কমপক্ষে একজন ভালো অল-রাউন্ডার আছে যিনি ব্যাট-বল হাতে ম্যাচ জেতাতে সক্ষম। অল-রাউন্ডার বলতে কেউ কেউ ব্যাটিং, কেউবা বোলিং আবার কেউ বা জেনুইন অল-রাউন্ডার যিনি কিনা ব্যাটিং-বোলিং উভয় বিভাগেই পারদর্শী। একজন জেনুইন অলাউন্ডার সব দলের জন্যই বিরাট এক আশির্বাদ বিশেষ করে বিশ্বকাপের মত টুর্নামেন্টে। ম্যাচের অবস্থা বিবেচনায় তারা অধিনায়কের কাছে একজন অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান কিংবা বোলারের ভুমিকা পালন করে থাকে। ০১. সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের এযাবতকালের সেরা ক্রিকেটারদের একজন। নিৎসন্দেহে এই মুহূর্তে বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা ও সবচেয়ে অভিজ্ঞ অল-রাউন্ডারদের একজন সাকিব আল হাসান। আইসিসি ওয়ানডে অল-রাউন্ডার তালিকায় বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে আছেন বাংলাদেশ টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। বর্তমানে বাংলাদেশ দলে থাকা সবচেয়ে অভিজ্ঞদের একজন সাকিব এবং টাইগারদের ব্যাটিং স্তম্ভ তিনি। ক্যারিয়ারে এই পর্যন্ত ১৯৫ ওয়ানডে ম্যাচে বল হাতে ২৪৭ উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৫৫৭৭ করেছেন এই বাঁ-হাতি স্পিনার। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে মিডল অর্ডারে দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন তিনি। বিশ্বকাপে দলের অনেকখানি নির্ভর করছে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ওপর। ইংল্যান্ডে মাটিতে সফল হতে দরকার আগ্রাসন ও সতর্কতা সবই রয়েছে সাকিবের মধ্যে। ইনিংসের মাঝামাঝিতে উইকেট শিকারে যথার্থ খেলোয়াড় সাকিব। ক্যারিয়ারে বহু ম্যাচে মিডলঅর্ডারে ব্রেকথ্রু এনে দিতে সফল হয়েছেন তিনি। আসন্ন বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ দল তার কাছ থেকে এমনটাই প্রত্যাশা করবে। ৫০ ওভারের এই মেগা ইভেন্টে নিজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য দিয়ে বাংলাদেশ দলের সাফল্যের গুরুত্বপূর্ণ একজন হবেন সাকিব। ০২. হার্দিক পাণ্ডিয়া ভারতের দীর্ঘ দিনের একজন পেস বোলিং অল-রাউন্ডার খুঁজে পাওয়া শেষ পর্যন্ত পূর্ণ হয়েছে। তিনি হার্দিক পাণ্ডিয়া। যদিও ধারাবাহিকতা ও নির্ভরতা বিচেনায় পাণ্ডিয়াকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। ভারতের হয়ে ম্যাচ জিততে নিজের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে স্পিন বলের বিপক্ষে ছক্কা হাকাতে সক্ষমতার জন্য বিশেষভাবে পরিচিত তিনি। মিডল অর্ডারে যেমন প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সক্ষম তেমনি আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করে ম্যাচ শেষ করে আসতেও পারঙ্গম হার্দিক। তবে ফাস্ট বোলারদের বিপক্ষে নিজের রেকর্ড সমৃদ্ধ করতে হবে তাকে। ১১৬.৫৮ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট চালানো পাণ্ডিয়া বল হাতেও বেশ কার্যকর। একজন বোলার হিসেবে পরিপক্ক পাণ্ডিয়া ধারাবাহিকও। আসন্ন বিশ্বকাপে নিঃসেন্দেহে ভারতের তুরুপের তাসের একজন হবে পাণ্ডিয়া। ০৩. বেন স্টোকস বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বে সবচেয়ে শক্তিশালি অল-রাউন্ডারদের একজন বেন স্টোকস। খেলাটির অঙ্গনে পা রাখার পর তিন ফরম্যাটেই ইংলিশ ক্রিকেটের গতি ধারায় পরিবর্তন এনে দিয়েছেন তিনি। শীর্ষ পাঁচের যে কোন পজিশনে ব্যাটিং করার সক্ষমতা ছাড়াও একজন বোলার হিসেবে নির্ভরতার সঙ্গে ১০ ওভার বোলিং করতে পারেন তিনি। গত কয়েক বছর যাবত ইংল্যান্ড দলের তুরুপের তাস-এ পরিণত হয়েছেন স্টোকস। বোলার হিসেবে তার উন্নতি ইংল্যান্ড দলের বাড়তি পাওনা। তারকা উইকেট নিতে পারদর্শী স্টোকস মিডল অর্ডারে ইংল্যান্ড দলের নির্ভরযোগ্য বোলার। ডেথ ওভারে প্রতি ম্যাচেই বোলার হিসেবে উন্নতি হচ্ছে স্টোকসের। ব্যাটিং সমস্যা সমাধানে বর্তমানে পাঁচ নম্বরে বিশ্ব সেরাদের একজন স্টোকস। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং স্টাইলের কারণে যে কোন মুহূর্তে ম্যাচের মোর ঘুরিয়ে দিতে পারেন তিনি। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যাটিং করতে সক্ষম এই তারকা খেলোয়াড় প্রতিপক্ষের বোলারদের সামনে একটি আতঙ্ক। তার ফিনিশিং ক্ষমতাও দলের জন্য একটি বড় সম্পদ। ৩৭.৪৯ গড় রান এবং ৯৪.২৪ স্ট্রাইক রেটের মালিক স্টোকসের রয়েছে ধারাবাহিকতায়। নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় দাবীদারদের মধ্যে একজন তিনি। ০৪. কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ধারাবাহিক না হলেও আন্তর্জাতি ক্রিকেটে অভিষেক হওয়ার পর থেকে ব্যাট-বল উভয় ক্ষেত্রেই একটা বিপ্লব ঘটিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের এই অল-রাউন্ডার। মাত্র ২৮ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১১০.৪৭ স্ট্রাইকের মালিক ডি গ্র্যান্ডহোম একজন নিজকে একজন গুরুত্বপূর্ণ ফিনিশার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বেশ কয়েকটি ম্যাচে একাই দলকে জয় এনে দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে সিম সহায়ক পিচে বল হাতে যে কোন ব্যাটসম্যানের জন্য একটা বড় হুমকি ডি গ্র্যান্ডহোম। আন্তর্জাতিক এবং ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে(আইপিএল) নিয়মিত উইকেট পাচ্ছেন তিনি। স্বভাবসিদ্ধভাবেই ইংল্যান্ড কন্ডিশন পেস সহায়ক। তাই আসন্ন বিশ্বকাপে কিউই দলের মূল্যবান সম্পদ হবেন ডি গ্র্যান্ডহোম। ব্যাট হাতে নির্ভরযোগ্য ফিনিশার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সাথে সাথে প্রয়োজনের সময়ে একজন পিঞ্চ হিটারও তিনি। ডি গ্র্যান্ডহোম থাকায় নিউজিল্যান্ড দলটিও বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। ব্যাট-বল হাতে তার পারফরমেন্স কিউইদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বকাপে দলের ভাগ্য নির্ধারনের একজন হবেন ডি গ্র্যান্ডহোম। ০৫. জেসন হোল্ডার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া জেসন হোল্ডার অনেক বেশি পরিপক্ক একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়কে পরিণত হন। খেলোয়াড় ও বোর্ডের মধ্যকার বিভিন্ন ঝামেলা, বিতর্ক এবং পূর্ণ শক্তির দল না পাওয়া সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে তিন ফরম্যাটেই দলের সেরা পারফরমারদের একজনে পরিণত হয়েছেন হোল্ডার। ম্যাচের চাহিদা অনুযায়ী শেষ দিকে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এবং বড় পার্টনারশীপ গড়ে তোলার সক্ষমতা হোল্ডারকে বিশেষ কিছুতে পরিণত করেছে। কখনোই হার মানা যাবেনা মানসিকতার হোল্ডার ব্যাট ও বল হাতে সামনে থেকেই দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। অন্য খেলোয়াড়রা ব্যর্থ হলেও প্রতিটি ম্যাচেই নিজের পারফরমেন্স দিয়ে দলকে অনুপ্রাণীত করেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল ধীরে ধীরে উন্নতি করছে এবং নিজেদের দিনে তারা যে কোন দলকে হারাতে সক্ষম। একজন খেলোয়াড় ও অধিনায়ক হিসেবে ধারাবাহিকতা ও উদ্দিপনা পূর্ণ পারফরমেন্সের মাধ্যমে দলের অগ্রগতির মূল কৃতিত্বের দাবিদার হোল্ডার। একজন অল-রাউন্ডার হিসেবে বর্তমানে ক্যারিয়ার সেরা ফরম্যা আছেন হোল্ডার। তার নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে পেতে পারে হারানো গ্যেরব। নিশ্চিতভাবেই আসন্ন বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের একজন হবেন হোল্ডার। এন এ/০৫ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2PJR6pZ
May 05, 2019 at 11:27PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন