সিলেট, ২১ ডিসেম্বর - সংগীতের বিভিন্ন ধারার মধ্যে এখনো বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে ফোক সংগীত বা লোকগীতি। বাংলাদেশ নামক এই ভূখণ্ডের শিকড়ের সঙ্গে মিশে আছে ফোক গান। প্রান্তিক জনপদের মানুষের নিজের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, হাসি-কান্নার গল্প মিশে থাকে ফোক গানে। এই গানে বাদ্যযন্ত্রের চেয়ে মৌখিক সুরের ওপরই বেশি প্রাধান্য থাকে। সংস্কৃতির উর্বর ভূমি সিলেট ফোক গানের জন্যও প্রসিদ্ধ। এই অঞ্চলের ফোক গানের কথা-সুরের ইতিহাসও সুদীর্ঘকালের। বাংলাদেশ তো বটে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাঙালিদের মধ্যেও সিলেটের ফোক গানের কদর সীমাহীন। বাউল রাধারমণ, হাসন রাজা, শীতালং শাহ, দুর্বিন শাহ, শাহ আবদুল করিমের মতো নন্দিত সাধকরা জন্ম নিয়েছেন পুণ্যভূমি-খ্যাত সিলেটে। তাদের কথা, সুর, তাদের সৃষ্টি সমৃদ্ধ করেছে বাঙালির ঐতিহ্যের লোকসংস্কৃতিকে। তাদের গানে বিচিত্রতা পেয়েছে বাংলাদেশের লোকগীতি। লোকভাণ্ডারের বিশাল অংশজুড়ে অবস্থান রাধারমণ, করিম কিংবা হাসন রাজার গানের। কারে দেখাব মনের দুঃখ গো, আমি রব না রব না গৃহে, পালিতে পালিছিলাম পাখি দুধ-কলা দিয়া, এগো যাইবার কালে বেইমানে পাইখ্যে না চাইলো ফিরিয়াসহ অনেক জনপ্রিয় গানের স্রষ্টা রাধারমণ, নামাজ আমার হইল না আদায়, নির্জন যমুনার কূলে বসিয়া কদম্ব তলে জন্মে জন্মে অপরাধী তোমারই চরণে রেসহ জনপ্রিয় গানের গীতিকার দুর্বিন শাহ, লোকে বলে বলেরে, ঘর বাড়ি ভালা নায় আমার বাউলা কে বানাইল রে, মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়ারে প্রভৃতি গানের স্রষ্টা হাসন রাজা, সুয়া উড়িল উড়িল গানের স্রষ্টা শীতালং শাহ, গাড়ি চলে না চলে না কোন মেস্তরি নাও বানাইলো এমন দেখা যায় তোমরা কুঞ্জ সাজাও গো প্রভৃতি জনপ্রিয় গানের গীতিকার বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিম। এ ছাড়াও সিলেট অঞ্চলের মরমি কবি গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সিদ্দিকুর রহমান, সৈয়দ মুফাজ্জিল আলী, বিদিত লাল দাশ এই চার গীতিকারকে একসময় বলা হতো চার রত্ন। শুধু এঁরাই নন, রুহী ঠাকুর, অন্নদা রঞ্জন দাশ, ফকির সমছুল, মকদ্দস আলম উদাসী, আবদুর রহমান, রামকানাই দাশ, সুষমা দাশ, চন্দ্রাবতী রায় বর্মণসহ মরমি ও বাউল ভাবধারার অসংখ্য গীতিকার, সুরকার এ অঞ্চলে জন্ম নিয়ে দেশীয় লোকগীতির ভাণ্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ। তাদের গান ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে বাংলার কৃষ্টি-কালচারের সঙ্গে। বাংলাদেশের লোকগীতির ইতিহাস লিখতে গেলে সিলেট অঞ্চলের এসব সুফি-সাধককে অগ্রভাগেই রাখতে হবে। সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, সিলেট অঞ্চলের লোকগীতি বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির প্রাণ। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছেই এসব লোকগীতির সমাদর রয়েছে। ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্যসহ বহির্বিশ্বের যেখানে বাংলা ভাষাভাষি মানুষ রয়েছেন, সেখানেই সিলেটের ফোক গানের কদর। তবে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে এসব অমূল্য সম্পদের কথা ও সুরে বিকৃতি ঘটছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। এজন্য তারা লোকগীতির একটি সমৃদ্ধ আর্কাইভ গড়ে তুলতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চান। এ প্রসঙ্গে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি শামসুল আলম সেলিম বলেন, যথাযথভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় আমাদের লোকগীতির কথা ও সুরে বিকৃতি ঘটছে। এর অনেকটাই হারিয়েও যাচ্ছে। লোকসংস্কৃতির গবেষক সুমনকুমার দাশ বলেন, সিলেট অঞ্চল হচ্ছে লোকগীতি, লোকসংস্কৃতির চারণভূমি। সরকারি প্রকল্প কিংবা বাংলা একাডেমি এগুলো সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে পারে। এন এইচ, ২১ ডিসেম্বর



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2sNxIRy
December 21, 2019 at 02:49AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top