কলকাতা, ২৪ মে- গোটা দেশে মোদী ঝড় বাঁকুড়াতেও আছড়ে পড়ল। জেলার দুই লোকসভা কেন্দ্র বাঁকুড়া ও বিষ্ণুপুর শাসক দলের কাছ থেকে কেড়ে নিল গেরুয়া শিবির। বৃহস্পতিবার রাতে ফল প্রকাশের পর দেখা যায় রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরের দুই মন্ত্রী ধরাশায়ী। বাঁকুড়ায় হেভিওয়েট তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বিজেপির ডাঃ সুভাষ সরকারের কাছে ১,৭৪,৩৩৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। অন্যদিকে, সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দফতরের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শ্যামল সাঁতরা বিজেপির সৌমিত্র খাঁ-এর কাছে ৭৮,০৪৭ ভোটে পরাজিত হয়েছেন। সব মিলিয়ে জনগণের রায়ে একপ্রকার পরাজিত ঘাসফুল শিবির। জেলায় তৃণমূলের এই বিপর্যয় নিয়ে এই মুহূর্তে নানান স্তরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। শাসক দলের হারের কারণ হিসেবে বেশিরভাগ অংশ থেকে গত পঞ্চায়েত ভোটের প্রসঙ্গ উঠে আসছে। পাশাপাশি ওই দলের নিচুতলার কর্মীদের ঔদ্ধত্য ও অল্পদিনে আর্থিকভাবে ফুলে ফেঁপে ওঠা কেও কেউ কেউ দায়ী করছেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এক শ্রেণীর তৃণমূল নেতা অল্প দিনেই বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েছেন। এই ঘটনা গ্রামীণ ভোটাররা ভালো চোখে দেখেননি বলে অনেকে মনে করছেন। ফলাফল ঘোষণার পর শাসক শিবিরের অন্দরে হারের কারণ নিয়ে কাঁটা ছেড়া শুরু হয়েছে। তবে প্রকাশ্যে দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্বের কেউ কোন কিছুই বলতে চাইছেন না। সংবাদমাধ্যমকে পর্যন্ত তারা এড়িয়ে চলছেন। একাধিক জেলা নেতাকে ফোন করা হলেও কেউই ফোন ধরেননি। তবে তৃণমূলের বাঁকুড়া জেলা সভাপতি বলেছেন, বাম ভোট রামে যাওয়াতেই এই পরিণতি। সিপিএম নিজেদের ভোট ব্যাংক ধরে রাখতে পারলে ফলাফল উলটো হতো বলেই তাঁর দাবি। যদিও সিপিএম নেতৃত্ব এই দাবি মানতে নারাজ। সিপিএমের পক্ষ থেকে এই ফলাফলের পিছনে শাসক দলের সীমাহীন সন্ত্রাসকেই দায়ী করা হয়েছে। তাদের দাবি, তৃণমূলের অত্যাচার থেকে বিজেপি তাদের রক্ষা করতে পারবে। এই ভাবনা থেকেই মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। একই সঙ্গে তাদের চেয়ে তৃণমূলের ভোট বেশি বিজেপির দিকে পড়েছে বলেও সিপিএমের তরফে দাবি করা হয়েছে। শাসক দলের জেলা শীর্ষ নেতৃত্ব মুখে যাই বলুন নিচু তলার কর্মীরা সেই তত্ত্ব মানতে নারাজ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্লকস্তরীয় নেতা বলেন, পঞ্চায়েত ভোটে গায়ের জোরে বিরোধী দলগুলিকে প্রার্থী দিতে না দেওয়াটাই আমাদের কাল হয়েছে। বিষ্ণুপুর মহকুমা জুড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের একটি আসনেও ভোট হয়নি। সব কটিতেই শাসকদল বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় জয়ী। প্রায় একই অবস্থা খাতড়া ও বাঁকুড়া সদর মহকুমাতেও। এই মুহূর্তে প্রচার মাধ্যম বেশ শক্তিশালী। সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকা পর্যন্ত জোর করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে না দেওয়ার ছবি পৌঁছে গিয়েছে। এবার মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়ে প্রায় এক বছরের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের প্রকাশ ভোটের মাধ্যমে ঘটিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন। অন্যদিকে, ২০১৪ সালে চিত্রাভিনেত্রী মুনমুন সেনকে এখানে প্রার্থী করে তৃণমূল। তিনি সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার পর গত পাঁচ বছরে নিজের নির্বাচনী এলাকায় সেভাবে পা রাখেননি। তাঁকে নিয়ে জনমানসে ক্ষোভ রয়েছে। প্রয়োজনেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এবার আর এক হেভিওয়েট সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাস ফুল শিবির। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এক্ষেত্রে দুটো জিনিস কাজ করেছে বলে মনে করছেন জেলা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের মতে, একদিকে মুনমুন সেনের মতো তাঁকেও চাইলেও পাওয়া যাবে না। তিনি কলকাতার মানুষ। এটা যেমন সাধারণ মানুষ ভেবেছেন। তেমনি অন্যদিকে জেলায় কি যোগ্য লোকের অভাব! বার বার বাঁকুড়া কেন্দ্রে বাইরে থেকে প্রার্থী আনতে হচ্ছে। এই ভাবনাটাও শাসক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের একটা বড় অংশের মনে হয়েছে। তাই এধরণের ফলাফলের সম্মুখীন হতে হল তৃণমূলকে। একই সঙ্গে ভোটের আগের রাতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া খাতড়ার শ্যামল সরকার ওরফে বেণু সরকারের গ্রেফতারির ঘটনাও জঙ্গল মহলের ভোটে ব্যাপক প্রভাব কাজ করেছে বলে তারা মনে করছেন। বিষ্ণুপুরে মানুষ পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় ভোট দিতে না পারেনি৷ তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায় সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের নামে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে৷ আদালতের নির্দেশে জেলায় ঢুকতে না পারার ঘটনা বিজেপিকে অনেকটাই এগিয়ে দিয়েছে। আরও অনেক জায়গার মতো এখানেও দলীয় গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের ঘটনা তো রয়েইছে। একই সঙ্গে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো অনেক বড়, ছোটো, মাঝারি নেতাকে পুলিশি হয়রানির ধারাবাহিক ঘটনাও শাসক দলকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ফেলে দিয়েছে। এমনটাই মনে করছেন জেলা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ। নিজের পরাজয় প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে শ্যামল সাঁতরা গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়ে ইভিএম কারচুপির অভিযোগ আনেন। বিষয়টি নিয়ে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাবেন বলে জানান। বিষ্ণুপুরের ফলাফল নিয়ে উচ্ছ্বসিত পদ্ম শিবির। বিজেপির বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি স্বপন ঘোষ বলেন, বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর সৌমিত্র খাঁকে জেলায় ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। কিন্তু মানুষ পরিবর্তন চাইলে তা আটকানোর ক্ষমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনের নেই বলেই তিনি দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, রাজ্য সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বেশ কিছু কেন্দ্রীয় প্রকল্প চালু করতে দেয়নি। শুধুমাত্র লাগামহীন সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না৷ বাংলা তথা বিষ্ণুপুরের মানুষ তা প্রমাণ করে দিলেন বলেও এদিন তিনি দাবি করেন। আর/০৮:১৪/২৪ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2K0axdi
May 24, 2019 at 04:34PM
এই সম্পর্কিত আরও সংবাদ...
মাওবাদী হানায় মৃত তথা নিখোঁজ ৪ জনের পরিবারকে নিয়োগপত্র দিলেন মুখ্যমন্ত্রী
07 Oct 20200টিকলকাতা, ৭ অক্টোবর- কথা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঙ্গলবারের ঘোষণা মতোই ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভা থেকে মাও...আরও পড়ুন »
ডেমোক্রেসির বদলে বাংলায় মমতাক্রেসি চলছে
06 Oct 20200টিকলকাতা, ৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মণীশ খুনের ঘটনায় উত্তপ্ত পশ্চিমবঙ্গ
06 Oct 20200টিকলকাতা, ০৬ অক্টোবর- বিজেপি নেতা মণীশ শুক্ল খুনের ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও উত্তপ্ত পরিস্থিতি ব...আরও পড়ুন »
বিজেপি নেতা মনীশ শুক্লার মৃত্যু ঘিরে রণক্ষেত্র বারাকপুর
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- অর্জুন সিং ঘনিষ্ঠ বিজেপির দাপুটে নেতা মণীশ শুক্লাকে খুনের ঘটনায় সোমবার সকাল থেক...আরও পড়ুন »
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা
05 Oct 20200টিকলকাতা, ৫ অক্টোবর- পশ্চিমবঙ্গের ব্যারাকপুরের মণীশ শুক্লা নামে এক বিজেপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে ...আরও পড়ুন »
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.