কলকাতা, ১৮ ডিসেম্বর- নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোও এ বার মুখ খুলবে বলে মনে করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথা, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোকেও এ বার বলতে হবে সিএএ মানব না, এনআরসি মানব না। বলতে হবে বাঁচাও বাঁচাও। অসম, ত্রিপুরা-সহ বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে সিএএ-র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ তুমুল আকার নেয়। সেনা পর্যন্ত নামাতে হয়। অসমে পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় কয়েক জন বিক্ষোভকারীর। এই অবস্থায় মমতার মঙ্গলবারের বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। পর্যবেক্ষকদের মতে, তিনি কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তাদেরই হাতে থাকা রাজ্যগুলির আবেগ এ ভাবেই উস্কে দিতে চেয়েছেন। সিএএ বাতিলের দাবিতে পথে নেমে আন্দোলনের দ্বিতীয় দিনে সোমবারের মতোই মমতা যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল শুরুর আগে উপস্থিত জনতাকে শপথবাক্য পাঠ করান। মমতার সঙ্গে জনতা বলে, আমরা সবাই নাগরিক। সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবনাদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না। এনআরসি আর সিএবি হতে দেব না। মিছিলের শুরুতে মহিলারা শঙ্খধ্বনি করেন। যাদবপুর থেকে ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট, রাসবিহারী, হাজরা হয়ে ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজারে মিছিল শেষেও মমতা বারবার মানুষকে উদ্দীপ্ত করতে স্লোগান দেন, আমরা কারা? নাগরিক। মিছিলের এই দীর্ঘ পথে মানুষের পায়ে পায়ে মমতা এ দিন একদিকে যেমন এককালের উদ্বাস্তু এলাকা বলে পরিচিত যাদবপুরকে ছুঁয়েছেন, তেমনই ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাটের মতো বাজার ও অভিজাত এলাকার মানুষের কাছেও পৌঁছতে চেয়েছেন। রাসবিহারী, ভবানীপুরে গুজরাতি, পঞ্জাবি-সহ বহু ভাষাভাষির বাস। সেই মিশ্র কলকাতাকেও সঙ্গে নিয়ে এ দিন এগিয়েছেন মমতা। সকলকে একসঙ্গে নিয়ে থাকার বার্তা দিয়ে ফের তৃণমূল নেত্রী বলেছেন, আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। নাগরিকে নাগরিকে ভেদ করা যাবে না, আমরা কারও অধিকার কেড়ে নিতে দেব না। একের পর এক রাজ্যে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভের আঁচে কেন্দ্র শেষ পর্যন্ত আইনটি বাতিল করতে বাধ্য হবে বলেই মমতার আশা। এ দিনও তিনি বলেন, গায়ের জোরে শুধু সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিল পাশ করলেই হয় না। এই বিল সংবিধান মেনে হয়নি। এই বিল অসাংবিধানিক। সংশোধিত নাগরিকত্ব বিল পাশে কেন্দ্রীয় সরকার ধোঁকা দিয়েছে বলে অভিযোগ করে মমতা এ দিন বলেন, সাংসদদের জানতেই দেওয়া হয়নি যে ওইদিনই বিলটি আলোচনা হবে। অনেকে সময়ে পৌঁছতেই পারেননি তাই। খালি যে বলা হচ্ছে অনেকে গরহাজির ছিলেন(তৃণমূলের বেশ কয়েক জন সাংসদ ভোটাভুটির সময় অনুপস্থিত ছিলেন বলে খবর), তাঁরা তো জানতেনই না বিলে ভোটাভুটি হবে। দুপুর বেলা বিলটি এনে মধ্যরাতে বিল পাশ হয়েছিল। এর জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের পাল্টা প্রশ্ন, উনি বলছেন বিল যে দিন দিয়েছে, সে দিনই আলোচনা হয়েছে। কেউ নাকি বিল পড়তে পারেননি। আগে কেউ জানতেনই না! তা হলে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়েরা বিল নিয়ে বক্তৃতা করলেন কী ভাবে? বিজেপি ও অন্য দলগুলো নিজের নিজের সাংসদদের হুইপ দিল কী ভাবে? যাদবপুর থেকে মিছিল যত এগিয়েছে গন্তব্যের দিকে, মিছিলের বহর বেড়েছে রাস্তার দুধারে অপেক্ষমান মানুষের ভিড়ে। দুই অভিনেত্রী-সাংসদ নুসরত এবং মিমিকে দুপাশে নিয়ে মমতার মিছিল থেকে বারবারই ভেসে এসেছে, এনআরসি মানছি না, মানব না। সিএবি মানছি না, মানব না। এই আইন-বিরোধিতায় গত কয়েক দিন ধরে এ রাজ্যে যে গোলমাল চলছে, তা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে ফের মমতা বলেন, হিংসাত্মক পথে নয়। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করুন। এই ধরনের গোলমালের পিছনে কারা জড়িত, তা তাদের পোশাক দেখেই বোঝা যায় বলে মন্তব্য করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সে প্রসঙ্গে মোদীকে পাল্টা বিঁধে মমতা বলেন, আমার পোশাক দেখে চিনতে পারেন কি না, দেখুন। দেখুন তো এটা খারাপ না ভাল? টুপি কি শুধু এক শ্রেণির লোকেরাই পড়ে? পঞ্জাবিরা তো মাথায় পাগড়ি পরেন। পোশাক তো যার যার নিজের। পোশাক দেখে কি রাজনীতির রং চেনা যায়? যার প্রেক্ষিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কটাক্ষ, উনি হয়তো ওই পোশাকের লোকদের চেনেন না, কারণ ওঁর চোখে অন্য রঙের চশমা আছে। ওই পোশাকের লোকদের সন্ত্রাসের পিছনে ওঁর সম্পূর্ণ মদত আছে। পুলিশ তাদের উপর লাঠি চালায়নি। নয়া নাগরিকত্ব আইনের সমর্থন এবং আন্দোলনের নামে অশান্তির প্রতিবাদে এ দিন হাওড়া, বেহালা এবং হাবরায় পাল্টা মিছিল করে বিজেপি-ও। আর/০৮:১৪/১৮ ডিসেম্বর
from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/2S14okS
December 18, 2019 at 08:29AM
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন