ঢাকা, ১২ নভেম্বর - বাংলাদেশের তরুণ সম্ভাবনাময় ক্রিকেটারদের একটিই সমস্যা, বেশির ভাগেরই শুরুটা ভাল হয়। ক্যারিয়ারের শুরুতে বড় অংশ নিজেকে মেলে ধরেন। প্রথম কয়েক ম্যাচের মধ্যেই নিজেকে বেশ ভালভাবে উপস্থাপন করেন। এরপর ধীরেধীরে নৈপুণ্যের দ্যুতি কমতে থাকে। শুরুর প্রত্যয়, ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্প যায় কমে। যে কোন কারণেই হোক সময় গড়ানোর সাথে সাথে কম বেশি সবারই নৈপুণ্যের ঘাটতি দেখা দেয়। বেশির ভাগেরই মাঠের পারফরমেন্স খারাপ হয়। তারপর হঠাৎ একটি সময় গিয়ে ছন্দপতন। এনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, মোস্তাফিজুর রহমান, সাব্বির রহমান রুম্মন, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত, লিটন দাস- সবারই শুরুটা ভাল হয়েছিল। প্রত্যেককে মনে হয়েছিল তারা তেজি ঘোড়া। অনেকদিন জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে এসেছেন; কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে তার উল্টোটা। তারপর যত সময় গড়াচ্ছে ততই তাদের পারফরমেন্সের দ্যুতি কমে যাচ্ছে। এখন টাইগার সমর্থকরা তাই শুরুতে কোন তরুণকে ভাল খেলতে দেখলেও উল্লাসিত হন কম। বরং চিন্তা করেন বেশি। ভাবেন , আচ্ছা অমুকের এই নৈপুণ্যের ঝিলিক ও পারফরমেন্সের আলোকচ্ছটা টিকে থাকবে তো? একই চিন্তা শুরু হয়েছে, নাইম শেখকে নিয়েও। বলার অপেক্ষা রাখে না, জাতীয় দলের লাল সবুজ জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেই যথেষ্ঠ ভাল খেলে এখন হঠাৎ পাদপ্রদীপের আলোয় ফরিদেপুরের এ ২০ বছর বয়সী বাঁ-হাতি ওপেনার। ভারতের মত দলের বিপক্ষে তার সাহসী ও বুক চিতিয়ে বিগ হিটিং ও ফ্রি-স্ট্রোক খেলা দেখে অনেকেই মুগ্ধ। দিল্লিতে প্রথম ম্যাচে একটু আড়ষ্ট (২৮ বলে ২৬) থাকলেও তারপর খোলস ছেড়ে বেরিয়ে নিজের স্বভাবসূলভ সাহসী ও আক্রমণাত্মক ব্যাটিংটাই করেছেন নাইম। বিশেষ করে, নাগপুরে ভারতের সাথে শেষ ম্যাচে তার ৪৮ বলে ৮১ রানের ঝড়ো ইনিংস সবারই অকুন্ঠ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই তার মাঝে তামিম ইকবালে শুরুর ছায়া খুঁজে পেয়েছেন। সবারই কথা, নাইম শেখের মত পারফরমারই দরকার জাতীয় দলে। যার সাহস আছে। মানসিক দৃঢ়তাও বেশি। শটস খেলতে ভয়-ডর পায় না। প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর চড়াও হয়ে খেলার ইচ্ছে ও সংকল্পটা আছে। পাশাপাশি একটি চিন্তা। কিন্তু নাইমের অবস্থা আবার অন্যদের মত হবে না তো? কিছুদিন পর ভাল খেলার এই তীব্র আকঙ্খা না আবার যায় কমে? জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশারের কাছেও রাখা হয়েছিল এ প্রশ্ন, আচ্ছা! নাইম শেখকে দেখে কেমন মনে হলো? তার এই উঠে আসা আপনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাকে এইচপি (হাই পারফরমেন্স ইউনিট, ইমার্জিং ও এ) দলের হয়ে খেলতে আসাটা খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাই আপনার মূল্যায়ন কি? হাবিবুল বাশারের মূল্যায়ন, আমরা এইচপি, ইমার্জিং ও এ দলে অনেকগুলো ছেলেকে নিয়ে কাজ করছি। তাদেরই একজন নাইম শেখ পারফরম করেছে। নিজের সামর্থ্যের পরিচয় দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য ভাল। স্বস্তির। আনন্দের। নাইমের নিজের জন্য খুব ভাল। তারচেয়েও বড় কথা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও ভাল যে একা তরুণ হাই পারফরমেন্স ইউনিট থেকে উঠে এসে ভারতের মত শক্তিশালী ও কঠিন প্রতিপক্ষর সাথে ভারতের মাটিতে এমন ভাল পারফর্ম করেছে। তবে এখনই নাইমের ব্যাপারে পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে নারাজ হাবিবুল বাশার। তাই তো মুখে এমন সতর্ক সাবধান বাণী, শুরু খুব ভাল হয়েছে নাইমের। তবে সেটাই শেষ নয়। প্রথম কথা হলো, ক্যারিয়ারকে দীর্ঘ করতে হবে। এবং ধারাবাহিকভাবে ভাল পারফর্মও করতে হবে। এখন এমন পারফরমেন্স যাতে বজায় থাকে, সেটাই আসল। এখন এটা কন্টিনিউ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। দেখার বিষয় হলো আগামীতে সে কেমন খেলে, কেমন করে? বাশারের মূল্যায়ন, টেকনিক ও টেম্পারামেন্ট যেমনই থাকুক না কেন, নাইম শেখ কিন্তু রানের ভিতরই ছিল। সে এইচপি, ইমাজিং আর এ দলের হয়েও রান করেছে নিয়মিত। হি ইজ অ্যা পারফরমার। পারফর্ম করছে। হাবিবুল বাশারের শেষ কথা, নাইম শেখের ক্যারিয়ারের জন্য পরবর্তী ৬ মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। তবে তাদের জন্য একটা ভাল খবর হলো, ওই সময়টাতেও হয়ত খেলার ভিতরেই থাকবে। মাঝে একটু থমকে থাকলেও এখন আমাদের এইচপি, ইমার্জিং আর এ দলের প্রচুর খেলা। দেশে ও বিদেশে খেলার মধ্যেই থাকবে। অনুশীলনটাও হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা, এখন যারা এইচপি, ইমার্জিং দলে আছে, তারা একদম আমাদের নিবিঢ় পর্যবেক্ষণেই আছে। থাকবেও। দেখা যাক, আশা করছি ভালই হবে। নাইম পারফরমার। তবে সেই পারফরমেন্সটা মাঠে এবং বড় মঞ্চে করতে পারা বা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। নাইম টাফ কন্ডিশনে কঠিন প্রতিপক্ষ ভারতের বিপক্ষে সে পারফরম্যান্স করেছে। এটা নতুন দলে আসা এক তরুণের জন্য অবশ্যই ভাল ও ইতিবাচক দিক। সূত্র : জাগো নিউজ এন এইচ, ১২ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/36YGRWM
November 12, 2019 at 10:15AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন