দিসপুর, ০৫ জুন - ঈদের ঝলমলে আলো, ভিড়, রকমারি পসরার রাজপথটা অন্য মহাদেশ বলে মনে হয় প্রায়ান্ধকার ঘুপচি ঘরে। সেখানে বসে-বসেও হাত-পা কাঁপে মধ্য আশির অশক্ত বৃদ্ধের। তবু কাহিল শরীরটা টেনে গত বছর আসামে গিয়েছিলেন। গোয়ালপাড়ায় জেলবন্দি পুত্র আসগর আলিকে দূর থেকে একটি বার দেখতে পেয়েছিলেন পার্ক সার্কাসের মোহাম্মদ জরিফ ওরফে মোড়ল। জরিফ না মোড়ল বাবার নাম নিয়ে বিভ্রান্তির জেরেই বড় ছেলের পরিচয় ধোঁয়াশা-বন্দি। বিদেশি সন্দেহে দুবছর ধরে ডিটেনশন শিবিরে আটক রয়েছেন তিনি। তিন দশক আগে সোফার কারখানায় কাজ করতে আসামের রাজধানী গৌহাটি গিয়েছিলেন পার্কসার্কাসের চমরু খানসামা লেনের বাসিন্দা আসগর। গৌহাটির ইসলামপুরে স্ত্রী শেহনাজ বেগম, একমাত্র কিশোরপুত্রকে নিয়ে সংসার করছিলেন। সেই ভাড়া বাড়িতেও ইদের খুশির ছোঁয়া নেই। আরও বছরখানেক জেলে কাটালে হয়ত আসগরের জামিন মিলবে। কিন্তু বন্ডের দুলক্ষ রুপি কোত্থেকে আসবে ভেবে কূল পাচ্ছে না পরিবার! ২০১৭ সালে হঠাৎই আসগরের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক নাগরিক এর নোটিস আসে। আদালতে বলা হয়, তার বাবার নামে গরমিল রয়েছে। কোথাও বাবার নাম শেখ মোড়ল, কোথাও আবার মুহাম্মদ জরিফ। আসগরের ছোট ভাই আরশাদ বলেন, মোড়ল আসলে বাবার ডাক নাম। কিন্তু ভোটার লিস্টে শেখ মোড়ল নামটাই ছিল। মেজ ভাই আশরাফ বলেন, পাড়ার লোকে বাবাকে তুমি কোথাকার মোড়ল হে বলে হাসাহাসি করত দেখে, নামটা পাল্টে দিই। বাবার ভোটার কার্ডে মোহাম্মদ জরিফ নামটার জন্যই এখন দাদার যত সমস্যা! জরিফ এবং মোড়ল যে একজন, বোঝাতে বিস্তর নথি দিয়েছিল আসগরের পরিবার। তাও ২০১৭ সালের ১৪ জুলাই আসগরকে বন্দি করে ফরেনার্স ট্রাইবুনাল। গৌহাটি হাইকোর্টেও মামলায় হেরে যান তারা। কিছু শুভানুধ্যায়ীর সাহায্যে এরপর সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিলেন আসগরের পরিজনেরা। গত ১০ মে সর্বোচ্চ আদালতের তরফে জানানো হয়েছে, এই বিষয়টিতে তারা হস্তক্ষেপ করবেন না। আদালত সূত্রের খবর, ১৯৬৬ সালে বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার আসগরের বাবার নাম, পাসপোর্ট, রাসায়নিক তৈরির কারখানায় চাকরির পিএফ-নথি-সবই জমা পড়েছিল। কিছু নথি অসম্পূর্ণ। কয়েকটি জায়গায় বয়সের গরমিল। আসগরের বাবার নাম-পরিচয় নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরের প্রশংসাপত্রও ছিল। কিন্তু সেটাও গ্রাহ্য করেনি আদালত। তিন বছরের বেশি ডিটেনশন শিবিরে বন্দি বিদেশিদের অবশ্য শর্তসাপেক্ষে জামিনের নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু জামিনের দুলক্ষ রুপি নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। আসগরের আত্মীয় জিশান আলি সম্প্রতি গোয়ালপাড়া জেলে তার সঙ্গে দেখা করে এসেছেন। তিনি বলেন, আসগর ভাইয়ের শরীর খারাপ। চোখ-কানও কমজোর! জেলে থাকার দুরবস্থা ও প্যারোলের দাবিতে অন্যদের সঙ্গে জানুয়ারিতে অনশনেও বসেছিলেন আসগর। তাতেও শরীর কাবু। পার্ক সার্কাসে বাবা-মায়ের চিকিৎসায় মাসে-মাসে আসগরই যা টাকা দিতেন। ব্যাগ ও টুপির কারখানার কর্মী ছোট দুই ভাইয়ের সেটুকু সঙ্গতি নেই। আর্থিক বিপর্যয়ে ও আসগরের বাবা-মায়ের অসুস্থতায় সাহায্য করছেন স্থানীয় কয়েক জন সমাজকর্মী। এর পরে কী করবেন তারা? সুপ্রিম কোর্টে আসগরের আইনজীবী আনাস তানভিরের কথায়, পশ্চিমবঙ্গ সরকার বা বাংলার শাসক দলের দ্বারস্থ হব! তবে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে বলে এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি পরিবারটির। তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি ডেরেক ওব্রায়েন অবশ্য খোঁজ নেয়ার আশ্বাস দিচ্ছেন। সূত্র: আনন্দবাজার এন এ/ ০৫ জুন
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe http://bit.ly/316n8ln
June 05, 2019 at 08:55AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন