ঢাকা, ২৫ নভেম্বর- আলোচিত তারকা শিল্পী, অভিনেতা তাহসান রহমান খান যার সৃজনশীল কাজ ও ব্যক্তিগত জীবন তারুণ্য থেকে সববয়সী মানুষের কাছে পরিণত হয়েছেন আইকনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে। তাহসানকে শোবিজের উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা হয় তাকে। গানের মানুষ হিসেবে তিনি যেমন সফল, তেমনি অভিনয়ে এসেও দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কোনো মাধ্যমেই ক্যারিয়ারে দাগ পড়তে দেননি। সম্প্রতি পূর্ণ করেছেন শততম নাটক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় অভিনয় করেছেন সিনেমাতেও। গান ও অভিনয়ের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন চ্যানেল অনলাইনের সঙ্গে: ১৮ বছরের ক্যারিয়ার আপনার। অল্পকথায় মূল্যায়ন শুনতে চাই ১৮ বছরে দেখেছি, আমার প্রতি মানুষের ভালোবাসা দিনের পর দিন শুধুই বেড়েছে। ভক্তদের কাছে আমার ভালোবাসাটা স্পেশাল। তারা শুধু ছবি তুলেই আমাকে ভুলে যায়নি। ১৫ বছর আগের গান এখনও যখন আমি গাই, তখন দেখি রাস্তাঘাট ব্লক হয়ে যায়। কাজ করে যেকোনো স্বীকৃতি যখন পাই, তখন মনে হয় এটার প্রাপ্য আমার ওইসব ভক্তরা। সবসময় বলি, ভক্তদের কারণে আমি বাংলাদেশে ওয়ান অব দ্য লাকিয়েস্ট সেলেব্রিটি। দাম্পত্য বিচ্ছেদের পর আপনি নিরব ছিলেন। তারকাদের বিচ্ছেদ হলে নাকি তারা আর ক্যারিয়ারে শক্ত অবস্থান তৈরী করতে পারেন না। আপনার ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি। ওই খারাপ সময়টা সামাল দিয়েছেন কীভাবে? বিচ্ছেদ যখন হয়, তখন মানুষ কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি করে। আমি কখনোই এমন কাজে লিপ্ত হইনি। কারণটা হলো, আমি এখন যা বলবো, আমার মেয়ে বড় হয়ে সেগুলো শুনবে, দেখবে। আমি কখনোই চাইনা, আমার মুখ থেকে কোনো কটু কথা বেরিয়েছে এটা আমার মেয়ে জানুক। শুধু বিচ্ছেদ কেন, আমি ব্যান্ডদল ব্ল্যাক থেকে বেরিয়ে আসার পরও চুপ ছিলাম। যখনই ভাঙন হয়, দুই পক্ষের ন্যারেটিভ থাকে। যদি ন্যারেটিভগুলো প্রকাশ পায়, তবে তিক্ততার শিখরে চলে যায়। এই তিক্ততায় ভাঙনগ্রস্ত ওই দুজন মানুষের লাভ হবে না। শুধু যারা গসিপ করবে তাদের লাভ হবে। মূল কথা হলো, আমি যদি ভুল করে থাকি তবে সেটা প্রকাশ পেত। আমি সঠিক কিনা সেটাও প্রকাশ পেয়েছে। দেশে যে কজন ক্লিন ইমেজ এর তারকা আছেন, তাদের মধ্যে আপনি একজন। কীভাবে এই ইমেজ ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে? আমি জানি যে, প্রকৃতি প্রকাশ করবে আমি কে? আমি যদি প্রতিনিয়ত ক্লিন প্রমাণের চেষ্টা করি তাহলে আমি ক্লিন থাকবো না। আমার নামে যদি কেউ মিথ্যে কিছু রটায়, তাহলে আমি কোনো উচ্চবাচ্য করবো না। কারণ, একটা সময় প্রকৃতি প্রকাশ করে দেবে, কোনটা সত্য। আর ১৬ কোটি মানুষকে আমি খুশী করতে পারবো না। আমার গান, সুর, অভিনয় দিয়ে যদি ৭-৮ কোটি মানুষ খুশী হয়, তারা যদি মনে করে তাহসান বাংলাদেশকে কিছু দিয়েছে, এজন্য যদি তারা আমাকে মনে রাখে এখানেই আমার স্বার্থকতা। ২০১৯ সাল গেল। এ বছরে মনে রাখার মতো গানের সংখ্যা হাতে গোনা দু একটি। ঘুরে ফিরেই আগের গানগুলো বাজছে। কী বলবেন? সেদিন আমার এক বন্ধু বলছিল, এ বছর কোনো গান হিট হয়নি তোর বেইলি রোডের গান ছাড়া। তবে ওই গানটা ছিল আমার প্রথম অ্যালবামের প্রথম গান দূরে তুমি দাঁড়িয়ে। বেইলি রোডে একটি ইভেন্ট ছিল। তিনটা গান করেছি। তারমধ্যে ওই গানটা নতুন করে মানুষের কাছে ভালো লাগে। আসলেই এ বছর মনে রাখার মতো নতুন গান হয়নি। হয়তো ভিউস হয়েছে, কিন্তু মনে রাখার মতো গান না। কেন মনে রাখার মতো গান হচ্ছে না এটার উত্তর আমিও জানিনা। ২০২০ সালে গান নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী? লেখা, সুর সব আমারই থাকবে। প্রতি মাসে একটা করে গান রিলিজ হবে। এটা আমার ব্যান্ড তাহসান এন্ড দ্য ব্যান্ড থেকে হবে। একেবারে ব্যান্ড ফ্লেভারের গান হবে। শিক্ষকতা ছাড়লেন কেন? আমি ১০-১২ বছর শিক্ষকতা করেছি। ওই সময়ে দেশের বাইরের শো গুলো নিতে পারতাম না। কারণ, সপ্তাহ খানেক ছুটি নিতে হতো। সেমিস্টারের মাঝে ছুটি নেয়াটা সম্ভব হতো না। আড়াই বছর আগে আমি রিয়েলাইজ করলাম আমি অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল। কারো কাছে প্রমাণ করার কিছু নেই। বয়স যখন ৫০-৬০ বছর, তখন হয়তো শিক্ষকতায় ফিরে যাবো। আমি বুঝলাম, বাংলাদেশের মিডিয়াতে আমার প্রয়োজন আছে। কারণ, বাংলাদেশে কয়েকজন মূলত কাজ করি, তারা যদি ঝরে যায় তবে দেশের মানুষের চোখ অন্যদিকে ঘুরে যাবে। তাহলে ইকোনমিতেও ক্ষতি হবে। নিজেকে বড় করে বলছি না। আমি একটা ছোট্ট পার্ট যেটা ইগনোর করা যাবে না। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি থাকলে ইন্ডাস্ট্রির লাভ হবে। যদি একদিন সিনেমার পর ফারুকীর নো ল্যান্ডস ম্যান সিনেমায় কাজ করতে যাচ্ছেন? এই ছবিতে অভিনয়ের ক্ষেত্রে অনেকগুলো চিন্তা কাজ করেছে। প্রথমত বাংলাদেশি একজন পরিচালক পৃথিবীর বুকে নাম করেছেন, এটা অনেক গর্বের ব্যাপার। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রথম ইংরেজি সিনেমা, সারা বিশ্বের কাছে এই ছবি অন্যভাবে উপস্থাপন করা হবে। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে, গল্পটা। এই ছবিতে আমার সঙ্গে আছেন নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী, এই মুহূর্তে পৃথিবীর কয়েকজন অসাধারণ অভিনেতার একজন হিসেবে তাকে ধরা হয়। সবকিছু মিলিয়ে প্রস্তাব পাওয়ার পর কাজটি করতে রাজি হয়েছি। শুটিং শুরু হবে আগামী জানুয়ারিতে। আমাদের দেশের শিল্পীরা কতো পারিশ্রমিক নিচ্ছেন, এটা বলতেই চাননা। ট্যাক্সের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন, বাংলাদেশে ১৮ লাখ মানুষ শুধু ট্যাক্স প্রদান করে। এর মধ্যে সবাই ট্যাক্স ফাইল করেন না। বেশিরভাগ মানুষ ট্যাক্স দেয় না, কারণ তাদের মধ্যে ভ্রান্ত ধারণা আছে একবার ট্যাক্স দিলে প্রতিবছর হয়তো হয়রানী করা হবে। তারা ভাবে, প্রতিবছর হয়তো ইনকামের ২০-৩০ শতাংশ টাকা ট্যাক্স দিতে হবে। এই জিনিসটা বদলাচ্ছে এটা তাদের বুঝতে হবে। ট্যাক্স দেয়াটা দায়িত্ববোধ ও অভ্যাসের ব্যাপার। পারিশ্রমিকের ব্যাপারটা বলেনা কারণ ট্যাক্সের অ্যাটেনশন তার দিকে যেতে পারে। কিন্তু সারাবিশ্বে এই জিনিসটা খুব নরমাল। প্রতিনিয়ত আমরা বলছি, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে না। প্রশাসনকে মন্দ কথা বলছি। কিন্তু মন্দ বলার আগে একবারও কী ভাবছি, আমি আমার দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করছি কিনা? এন কে / ২৫ নভেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2XI3AlQ
November 25, 2019 at 08:48AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন