কলকাতা, ৩০ মে- কান টানতেই কি বেরিয়ে এল সারদা তদন্তের কিছু নথি? এত দিন যে সব নথিপত্রের জন্যে হাপিত্যেশ করে বসেছিল সিবিআই, বৃহস্পতিবার আইপিএস অর্ণব ঘোষের দ্বিতীয় দফায় জেরা চলাকালীন তারই একটা অংশ বেরিয়ে পড়ল বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। এ দিন দুপুরে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে প্রিজন ভ্যানে করে দুট্রাঙ্ক ভর্তি নথি নিয়ে আসে বিধাননগর পুলিশ। তার পর থেকেই জোর জল্পনা, এই নথির ভিত্তিতেই কি কান-এর পাশাপাশি মাথার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে পারবে সিবিআই? যদিও গোয়েন্দাদের একটা অংশ মনে করছেন, এই দুট্রাঙ্ক আসলে হিমশৈলের চূড়ামাত্র। চিটফান্ড-কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা বেশ কয়েক বার নথিপত্র হস্তান্তরের জন্যে রাজ্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছিলেন। তা নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্রের মধ্যে সংঘাতের মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়েছে বেশ কয়েক বার। সে সব নথিপত্রের জন্যই রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)-এর অন্যতম সদস্য রাজীব কুমারকে শিলংয়ে টানা জেরাও করেছে সিবিআই। তখন শীর্ষ আদালতের রক্ষাকবচ ছিল রাজীবের। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে গ্রেফতার করা যাবে না। সম্প্রতি সেই রক্ষাকবচ উঠে গিয়েছে। ফের রাজীব কুমারকে তলবও করেছে সিবিআই। যদিও তিনি হাজিরা না দিয়ে, সিবিআই-এর নোটিসে আইনি ত্রুটি আছে বলে তা খারিজের আবেদন জানিয়েছেন হাইকোর্টে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা রীতিমতো বিরক্ত। এরই মধ্যে বিধাননগরের তৎকালীন গোয়েন্দা প্রধান অর্ণব ঘোষকে তলব করে সিবিআই। কারণ, সারদা কাণ্ড সামনে আসার পর বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট তদন্ত শুরু করে। সেই সময় বিধানগরের সিপি ছিলেন রাজীব কুমার। তিনি সিটের অন্যতম সদস্যও ছিলেন। বুধবার প্রায় ৯ ঘণ্টা জেরা করা হয়েছিল অর্ণব ঘোষকে। শিলংয়ে রাজীব কুমারের কাছ থেকে যে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি, অর্ণবকে জেরা করে সেই ধোঁয়াশা কিছুটা কেটেছে বলে খবর সিবিআই সূত্রে। যদিও এখনও অনেক কিছুই অজানা রয়েছে। সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা একটি পেনড্রাইভ এবং লাল ডায়েরির খোঁজে রয়েছেন। প্রথম দফার জেরাতে অর্ণব ঘোষের কাছে সেই নথিপত্র চাওয়া হয়। তিনি প্রথমে এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সব জানেন বলে এড়িয়ে যেতে চান। বৃহস্পতিবার ফের তাঁকে তলব করা হয়। এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন অর্ণব ঘোষ। সারদার তদন্তকারী অফিসার তথাগত বর্ধনের উপস্থিতিতে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ। এক দিকে যখন জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, তখন হঠাৎ দুই ট্রাঙ্ক ভর্তি নথিপত্র নিয়ে আসেন বিধাননগর দক্ষিণ থানার সাব ইনস্পেক্টর আর আই মোল্লা। তিনি সারদা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তখন যে সব নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল, সেই প্রক্রিয়ার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানার এই অফিসার। ইতিমধ্যেই তাঁকে জেরা করেছে সিবিআই। পুলিশ সূত্রে খবর, সারদা তদন্তের সময় মিডল্যান্ড পার্কের অফিস-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে সারদা কণ্ডের এই সব নথি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এত দিন রাজ্য পুলিশের হেফাজতেই ছিল এই নথি। প্রশ্ন উঠছে, গত কয়েক বছর ধরে বার বার বলেও, এ সব নথি পাওয়া যায়নি। এ দিন কেন সেগুলি হঠাৎ ঝুলি থেকে বার করা হল? কার নির্দেশেই বা সিবিআইকে নথি দিতে রাজি হয়ে গেলেন বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ অফিসার আর আই মোল্লা। এ বিষয়ে ওই পুলিশ অফিসার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। যদিও তিনি তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, ওই নথি মিডল্যান্ড পার্কের। সিবিআই প্রথম থেকেই অভিযোগ করছিল, সারদার তদন্ত সংক্রান্ত নানা তথ্য-প্রমাণ আড়াল করা আড়াল করার চেষ্টা করেছে রাজ্যের পুলিশ-প্রশাসন। নথিপত্র নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। ওই নথি সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই নথিপত্র হাতে পাওয়ার পর এ বার কি রাজীব কুমার এবং অর্ণব ঘোষের বিরুদ্ধে আরও কড়া পদক্ষেপ করবে সিবিআই? প্রাক্তন এক আইপিএস বলছেন, কান অর্থাৎ অর্ণবকে টানতেই যদি এত নথি বেরিয়ে আসে, তা হলে মাথা রাজীব কুমারকে জেরা করলে তো সবটাই জানা যাবে। আর এস/ ৩০ মে
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/2JOryb5
May 30, 2019 at 01:24PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন