ঢাকা, ২৬ নভেম্বর- কলকাতা টেস্টের পর টাইগারদের অনুজ্জ্বল পারফরমেন্স আর নাস্তানাবুদ হওয়া নিয়ে রাজ্যের হতাশার পাশাপাশি একটি ইস্যু আর একটি প্রশ্ন এখনো অনেকের মুখে মুখে ঘুরছে। আচ্ছা! লাল বলের চেয়ে গোলাপি বল কঠিন বেশি। লাফিয়েও ওঠে বেশি। ম্যুভও করে বেশি। ওই গোলাপি বলই কি যত নষ্টের মূল? আর মুমিনুল হক যদি ব্যাটিং না নিয়ে ফিল্ডিং নিতো, তাহলে কি হতো? দেশের অন্যতম অভিজ্ঞ ও ঝানু ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ, সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান এ দুটি বিষয় নিয়েই আজ অনেক খোলামেলা কথা বলেছেন। আজ সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপে জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক অনেক কথার ভিড়ে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন, গোলাপি বল কোন বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। গোলাপি বলের কারণে পারফরম্যান্স বেশি খারাপ হয়নি। আর অধিনায়ক মুমিনুল হকের কলকাতা টেস্টে টস জিতে আগে ব্যাটিং নেয়াকে রকিবুল হাসান রীতিমত নির্বুদ্ধিতা বলে মন্তব্য করেছেন। রকিবুল বলেন, আমাদের প্লেয়ারদের ব্যাটিং ব্যর্থতা ও পিংক বল নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করেছেন পিংক বলেই নাকি সর্বনাশ হয়েছে। যারা এ পিংক বল নিয়ে অনেক কথা বলছেন, যে গোলাপি বলই যত সর্বনাশের মূল, ওই গোলাপি বলের কারণেই পারেনি বাংলাদেশ। তাদের কাছে আমি প্রশ্ন করবো, আচ্ছা ইন্দোর টেস্টে কি হয়েছে? প্রথম টেস্টে আমাদের পারফরমেন্স আর ফলাফল কি ছিল?ইন্দোরেও কিন্তু ওই একই দৃশ্যই আমরা দেখেছি। সেখানেও অ্যাপ্রোচ ঠিক ছিল না। বেসিকের ঘাটতি। স্কিলে কমতি আর টেকনিক-টেম্পরামেন্টে সমস্যা ছিল। নর্মাল ক্রিকেটীয় পরিবেশ ছিল। লাল বলে খেলা হয়েছে। বরং রকিবুলের ব্যাখ্যা, ইন্দোরের উইকেট কলকাতার চেয়ে খারাপ ছিল ইন্দোরের। ম্যুভিং উইকেট, সিমিং উইকেট ছিল। ইডেন টেস্টে অনেক হৈ চৈ হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পশ্চিমবঙ্গের মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, ভারতের অনেকগুলো সাবেক অধিনায়ক, ২০০০ সালের নভেম্বরে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের দল এবং ওই ম্যাচের ভারতীয় স্কোয়াডসহ নানা বড় বড় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতিতে খেলা হয়েছে। গ্যালারিতে ৪০ হাজারের বেশি দর্শকও ছিল। সব মিলে কলকাতা টেস্টের আকর্ষণ, উত্তেজনা ও উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল। রকিবুল হাসান মনে করেন সেটা ঠিকই ছিল। এ বিষয়টিকে তিনি এভাবে দেখেন, ইন্দোর থেকে আমরা যখন আমরা কলকাতায় আসলাম, হাইপটা ছিল, হাইপটা থাকবেই। দিবারাত্রির খেলা। ভারতের জন্যও প্রথম, আমাদেরও প্রথম। তাই হৈ চৈ হয়েছে। একটা উৎসাহ-উদ্দীপনাও ছিল। উৎসব-উৎসব ভাব চলে এসেছিল। সেটা স্বাভাবিক। আমাদের বোলারদের আমি ধন্যবাদ দিব। তারা সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। তবে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারবেন না। তাদের যে অ্যাপ্লিকেশন সেটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু