দিসপুর, ২৬ আগস্ট- আসামে মুসলিমদের জন্য বিশাল আকারের বন্দি শিবির নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ভারতের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন নরেন্দ্র মোদির সরকার। জম্মু-কাশ্মীরে হাজার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করছে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আসামে মুসলিম বন্দি শিবির নির্মাণ ও কাশ্মীরে গণ-গ্রেফতারের পৃথক এ দুই ঘটনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত সদস্য প্রমীলা জয়পাল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে দেয়া এক টুইটে তিনি বলেছেন, কাশ্মীরে দুই হাজার মানুষকে ভারত সরকারের গ্রেফতারের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। আসাম ও কাশ্মীরের মুসলিমদের জন্য বিশাল আকারের বন্দি শিবির নির্মাণে ভারত সরকারের শীর্ষ পরিকল্পনার অংশ এটি। উল্লেখ্য, গত বছরের ৩০ জুলাই ভারতীয় নাগরিকত্বের চূড়ান্ত খসড়া তালিকা থেকে আসামের প্রায় ৪০ লাখ মানুষের নাম বাদ দেয়া হয়। আসামের ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেন (এনআরসি) কর্তৃপক্ষ এ তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে আসামে পাড়ি জমানো অবৈধ অভিবাসীদের চিহ্নিত করার লক্ষ্যে ১৯৫১ সালের পর গত বছর প্রথমবারের মতো নাগরিকত্বের তালিকা হালনাগাদ করে আসাম। এনআরসির কর্মকর্তারা বলেছেন, এটি খসড়া তালিকা মাত্র। সুতরাং এখনই কাউকে গ্রেফতার অথবা নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে না। তবে সমালোচকরা বলেছেন, নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়াদের অধিকাংশই প্রদেশের সংখ্যালঘু মুসিলম জনগোষ্ঠীর সদস্য এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। দেশটির ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী এবং এমপি বিভিন্ন সময়ে আসামের এই বাংলাদেশি মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছেন। এনআরসি কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে ৩ কোটি ২৯ লাখ আবেদন জমা পড়েছিল। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই উতড়ে নাগরিকত্বের উপযুক্ত হিসেবে ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষ তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন। তবে যথাযথ নথি ও তথ্য-উপাত্ত দিতে না পারায় ৪০ থেকে ৪১ লাখ আসামিজ ভারতীয় নাগরিকত্বের তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান থেকে ভারতে পাড়ি জমানোর পর যে সংখ্যালঘুরা ভারতে ছয় বছর অতিবাহিত করেছেন; তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন বলে কেন্দ্র থেকে একটি আইনের প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আসামসহ অন্যান্য রাজ্য সরকার এই আইনের বিরোধিতা করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদি নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের অঙ্গীকার করেছিলেন। ক্ষমতায় আসার পর ২০১৬ সালে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার নাগরিকত্ব সংশোধন বিল-২০১৬ সালে পাস করে। একই ধরনের এক টুইটে মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য ও হাউস ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডাম শিফ অধিকৃত কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। টুইটারে তিনি বলেছেন, কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই কাশ্মীরের হাজার হাজার মানুষকে আটকে রাখা ও বাইরের বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। কাশ্মীরের এই পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কাশ্মীরকে রাজনৈতিক বন্দি শিবির বানানোর সুযোগ না দেয়ার জন্য ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদ খান। গুরুতর মানবিক সঙ্কটের মুখোমুখি কাশ্মীরিদের দুর্দশার প্রতি মনোযোগ দেয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টের এক ফ্যাক্টচেকার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোলা বারুদ এবং পেলেট গানের গুলিও কাশ্মীরিদের দমন করতে পারছে না। ভারতের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরের জনগণ পুরো উপত্যকাজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন। ভারত সরকারের কাশ্মীর শান্ত থাকার দাবির কথা উল্লেখ করে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা এবং সেখানকার ভিডিও ফুটেজের সঙ্গে বিজেপি সরকারের দাবির মিল নেই। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার মানুষ সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করছেন। কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, গত ৫ আগস্ট কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর থেকে প্রত্যেকদিন বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ। এই বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে ভারতীয় নিরাপত্তাবাহিনী গোলাবর্ষণ ও পেলেট গান থেকে গুলি ছুড়তে দেখা যায় ভিডিওতে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাশ্মীরের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন ভিডিওর ব্যাপারে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সেখানে পেলেট গানের গুলি ও গোলা বর্ষণের অভিযোগ স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে বলে ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে। আর/০৮:১৪/২৬ আগস্ট
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2MD4FIO
August 26, 2019 at 09:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন