কলকাতা, ২৩ নভেম্বর- গোলাপি বল আসলে কেমন ব্যবহার করবে? কতটা জোরে আসবে? সুইং হবে কি হবে না? হলেও কতটা হবে? রিভার্স সুইং করানো যাবে কিনা? নতুন ও পুরনো বলের আচরণগত পার্থক্যই বা কি হবে? ভারতের কোচ রবি শাস্ত্রীরও ঠিক এসব কৌতুহলী ও সময়োচিত প্রশ্নের জবাব জানা নেই। আর তাই আজ শুক্রবার দুপরে খেলা শুরুর আগে ভারতের প্রশিক্ষক, ১৫০ ওয়ানডে ও ৮০টি টেস্ট খেলার অভিজ্ঞ এবং খেলা ছেড়ে বিশ্বের প্রতিটি টেস্ট ক্রিকেট খেলিয়ে দেশের প্রায় সব ভেন্যুতে টিভি বিশেষজ্ঞ ধারাভাষ্যকার হিসেবে কাজ করা রবি শাস্ত্রীর মত ঝানু ক্রিকেট পন্ডিতও মানছেন, গোলাপি বলের চরিত্র বোঝা কঠিন। তিনি কেবল বললেন, বলটা একটু শক্ত এটুকুই বুঝি। আর বাকি আচরণগুলো খেলা শুরুর পর দেখে নেব। রবি শাস্ত্রীর মত অভিজ্ঞ ক্রিকেট বোদ্ধা যখন এমন কথা বলেন, তখন আর বোঝার বাকি থাকে না, গোলাপি বল কম বেশি সবার কাছেই রহস্য। এর গতি, আচরণ, ম্যুভমেন্ট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নেই খোদ ভারতীয়দেরও। সেখানে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের অবস্থা কি? তারা তো রীতিমত অন্ধকারে। মানে সর্বোচ্চ চার পাঁচ দিনের প্রস্তুতি নিয়ে গোলাপি বলে প্রথম টেস্ট খেলছেন। দলে গোলাপি বল সম্পর্কে স্বচ্ছ বহুদূরে, মোটামুটি ধারণা থাকাও কেউ নেই। অথচ অধিনায়ক মুমিনুল হক টস জিতেই ব্যাটিং নিয়ে নিলেন। ভাবার কোনোই কারণ নেই এটা তার একক সিদ্ধান্ত। টসটা অধিনায়ক করেন, তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তটা তার, তাই মনে হয় অধিনায়কই বুঝি একা সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা আসলে দলগত সিদ্ধান্ত। টিম মিটিংয়ে উইকেট, পারিপার্শ্বিকতা আর প্রতিপক্ষ দলের শক্তি-সামর্থ্য বিচার বিশ্লেষণ করে তারপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাংলাদেশ দলও তাই করেছে। নিশ্চয়ই কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো, পেস বোলিং কোচ চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট, স্পিন কোচ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি আর অধিনায়ক মুমিনুল মিলেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিনিয়র ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ আর মুশফিকুর রহিম এবং প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও হয়তো ইনপুট দিয়েছেন কিংবা দিয়ে থাকবেন। কাজেই ধরে নেয়া যায়, টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্তটা টিম বাংলাদেশের। পরক্ষণেই প্রশ্ন জাগে, কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত? গোলাপি বল যে একটু হার্ড, সে সত্যটা নিশ্চয়ই জানা। তাহলে হার্ড বল একটু জোরে আসবে, হয়তো লাফিয়েও উঠবে খানিকটা। এ সত্য জেনে বুঝে ফ্রেশ পিচে ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব আর মোহাম্মদ শামিকে আগে বোলিং করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত কেন? তারা মরা পিচেও বাড়তি গতি ও বাউন্স সঞ্চার করার সামর্থ্য রাখেন। তাদের বিপক্ষে টেস্টের প্রথম দিনের প্রথম সেশনে ব্যাটিং করার অর্থ বাঘের মুখের সামনে ছাগল বেঁধে দেয়ার মতই। কার্যক্ষেত্রে হয়েছেও তাই। তিন ভারতীয় ফাস্টবোলার বল হাতেই বাংলাদেশের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙ্গে দিয়েছেন। ইশান্ত শর্মা একাই (২২ রানে ৫ উইকেট) বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন। আর উমেশ যাদব নিয়েছেন ২৯ রানে ৩ উইকেট। শামি তাদের মত উইকেট না পেলেও শর্ট অফ লেন্থ থেকে বল তুলে লেট অর্ডারদের আতঙ্কের মুখে ঠেলে দেন। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যার ব্যাটে ছিল খানিক আস্থা ও আত্মবিশ্বাস, সেই লিটন দাস আর অফস্পিনার নাইম হাসান শামির বাউন্সারেই মাথায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে ম্যাচের বাইরে ছিটকে পড়েছেন। ওদিকে আরও এক প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন-বাংলাদেশ এক স্পিনার কমিয়ে দল সাজালো তিন পেসার আবু জায়েদ রাহি, ইবাদত হোসেনের সাথে আল আমিন হোসেনকে নিয়ে। কিন্তু তিন পেসার নিয়ে খেলতে নেমে টস জিতে আগে বোলিং না নিয়ে নেমে গেল ব্যাটিংয়ে! বিষয়টা কেমন যেন গোলমেলে ঠেকলো না? এ যে বড় অসঙ্গতি! ১০৬ রানে গুঁড়িয়ে যাবার পর নতুন বলে আল আমিন হোসেন আর আবু জায়েদ রাহির ডেলিভারিগুলো যখন একটু আধটু ম্যুভ করলো, দুই ভারতীয় ওপেনার রোহিত শর্মা (২১) আর ইন্দোরের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মায়াঙ্ক আগারওয়াল (২১ বলে ১৪) যখন খুব জলদি ফিরলেন, তখন আফসোস বাড়লো। আর শেষ ঘন্টায় ইবাদতের গুডলেন্থ ডেলিভারি যখন চেতেশ্বর পূজারাকে খানিক ভড়কে দিয়ে বাড়তি উচ্চতায় লাফিয়ে থার্ড স্লিপে চলে গেল, তখন ভক্ত ও সমর্থকদের সেই আফসোস রূপান্তরিত হলো হতাশায়। একটি কথাই শুধু উচ্চারিত হলো- ইস, কেন যে আগে ব্যাটিং নিলেন মুমিনুল? তা না করে বোলিং নিলে এমন বর্ণিল উৎসবের গোলাপি টেস্ট শুরুতে নাও রঙ হারাতে পারতো! কি করলে কি হতো? তা নিয়ে ছোটখাটো বিতর্ক হতেই পারে। তবে আগে বোলিং করলে প্রথম দিন দুই সেশনে অলআউটের লজ্জা আর গ্লানি বয়ে বেড়াতে হতো না। এত বিশাল আয়োজন আর উৎসবটা অন্তত এভাবে মাঠে মারা যেত না। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/২৩ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2D5I0hP
November 23, 2019 at 04:35AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন