লন্ডন, ১৫ জুলাই- বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞের পর্দা নেমেছে রবিবার (১৪ জুলাই) ইংল্যান্ডের লর্ডসে। শ্বাসরুদ্ধকর সেই ফাইনাল ম্যাচটি মন জয় করে নিয়ে গোটা বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের। এদিন নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছে ইংল্যান্ড। মূল ম্যাচের নির্ধারিত ১০০ ওভারের খেলায় পিছিয়ে ছিল না কোনো দলই। নিউজিল্যান্ড আগে ব্যাট করে ২৪১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেদের ৫০ ওভার শেষে ইংল্যান্ডের সংগ্রহও দাঁড়ায় ২৪১ রান। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো টাই হয় ফাইনাল ম্যাচ এবং শিরোপা নির্ধারণের জন্য ম্যাচ নেওয়া হয় সুপার ওভারে। যেখানে মুনসিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন কিউই অলরাউন্ডার জিমি নিশাম। বাঁহাতি কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের ওভারে বাটলার ও স্টোকস মিলে করেছিলেন ১৫ রান। পরে ইংল্যান্ডের পক্ষে বল হাতে আসেন জোফরা আর্চার। সে ওভারের ৫ বলেই ১৩ রান করে ফেলেন নিশাম। শেষ বলে ১ রান নিতে সক্ষম হন গাপটিল। ফলে টাই হয় সুপার ওভারও। কিন্তু মূল ম্যাচে বেশি বাউন্ডারি হাঁকানোয় প্রথমবারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ইংল্যান্ড। খেলার শেষ বল পর্যন্ত কেউ বলতে পারেনি কে জিতবে, ইংল্যান্ড নাকি নিউজিল্যান্ড। আর যখন বলা গেল, তখনও মোটা দাগের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে ১ রান। ওই রানটি না হলে বিশ্বকাপের ট্রফি যেতো নিউজিল্যান্ডের হাতে। রবিবার রাতে লর্ডসে যে মহাকাব্যিক ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে শেষ ৩ বলে ৯ রান দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। ট্রেন্ট বোল্টের করা চতুর্থ বলটি ডিপ মিডউইকেটে পাঠিয়ে ২ রান চুরি করতে চেয়েছিলেন বেন স্টোকস। মার্টিন গাপটিল বেশ ভালো থ্রো করেছিলেন। স্টাম্পে সরাসরি লাগলে হয়তো রানআউট হতে পারত। সে শঙ্কাতেই পড়িমরি করে ডাইভ দিয়েছিলেন স্টোকস। বল তার ব্যাটে লেগে থার্ড ম্যান দিয়ে পার হয় সীমানা! পুরো ঘটনা এবং স্টোকসের ক্ষমা প্রার্থনাসুলভ চাহনি দেখে তখনই বোঝা গেছে, এ বাউন্ডারি হওয়ায় তার ইচ্ছাকৃত কোনো হাত ছিল না। নিতান্ত অনিচ্ছাকৃতভাবেই ঘটে গেছে। সে যাই হোক, মাঠের সহকর্মী আম্পায়ারের সঙ্গে আলোচনা করে স্কোরবোর্ডে ৬ রান (দৌড়ে ২ রান ও ওভার থ্রোতে ৪ রান) যোগ করার সিগন্যাল দেন আরেক আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। এতে ম্যাচে ফিরে আসার পথ পেয়ে যায় ইংল্যান্ড। ঘুরে যায় ম্যাচের মোড়। ৩ বলে ৯ রান থেকে সমীকরণ নেমে আসে ২ বলে ৩ রানে। এরপর বাকিটা ইতিহাস। কিন্তু আম্পায়ারের দেওয়া ৬ রান নিয়ে চলছে বিতর্ক। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের প্রশ্ন, ওটা ৬ রান না, ৫ রান হবে? আর এ প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে ক্রিকেটেরই ফিল্ডারদের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃত কাজ নিয়ে আইনের ১৯.৮ অনুচ্ছেদ। সেখানে বলা হয়েছে, ফিল্ডারের ওভারথ্রো কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে করা কোনো কিছু থেকে বাউন্ডারি হলেবাউন্ডারি যোগ হবে এবং ব্যাটসম্যানরা একসঙ্গে যত রান নিয়েছেন সেটাও, যদি থ্রোয়ের সময় তারা ইতোমধ্যেই একে অপরকে পার হয়ে যান। আইনের শেষের কথাটি নিয়েই প্যাঁচ লেগেছে। ওই ঘটনার ভিডিও রিপ্লে দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, গাপটিল থ্রো করার সময় ইংল্যান্ডের দুই ব্যাটসম্যান বেন স্টোকস ও আদিল রশিদ দ্বিতীয় রান নেওয়ার জন্য একে অপরকে ক্রস (পার হওয়া) করেন নি। অর্থাৎ গাপটিল যখন থ্রোয়ের জন্য বল তুলছিলেন, স্টোকস ননস্ট্রাইক প্রান্তে আর আদিল রশিদ স্ট্রাইকারের প্রান্তে ছিলেন। অর্থাৎ দৌড়ে ২ রান নয়, ১ রান হবে আর সঙ্গে বাউন্ডারি-মোট ৫ রান। আইনটির অস্পষ্টতার কারণেই এ প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ফিল্ডারদের থ্রো নিয়ে যেমন পরিষ্কার করে কিছু বলা হয়নি, তেমনি গোটা প্রক্রিয়ায় ব্যাটসম্যানদের ভূমিকা নিয়েও স্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। গাপটিলের থ্রো কিন্তু উইকেটরক্ষক বরাবরই ছিল। ব্যাটসম্যানের ব্যাটে লাগার কারণে তা ওভারথ্রো হয়েছে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ম্যাচ শেষে এ ঘটনা নিয়ে বলেছেন, এটা লজ্জার যে বল স্টোকসের ব্যাটে লেগেছে। তবে আমি আশা করি, এ ধরনের মুহূর্তে যেন এমন কিছু আর না ঘটে। সে যাই হোক, গাপটিলের ওভারথ্রোয়ে ইংল্যান্ড ৫ রান পেলে ম্যাচের ফল হয়তো অন্য রকমও হতে পারত। অপরদিকে ম্যাচ শেষে স্টোকস বলেন, আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। গত চার বছর ধরে আমরা যে কঠিন পরিশ্রম করেছি তার ফল পেলাম আজ। আমার মনে হয় ক্রিকেট ইতিহাসে আর কখনও এমন হবে না। বাটলার ও আমি জানতাম, আমরা যদি শেষ পর্যন্ত থাকি তাহলে নিউজিল্যান্ডকে চাপে রাখতে পারবো। কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসনের কাছে ক্ষমা চেয়ে তিনি বলেন, বলটা আমার ব্যাটে এসে হঠাৎই লেগে যায়, আমি এর জন্য উইলিয়ামসনের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। জোফরা আর্চার আজ পুরো বিশ্বকে নিজের প্রতিভা দেখিয়েছে। এই ওয়ানডে টিমের সবাই, টেস্ট টিমের সবাই, আমার পরিবারের সবাই যেভাবে সাপোর্ট দিয়েছে তা সত্যিই অসাধারণ। সূত্র: বিডি২৪লাইভ আর/০৮:১৪/১৫ জুলাই



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2JJ14VQ
July 15, 2019 at 09:05AM
15 Jul 2019

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

:) :)) ;(( :-) =)) ;( ;-( :d :-d @-) :p :o :>) (o) [-( :-? (p) :-s (m) 8-) :-t :-b b-( :-# =p~ $-) (b) (f) x-) (k) (h) (c) cheer
Click to see the code!
To insert emoticon you must added at least one space before the code.

 
Top