ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি - বড় ভাই শহীদুল্লাহ কায়সারকে খুঁজতে গিয়ে নিজেই নিখোঁজ হয়েছিলেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের কালজয়ী মানুষ জহির রায়হান। দেখতে দেখতে ৪৮টি ব্ছর হতে চললো, আজও খোঁজ মিলেনি তার। ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি মাত্র ৩৬ বছর বয়সে ভাই শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সারের মৃতদেহ মিরপুরের বধ্যভূমিতে খুঁজতে গিয়ে আর ঘরে ফেরা হয়নি তার। সেই থেকে ঢাকাই সিনেমা তথা এ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে জানুয়ারির ৩০ তারিখকে জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়। বছর যায় বছর আসে, জহির রায়হানকে নিয়ে চলে নানা স্মৃতিচারণ। কিন্তু তার স্বজনেরা তাকে আর ফিরে পায়নি। এতগুলো বছর পেরিয়েও কাটেনি স্বাধীন দেশে তার নিখোঁজ হওয়ার রহস্য। জানা যায়নি কীইবা ঘটেছিলো ঢাকাই সিনেমার তুমুল মেধাবী এই প্রযোজক, পরিচালক, কাহিনিকারের ভাগ্যে! জহির রায়হানের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে অনেক ধরনের গল্প ছড়ানো আছে। যার কোনোটিই আসলে নিশ্চিত করে বলার মতো কিছু নয়। বলা হয় যে, তিনি একটি সার্চ পার্টি নিয়ে মিরপুরের উদ্দেশে যাত্রা করেন। সেখানে পাক হানাদার বাহিনীর কিছু সদস্য ছদ্মবেশে ছিল। তারা তাকে লুকিয়ে আটক করে হত্যা ও গুম করে ফেলে। তার ছোট ভাই হাবীবের ভাষ্যমতে, তিনি জহির রায়হানকে মিরপুর পুলিশ স্টেশনে নামিয়ে দিয়ে এসেছিলেন। এরপর আর তার দেখা পাননি। এমন খবরও শোনা যায় যে মিরপুর পুলিশ স্টেশন থেকে জহির রায়হানকে জানানো হয়েছিল, মিরপুর ১২ নাম্বারে কিছু পাকিস্তানি সৈন্য ও রাজাকার ছদ্মবেশে লুকিয়ে আছে। সেখানে না গিয়ে আগে তাকে কল ট্রেস করার পরামর্শ দেওয়া হয়। এরপর তিনি নাকি ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যান। আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সময় আরো অনেক গুজব ছড়িয়েছে, যা আদৌ সত্যি না মিথ্যা, কেউ জানে না। তার মৃতদেহও কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তার নিখোঁজ হওয়ার কোনো তদন্তের দিকেও কেউ কখনো আলোকপাত করেনি। ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার অন্তর্গত মজুপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জহির রায়হান। পারিবারিক নাম আবু আবদার মোহাম্মদ জহিরুল্লাহ। বড় ভাই সাহিত্যিক, সাংবাদিক শহীদুল্লাহ কায়সারকে স্বাধীনতার আগ মুহূর্তে আলবদর বাহিনী অপহরণ করে। নিখোঁজ ভাইকে খুঁজতে ১৯৭২ সালের ৩০ জানুয়ারি জহির রায়হান মিরপুর এলাকায় যাওয়ার পর তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। খাপছাড়া পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তার সাংবাদিকতা জীবনের শুরু। পরে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন। ১৯৫৭ সালে তিনি চলচ্চিত্রে যুক্ত হন জাগো হুয়া সবেরা ছবির সহকারী পরিচালক হিসেবে। ১৯৬৪ সালে তিনি নির্মাণ করেন উর্দুতে পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম। একজন লেখক হিসেবেও নিজেকে মেলে ধরেছিলেন তিনি। বরফ গলা নদী, শেষ বিকালের মেয়ে, আর কত দিন, তৃষ্ণা, হাজার বছর ধরে প্রভৃতি তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। জহির রায়হানের পরিচালিত জীবন থেকে নেয়া, কাঁচের দেয়াল, স্টপ জেনোসাইড বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে মাইলফলক হিসেবে পরিচিত। তিনি ছিলেন যুগপৎ শিল্পী ও যোদ্ধা। ভালোবাসতেন মানুষকে। মানুষের জীবনের ক্লেশ-সংগ্রামকে তুলে আনার হাতিয়ার হিসেবে তিনি শিল্পকে ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গণহত্যার প্রামাণ্য চলচ্চিত্র স্টপ জেনোসাইড। পরিচালনার পাশাপাশি ছবি প্রযোজনাতে তাকে পাওয়া গেছে। তার প্রযোজনায় নির্মিত হয় মনের মতো বউ, জুলেখা, দুই ভাই, সংসার, শেষ পর্যন্ত এবং প্রতিশোধ। মাত্র ৩৬ বছর বেঁচেছিলেন। এই অল্প জীবনেই তিনি নিজেকে এতোটাই বিকশিত করে গেছেন যা তাকে আজও কালজয়ী করে রেখেছে। জহির রায়হান বাংলা সাহিত্যের গল্প শাখায় অবদানের জন্য ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৭৭ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৯২ সালে মরণোত্তর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত করে। চলচ্চিত্রে তার সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৭৫ সালে ১ম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে মরণোত্তর বিশেষ পুরস্কার প্রদান করা হয়। জহির রায়হানকে স্মরণ জহির রায়হানের অন্তর্ধান দিবস উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার ইন্টারন্যাশনাল ডিজিটাল কালচারাল আর্কাইভ কক্ষে জহির রায়হান নির্মিত কখনও আসেনি চলচ্চিত্রটি প্রদর্শিত হবে। সন্ধ্যা ৬টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। জহির রায়হানের চিন্তা ও কর্মের বিশ্লেষণমূলক আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, চলচ্চিত্র গবেষক ও লেখক অনুপম হায়াৎ, চলচ্চিত্র সমালোচক মাহমুদা চৌধুরী, জহির রায়হানের জেষ্ঠ্য পুত্র নির্মাতা বিপুল রায়হান এবং ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক বেলায়াত হোসেন মামুন। এন এইচ, ৩০ জানুয়ারি



from First Bangla interactive newspaper - Deshe Bideshe https://ift.tt/31aHsCj
January 30, 2020 at 10:14AM

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top