আমার মনে হয়, কলকাতা টেস্টের পারফরম্যান্স বেশি খারাপ হওয়া, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ অনেক বেশি জবুথবু ও দুর্বল মনে হবার বড় কারণ হলো আগে ভাগে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়া। রকিবুল হাসান পুরোপুরি বিস্মিত টস জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়ে, আমি বিস্মিত, আমরা কি করে এতবড় ভুল সিদ্ধান্ত নিলাম? টস জিতে বলা নেই, কওয়া নেই আমরা ব্যাটিংয়ে নেমে পড়লাম। ওখানে এত বড় টিম ম্যানেজমেন্ট ছিল, পরে জানা হলো- আমাদের বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সাহেবও চেয়েছিলেন টস জিততে পারলে আগে ফিল্ডিং করতে; কিন্তু জায়গামত দেখলাম আমরা টস জিতে নির্বোধের মত আগে ব্যাটিংয়ে নেমে পড়লাম। নিজের যুক্তির পক্ষে সাফাই না গিয়ে রকিবুল যোগ করেন, হয়তো আগে ফিল্ডিং করলেও একই রেজাল্ট হতে পারতো। তিনদিনেও হেরে যেতে পারতাম। তবে আমার বিশ্বাস আমরা টস জিতে ফিল্ডিং করলে খেলা চতুর্থ দিনে গড়াতো। কেন? এক নম্বর ম্যাচটি দিবা-রাত্রির। নতুন উইকেট। গোলাপি বল। হার্ড বল। গ্লসি। চামড়ার না। বল সুইং হবে, কতটুকু হবে? কি হবে না হবে- সবই অজানা ছিল। তার চেয়ে বড় খেলাটা দিবা-রাত্রির। তিন সেশন তিন রকম। ডে টেস্টে মত না। একটি মানে প্রথম সেশন হলো গোধুলির আগে। মানে দুপুর থেকে বিকেল। তারপর গোধুলিকে কেন্দ্র করে যে সময়টা যাবে। এরপর শেষ সেশন হবে রাতে। এরপর রকিবুল বলেন, প্রথম দিন প্রথম সেশনে বল তত ম্যুভ করেনি; কিন্তু গোধুলি লগ্নেই বল সুইং করেছে। আবার সন্ধ্যার পর রাত যত বেড়েছে সুইং আর ম্যুভমেন্ট ততই কমেছে। তবে শিশির পড়ে বল স্কিড করেছে। আমরা যদি আগে ব্যাটিং না করে ফিল্ডিং করতাম, তাহলে এই বিষয়গুলো আমাদের ভারতের প্রথম ইনিংসের সময়ই মোটামুটি জানা হয়ে যেত। তখন উইকেট, গোলাপি বল সম্পর্কে ধারণা নিয়ে ব্যাট করলে অবশ্যই পারফরমেন্স ভালো হতো। এ সমস্ত চিন্তা ভাবনা করেই আমার আক্ষেপ, আমরা কেন ফিল্ডিং করলাম না? আমরা আগে ব্যাটিং না করে ফিল্ডিং করলে জানতে পারতাম, দিবা-রাত্রির ম্যাচে উইকেটে কোন সেশনে কেমন ব্যবহার করে। বল সুইং করে কি না? করলেও কতটা? ইন্ডিয়ার ব্যাটিং অনেক সমৃদ্ধ। তাদের বিশ্বমানের ব্যাটসম্যান আছে। তারা হয়ত ঠিকই মানিয়ে নিতে পারতো। তবে আমরা তো ধারণা পেতাম। বাউন্স কেমন? তাও জানা হতো। রকিবুল মনে করেন, আগে বোলিং করলে ক্রিকেটারদের শরীরের ভাষাও এত দুর্বল থাকতো না। এ প্রসঙ্গে তার যুক্তি এমন, পুরো ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সময়ই শুধু নয়, ফিল্ডিংয়ের সময়ও আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজও ছিল ভিষণ দুর্বল এবং সেটা আরও ভাঙ্গাচোরা ও জীর্ন হয়েছে প্রথম ইনিংসে ১০৬ রানের অলআউট হয়ে যাওয়া। আগে বোলিং করলে পরিবেশ-পারিপার্শিকতা সম্পর্কে ধারনা পরিষ্কার হতো। তখন আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ আরও ভাল হতো। সূত্র: জাগোনিউজ আর/০৮:১৪/২৬ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2OJVp4x
November 26, 2019 at 05:48PM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন